২৬ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দারাবাদে ২৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত দুটি বিস্ফোরণ ঘটনার দরুণ ৪০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক জানিয়েছেন, আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ার কারণে নিহতদের সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
এ বছরের মে মাসে হায়দারাবাদের মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটনার সাড়ে তিন মাসের মাথায় এই বিস্ফোরণ হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে যে, এটা হচ্ছে চক্রান্ত করা একটি সন্ত্রাসী হামলা। বিস্ফোরণটি সপ্তাহান্তিক সন্ধ্যায় লোকজনের বাইরে বিনোদনের সময় জনবহুল জায়গায় হয়েছে। বুঝা যায়, বিস্ফোরণ সৃষ্টিকারী সন্ত্রাস সৃষ্টি করে প্রভাব সম্প্রসারণ করতে চেয়েছে। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, খুব সম্ভবত মুসলিম চরমপন্থী সংস্থা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন সংস্থা এই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে নি।
বিস্ফোরণের পর ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রাতিভা পাতিল , ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সবই এবারের বিস্ফোরণ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁরা জনগণকে শান্ত থেকে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত তদন্ত চালিয়ে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা ও আহতদের চিকিত্সা করার আদেশ দিয়েছেন।
অন্ধ্র প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী রাজাসেখারা রেড্ডি বিস্ফোরণ ঘটার রাতে জরুরীভাবে উধ্বর্তন পর্যায়ের অধিবেশনের আয়োজন করেছেন। অধিবেশনে বর্তমান পরিস্থিতি ও মোকাবেলার ব্যবস্থা নিয়ে আয়োচনা হয়েছে। তিনি নিজেই বিস্ফোরণ স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং এবারের দুর্ঘটনার নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও আহতদেরকে ত্রাণের অর্থ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি প্রত্যেক আহতের জন্য বিনা খরচে চিকিত্সা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য অন্ধ্র প্রদেশে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশরা হায়দারাবাদ শহরের প্রস্থানের প্রতিটি পথ অবরোধ করেছে এবং বিমান বন্দর, রেল স্টেশন ও বাস স্টেশনে ফাঁড়ি স্থাপন করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশি তামিলনাডু রাজ্য, কর্ণাটক রাজ্য, রাজধানী নয়া দিল্লী, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প শহর মোম্বাই , বিহার রাজ্য ও পশ্চিম বঙ্গ সব ক্ষেত্রেই নিরাপদ সর্তকতার শ্রেণী উন্নত করেছে।
সন্ত্রাসী বিস্ফোরণ ঘটনা স্থানীয় জনগণকে অশেষ বেদনা ও হতাশা বয়ে এনেছে। চার দিকে আত্মীয়স্বজনকে খোঁজ করা ও ক্রন্দনরত লোকজন ছড়িয়ে আছে। আবারো সন্ত্রাসী হামলা ঘটার ভয়ে অনেকে বাসায় বাইরে যাচ্ছেন না। কিন্তু সন্ত্রাসী ঘটনার দরুণ স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে অভুতপূর্ব সংহতি হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে হিন্দু, মুসলিমসহ নানা ধর্মের ধর্মাবলম্বীকে আহতদের চিকিত্সার জন্য দেখা যায়। এমন সন্ধিক্ষণে কেউ ধর্মের কথা ভাবে নি। যাদের সাহায্য দরকার, তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
খবরে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট রাতে দু'বার বিস্ফোরণের পর পুলিশ পক্ষ আরো বহু বিস্ফোরক বন্তু উদ্ধার করেছে। সেগুলো তখনো বিস্ফোরিত হয় নি। ২৬ আগস্ট তদন্তের পর পুলিশরা সিনেমা হল, বাস স্টেশন, সড়কের মোড়সহ নানা গণ স্থানে প্রায় ২০টি বিস্ফোরক বস্তু উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বিস্ফোরক যন্ত্রের টাইমার রয়েছে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, সন্ত্রাসবাদীরা এমন ঘন ঘন সন্ত্রাসী তত্পরতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ পক্ষের সতর্ক জাগে নি। তা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে।
এ পর্যন্ত কোন সংস্থা বা ব্যক্তি এবারের বিস্ফোরণ ঘটনার দায় ঘোষণা করে নি। কিন্তু পুলিশ পক্ষ বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা "ইসলামি মোজাহেদিন সংস্থা" ও পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসী সংস্থার ওপর সন্দেহ করছে। এর মধ্যে "ইসলামি মোজাহেদিন সংস্থা"কে এ বছরের মে মাসে হায়দারাবাদের মসজিদে বিস্ফোরণ মামলার হোতা বলে সন্দেহ করা হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী রেড্ডি ২৬ আগস্ট রাজ্যের মন্ত্রীসভার অধিবেশনের পর সংবাদদাতাকে বলেছেন, এখন সংগৃহীত সমস্ত তথ্য উপর্যুক্ত দুটি সন্ত্রাসী সংস্থার সঙ্গে জড়িত। সেই জন্য ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিভরাজ পাতিল বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে তদন্ত করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এবারের বিস্ফোরণ ঘটনা সরকারকে ভয় দেখাতে পারবে না। ভারত সরকার এ ধরনের ঘটনা চূড়ান্তভাবে নির্মুল করার জন্য অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালাবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|