তুরস্কের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়িপ এর্দোগান উপস্থাপিত ৬০তম সরকারের মন্ত্রীসভা গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন। তুরস্কের নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। জনমত এই যে, বর্তমান সরকারেও বড় ধরনের রদবদল করা হয় নি, অভ্যন্তরীণ ও কূটনীতিসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নীতিগত তেমন একটা পরিবর্তন হবে না। তবে নতুন সরকার গুরুতর দায়িত্ব এবং অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হবে।
২৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে। গেল সরকারের ১২জন সদস্য তাদের পূর্বের দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রীসভার ৪জন সদস্যের পদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মত ৮জন মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আলি বাবাকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বশির আতালেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। কামাল ইউনাকিতান অর্থমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। আগের আইন মন্ত্রী সেমিল সিসাক মন্ত্রীসভার দু নম্বর ব্যক্তি হবেন। মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিযুক্তি থেকে দেখা যাচ্ছে, এর্দোগান নতুন মন্ত্রীসভায় সংযোগ ও সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং অব্যাহতভাবে গত সরকারের অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে যাবেন।
বিশ্লেষকগণ মনে করেন, অর্থনীতির উন্নয়ন করা হচ্ছে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির ক্ষমতাসীনকালে তুরস্কের অর্থনীতির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। জনগণ সুবিধা ভোগ করছে। তুরস্কের জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য নতুন সরকার অব্যাহতভাবে অর্থনীতির উন্নয়ন ও সমষ্টিগত নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বাড়াবে; আর্থিক সংস্থার সংস্কার কার্যকর ও পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করবে এবং ব্যক্তিকায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে।
পররাষ্ট্র নীতিতে, নতুন সরকার সক্রিয়ভাবে ইইউ'র সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং অব্যাহতভাবে ইইউ'তে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তির জন্য চেষ্টা চালাবে। বিশ্লেষকদের মনোযোগ আকৃষ্টের বিষয় হচ্ছে এই যে, নতুন মন্ত্রীসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাবাকান গত সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইইউ'তে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তি সংক্রান্ত প্রধান প্রতিনিধি ছিলেন। তাছাড়া, তুরস্ক সক্রিয়ভাবে সিরিয়া ও ইরানসহ বিভিন্ন নিকটবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করবে।
সবকিছু মিলিয়ে নতুন সরকারকে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মতভেদ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্পর্কিত। ইরাকের ব্যাপারে এর্দোগান মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইরাক থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি সময়সূচী বের করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর মোতায়েন রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। ইরান সমস্যায় দু'দেশের অবস্থান ভিন্নতর।
দ্বিতীয়তঃ সাইপ্রাস দ্বীপ সমস্যা ইইউ'তে তুরস্কের অন্তর্ভ্যুক্তির আলোচনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে তুরস্কের নতুন সরকারের জন্যও মাথাব্যাথার কারণ। বর্তমানে ইইউ'তে তুরস্কের অন্তর্ভূক্তি সমস্যায় গুরুতর মতভেদ বিদ্যমান। এর্দোগান মনে করেন, ইইউ'র তুরস্ককে গ্রহণ না করার প্রধান কারণ হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি। যদিও ইইউ'র শর্ত মেটানোর জন্য তুরস্ক ব্যাপক সংস্কার করেছে। তবুও দেশের একীকরণ ও জাতীয় মর্যাদা সংরক্ষণ ক্ষেত্রে তুরস্ক সীমিতভাবে পিছ পা হবে।
তাছাড়া, তুরস্কের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নাস্তিক ও ধর্মীয় পন্থীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিরোধ রয়েছে যার সমাধান কঠিন। এর আগে জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ক্ষমতাসীন থাকাকালে অব্যাহতভাবে নাস্তিকবাদীদের সন্দেহের দৃষ্টির মধ্যে ছিল। আব্দুল্লাহ গুল প্রেসিডেন্ট হবার পর তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি থেকে পদত্যাগ করবেন, যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখা যায়। এটাই সত্য যে জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি তুরস্কের সার্বিক ক্ষমতাই নিয়ে নিয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভবন নতুন সরকারের ওপর সর্বাধিক মাত্রায় চাপ কম দেবে, যাতে নতুন সরকার অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক নীতি আরো সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে। তবে তার নীতি যদি একটু এদিক ও দিক হয়ে যায়, তাকে 'মৌলবাদের টুপি পড়িয়ে দেয়া হবে। সুতরাং কিভাবে নাস্তিকপন্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে তা হচ্ছে নতুন সরকারের সম্মুখীন একটি গুরুতর পরীক্ষা।
|