আন্তর্জাতিক জাহাজ নির্মাণ সংক্রান্ত প্রভাবশালী পরামর্শদাতা সংস্থা - ব্রিটিশ ক্লার্কসন রিসার্চ স্টাডিস সম্প্রতি প্রকাশিত তার একটি পরিসংখ্যানে ঘোষণা করেছে যে , এ বছরের জুন মাসের শেষ নাগাদ চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জাহাজের অর্ডারের মোট সংখ্যা বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে । চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্প মহলের ব্যক্তিরা আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন , কিছু সংখ্যক স্বতন্ত্র মেধাসত্বসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্ষমতা বাড়ানোর একটি প্রধান উপায় ।
কিছুদিন আগে চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্প কর্পোরেশনের অধীনস্থ শাংহাই ওয়াই কাও ছিয়াও জাহাজ নির্মাণ কোম্পানির জাহাজঘাটায় পর পর দুটো ১ লাখ ৭৫ হাজার টনী বিশাল আকারের জাহাজ ব্যবহারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । এ দুটো ব্যবহারকারীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশ্বের জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রের বৃহত শক্তি জাপানী কোম্পানি । ।
শাংহাই ওয়াই কাও ছিয়াও জাহাজ নির্মাণ কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী থাও ইং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এ বিশাল আকারের জাহাজ মূলত এক ধরণের প্রথাগত জাহাজ ছিল । অথচ তার কোম্পনি এ জাহাজের তেল-চালিত ব্যবস্থাকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং ডিজাইনের মাধ্যমে সংস্কার করে সবুজ পরিবেশ সংরক্ষণ বাস্তবায়ন করেছে । এ কারণে এ নতুন জাহাজ ব্যবহারকারীরা বেশ পছন্দ করেছেন । তিনি বলেছেন ,
আগেকার জাহাজগুলোতে তেলের আধার থাকতো জাহাজের নীচের অংশে । মগ্নশৈনিলের সংগে জাহাজগুলো টক্কর লাগলে তেল সহজেই নির্গত হতো । আমরা তেলের আধারকে জাহাজের নীচের অংশ থেকে জাহাজের ডেকের উচ্চতর স্থানে বসানোর ব্যবস্থা করেছি ।
মিস্টার থাও ইং আমাদের সংবাদদাতাকে আরো বলেন , সম্প্রতি তার কোম্পানির নির্মিত ৩ লাখ টনী সামুদ্রিক ভাসমান তেল উত্পাদন ও গুদামজাত জাহাজও ব্যবহারকারীদের কাছে হাস্তান্তর করা হয়েছে । এ জাহাজের নির্মাণ খরচ পড়েছে ২৪ কোটি মার্কিন ডলার । সামুদ্রিক তেল নগর নামে পরিচিত এ জাহাজ সরাসরি সাগর থেকে উত্তোলিত অশোধিত তেলকে প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে । বর্তমানে বিশ্বে মাত্র তিনটি এ রকম জাহাজ রয়েছে । চীন এ প্রথম স্বাধীনভাবে এ রকম জাহাজ ডিজাইন ও নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে । শাংহাই ওয়াই কাও ছিয়াও জাহাজ নির্মাণ জাহাজ কোম্পানি ৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় । কিন্তু এ অল্প সময়ের মধ্যে এ কোম্পানি এ ধরণের অত্যাধুনিক জাহাজ নির্মাণ করে বিশ্বের প্রধান দশটি জাহাজ নির্মাণ কারখানার সারিতে শামীল হয়েছে ।
গত বছর চীনের জাহাজ নির্মাণের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি টন । এটি ২০০৫ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়েছে । চীনের জাহাজ শিল্পের অর্জিত মুনাফা ৯৬০ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এটি ২০০৫ সালের তুলনায় ১০২ শতাংশ বেশি । এতে দেখা গেছে , উত্পাদন পরিমাণ খুব বেশি না হলেও মুনাফা বিপুল মাত্রায় বেড়েছে । এখন চীনের ৩ লাখ টনী সুবৃহত তেলবাহী জাহাজের অডারের মোট সংখ্যা সারা বিশ্বের অডারের মোট সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ ছাড়িয়ে গেছে । তাছাড়া চীন ইতোমধ্যে বিশ্বের উন্নত মানসম্পন্ন সুবৃহত বাক্সোবন্দী মাল-বওয়া জাহাজের গবেষণা ও নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে । নানা ধরণের সামুদ্রিক তেল প্ল্যাটফর্ম গবেষণা ও নির্মাণের ক্ষেত্রেও চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে ।
বর্তমানে চীন সরকার পোও হাই উপসাগর , ইয়াংসি নদী ও চু চিয়াং নদীর মোহনায় জাহাজ নির্মাণ ঘাঁটি স্থাপনের জন্যে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । চীনের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্প কমিশনের জাহাজ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা চাং সিয়াং মু আমাদের সংবাদদাতার কাছে ২০১০ সাল পর্যন্ত চীনের জাহাজ উন্নয়নের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেন ,
আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে জাহাজ নির্মাণের সামর্থ্য এবং স্বতন্ত্র ও সৃজনশীল ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ২০১০ সালের মধ্যে চীনের ৫টি জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি বিশ্বের প্রথম দশটি শক্তিশালী জাহাজ নির্মাণ কম্পানির সারিতে প্রবেশ করানো।
|