চীনের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতিসমূহ বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বেশ কিছু তরুণ-তরুণী আছেন , যারা বিভিন্ন জাতি থেকে এসেছেন এবং ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার বিষয় পড়ছেন । কিন্তু সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য চর্চার ব্যাপারে অভিন্ন কৌতুহূলের কারণে তারা একটি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য শিল্পী দল গঠন করেছেন । আজ এই অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি …
এতক্ষণ আপনারা যা শুনলেন , তা সি কাং লি নামে ওয়া জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নৃত্যনাট্যের সংগীত । সি কাং-এর অর্থ ' গুহা' এবং লি মানে বেরিয়ে আসা । এই নৃত্যনাট্যের পরিবেশকরা সবাই কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী নৃত্য শিল্পী দলের সদস্য ।
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রীদের নৃত্য শিল্পী দলের ৮০ শতাংশ সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রী । তারা ভিন্ন শিক্ষার কোর্স পড়ছেন । এই শিল্পী দলের নেতা , শিক্ষা তত্ত্ব বিষয়ক দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থান রেই বলেন ,
তাদের এই শিল্পী দল গঠিত হয়েছে ১১ বছর হল । এই দলের সদস্যরা সবাই গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ও মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্সের ছাত্রছাত্রী । এ দলের সদস্যদের মধ্যে উইগুর , মঙ্গোলীয় , তিব্বত , ই , থাই , হানি ও হুইসহ বিভিন্ন জাতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তারা সংখ্যালঘু জাতির নৃত্যের ভালবাসা ও চর্চার কৌতূহের কারণে এই দলে অংশগ্রহণ করেছেন ।
থান রেই-এর জন্মভূমি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের । তিনি হানি জাতির একজন নাগরিক । তিনি বলেন , এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাও রেই নামে একজন ছাত্র । তখন তিনি সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছিলেন । দল গঠনের প্রথম দিকে নৃত্য চর্চার একটি স্থায়ী স্থানও ছিল না । নৃত্যনাট্য চর্চার জন্য তাদের যেখানে সেখানে স্থান অনেষ্বণ করতে হতো ।
এখন নৃত্য চর্চার জন্য তাদের একটি স্থায়ী কক্ষ আছে । তাদের নৃত্যনাট্য পরিবেশনের উত্কৃষ্টতা পেইচিংয়ের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিদিত । নৃত্য শিল্পী দল ইয়ুননান , তিব্বত , হংকং ও ম্যাকাওসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশন করতে গিয়েছিল । এ বছরের মে মাসে মাতৃভূমির কোলে হংকংয়ের প্রত্যাবর্তনের দশম বার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পী দলটি হংকংয়ের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক স্কুলে এক সপ্তাহব্যাপী ভ্রাম্যমান পরিবেশন করেছে । শিল্পী দলটি হংকংয়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে চীনের সংখ্যালঘু জাতির বৈচিত্র্যময়ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক নৃত্যনাট্য দেখা দিয়েছে । চীনের কুয়াংসি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হুই জাতির ছাত্র ছিন শান বলেছেন ,
হংকংয়ে তারা আফিংয়ের অশ্রু নামে যে নৃত্যবাট্য পরিবেশন করেছেন , তা তাদের শিক্ষক মাও রেই রচনা করেছেন । এতে মাদক মানুষের জন্য ক্ষতি তুলে ধরা হয়েছে । নৃত্যনাট্যে শিল্পীদের দয়া ও সর্বান্তকরণ সহানূভূতি ব্যক্ত করা হয়েছে ।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু জাতির আচার ব্যবহার তুলে ধরা ছাত্রছাত্রীদের এই নৃত্যনাট্য শিল্পী দলের বৈশিষ্ট্য । গত ১১ বছর ধরে তারা অবিরামভাবে চীনের বিভিন্ন জাতির পরিবার নামে একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে থাকেন । এই নৃত্যনাট্যে চীনের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য কলাকৌশল ফুটে উঠেছে । এই নৃত্যনাট্য যেমন তাদের শিল্পী দলের একটি নিদর্শনমূলক অনুষ্ঠান , তেমনি তা কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জাতির অল্পবয়সীদের সংহতির প্রতীকে পরিণত হয়েছে । গত ৩ বছরে হানি জাতির ছাত্রী হোয়াং মিং এই নৃত্যনাট্য পরিবেশনে যোগ দিয়েছেন । তিনি বলেন ,
চীনের বিভিন্ন জাতির পরিবার নামে এই নৃত্যনাট্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির নৃত্যের বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । পেইচিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের প্রথম শিল্পকলা উত্সবে তাদের এই নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়েছে । পরিবেশনকালে ছাত্রছাত্রী শিল্পীরা তাদের আবেগ যথাসাধ্য দেখা দিয়েছেন । ফলে তাদের শিল্পী দল এই শিল্পকলা উত্সবের প্রথম শ্রেণীর পুরস্কার পেয়েছে ।
তিনি বলেন , নৃত্য শিল্পী দলের সদস্যরা চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি থেকে এসেছেন । তিব্বত , ইয়ুননান ও কুয়াংশিসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতি প্রাচীনকাল থেকে নাচ গান পরিবেশনে পারদর্শী । তাদের মধ্যে অনেকে ছোট বলা থেকে নাচ গান চর্চা শুরু করেছেন । তিনি বলেছেন ,
সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এমন একটি কথা খুব জনপ্রিয়। কথায় বলা হয়েছে , সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যারা কথা বলতে পারে , তারা গান গাইতে পারে এবং যারা হেঁটে চলতে পারে , তারা নাচ করতে পারে । এতে নাচ গানের প্রতি সংখ্যালঘু জাতির ভালবাসা ব্যক্ত করা হয়েছে ।
যদিও হোয়াং মিং শহরে বসবাস করেন , তবে ছোট বেলা থেকে থাই ও হানিসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির সঙ্গে তার বিনিময় কম ছিল না । তিনি তাদের নৃত্য খুব চেনেন । কুয়াংশি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে হুই জাতির ছাত্রী ছিন শানের জন্ম । তিনি ছোট বেলা থেকে চুয়াং জাতির লোক সংগীত ও নৃত্যে ভরপুর পরিবেশন জীবনযাপন করতেন । তিনি বলেছেন ,
প্রতি বছরের চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তিন তারিখ নাচ গান নিয়ে প্রতিযোগিতা চালানোর জন্য চুয়াং , মিয়াও ও তুংসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির তরুণ তরুণীরা পাহাড়ী গ্রামে মিলিত হন । তিনি মনে করেন , সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি বিশাল বৈশিষ্ট্য ও আবেগে সমৃদ্ধ । নৃত্য মানুষের গভীর চিন্তাধারা ও অনুভূতির পরিচায়ক ।
উত্সবে শিল্পী দলের ছাত্রছাত্রীরা যখন জন্মভূমিতে ফিরে যান , তখন তারা যার যার জাতির নৃত্যের আদিম কলাকৌশলের ওপর খুব মনোযোগ দেন । নৃত্য চর্চা , সংখ্যালঘু জাতির পোষাক , অলংকার তাদের নৃত্যনাট্য পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যে পরিণত হয়েছে ।
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য শিল্পী দলের অধিকাংশ সদস্য পেশাগত নৃত্য শিল্পী নন । তারা সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য কলাকৌশল বিকশিত করার জন্য এই কাজে নিয়োজিত হয়েছেন । তাদের কঠোর প্রশিক্ষণ ও চর্চার মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলার বৈচিত্র্যময় শোভা জীবন্ত হয়ে উঠেছে ।
|