v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-24 16:18:34    
চীনে জলসেচ ক্ষেত্রে পানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে

cri

    চীনে কৃষি ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে আরো বেশি পানি ব্যবহার করা হচ্ছে । এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পানির পরিমাণ দেশের পানি ব্যবহারের মোট পরিমাণের ৬৪ শতাংশেরও বেশি । কিন্তু চীনে পানি ব্যবহারের প্রকৃত হার খুব কম । পানি সম্পদের গুরুতর অভাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বহু অঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে পানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে । যাতে পানি সম্পদ বাঁচানোর পাশাপাশি আরো বেশি ফলনপ্রাচুর্য পাওয়া যায় । চীনে উত্তরাশে দক্ষিণাংশের চেয়ে পানি সম্পদের আরো বেশি অভাব দেখা দেয় ।

    শানতুং প্রদেশের চাও ইউয়ান শহরের সিন চুয়াং গ্রামে ৬৫ বছল বয়স্ক বৃদ্ধ লিউ সিং লিয়াং ৩০ হেক্টর কৃষি জমিতে আঙ্গুর চাষ করেন । তার আঙ্গুর খামারে অজস্র ছিদ্রযুক্ত বহু সংকীর্ণ ও লম্বা রবার পাইপের মাধ্যমে জলসেচ করা হয় । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , এটা বিশ্বের সর্বাধুনিক জনসেচ বিষয়ক প্রযুক্তি ।

    আঙ্গুর খামারে জলসেচ করার জন্য অত্যাধিক পানি ব্যবহার করা উচিত নয় । ভূগর্ভস্থ ২০ সেন্টিমিটার গভীরে আঙ্গুর গাছের শিকড় বদ্ধ । এই গভীরতায় সারের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকাও পালন করা যায় । পানিতে সার পুরোপুরি গলে যায় । যাতে সার অপচয় না হয় ।

    লিউ সিং লিয়াং বলেন , তিনি ২০০০ সাল থেকে আংগুর চাষ করতে শুরু করেছেন । ২০০২ সাল থেকে তার আংগুর খামারে ছিদ্রযুক্ত রবার পাইপের মাধ্যে জলসেচ প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে । প্রথম দিকে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬০ কিলোগ্রাম আঙ্গুর উত্পন্ন করা যেতো । বর্তমানে এই উত্পাদনের পরিমাণ ১২০ কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে ।

    ছিদ্রযুক্ত রবার পাইপের মাধ্যমে জলসেচ এক ধরনের সর্বাধুনিক জলসেচ পদ্ধতি । এ ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ বেশি । অধিকাংশ কৃষকরা তা বহন করতে পারেন না । সুতরাং চীনে কৃষিজাত দ্রব্য কোম্পানি ও গ্রামাঞ্চলের সহযোগিতা এই প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার একটি কার্যকর পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । বৃদ্ধ লিউ সিং লিয়াং-এর আঙ্গুর খামারে ছিদ্রযুক্ত রবার পাইপের মাধ্যমে যে জলসেচ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে , তা তুং লিয়াং গ্রাম ও সিংগাপুরের একটি কোম্পানির যৌথ পুঁজি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হয়েছে । সিংগাপুরের কোম্পানি আঙ্গুর খামারের উত্পন্ন যাবতীয় উন্নত মানের আঙ্গুর কিনে বিদেশে রফতানি করে থাকে । ফলে কোম্পানি ও চীনা কৃষক পরিবার উভয়ই উপকৃত হয় । একটি অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী , এ পর্যন্ত চীনে ৮ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে ছিদ্রযুক্ত রবার পাইপের মাধ্যমে জলসেচ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে ।

    এ ছাড়াও পানি সাশ্রয় পদ্ধতিতে জলসেচের ক্ষেত্রে আইসি কার্ডও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এখন আইসি কার্ড মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । উত্তর চীনের শান শি প্রদেশের ছিং স্যু জেলার সিয়াও উ গ্রামে ৩৭০ হেক্টর কৃষি জমি আছে । এই গ্রামে পানির দারুণ অভাব । গ্রামের একজন কর্মকর্তা হো চুং শি বলেন , জলসেচ এবং জলসেচের ফি জমা দেয়া একটি অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল ।

    গ্রামে পানির অভাবের কারণে কৃষি ক্ষেত্রে জলসেচ একটি বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । জমিতে জলসেচ করতে না পারলে কৃষকদের কোন আয় হবে না ও ফসল পাওয়া যাবে না ।

    এখন আর হো চুং শি'র কোন চিন্তা নেই । জানা গেছে , আগে সিয়াও উ গ্রামে জলসেচের ক্ষেত্রে কূপের পানি ব্যবহার করা হতো । ভূগর্ভস্থ খালের মাধ্যমে কূপের পানি কৃষি জমিতে নির্গত করা হতো । খোলা অবস্থায় নিষ্কাশনের দরুণ পানি বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতো । ২০০৩ সালে পানি ব্যবহারের ফি জমা দেয়ার সুবিধের জন্য গ্রামে আইসি কার্ড ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । প্রতি কৃষক পরিবারের একটি কার্ড আছে । ফলে পানির ফি জমা দেয়ার সমস্যা নিরসন করা হয়েছে । এ ছাড়াও গ্রামে পানি পাঠানোর জন্য ভূপৃষ্ঠ পানিবাহী খালের পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পাইপ নির্মাণ করা হয়েছে । এতে পানির অপচয় কমে গেছে । গ্রামে পানি সাশ্রয় বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে । আগে সিয়াও উ গ্রামে প্রতি কৃষক পরিবারের মাথাপিছু বার্ষিক আয় শুধু কয়েক হাজার ইউয়ান ছিল । এখন পানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে গ্রামবাসীরা শাক-সবজি চাষের জমির আয়তন বেড়ে গেছে এবং গত দু' বছরে প্রতি কৃষক পরিবারের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে ।

    পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি সার্বিকভাবে কাজে লাগানোর ফলে বহু অঞ্চলে কৃষকরা তাদের ফসল চাষের কাঠামোরও পরিবর্তন করেছেন । আগে শান শি প্রদেশের ছিং স্যু জেলার তুং নান গ্রামে শালগম ও ভুট্টা চাষ করা হতো । প্রতি হেক্টর জমিতে আয় শুধু ১৩ ইউয়ান ছিল । গ্রামে পানির দারুণ অভাবের কারণে প্রাচুর্যফলন পাওয়া সম্ভব হতো না । সেজন্য গ্রামের প্রধান ইয়াং সেন লির পরিচালনায় গ্রামবাসীরা এই গ্রামে পানি সাশ্রয়ী উচ্চ ফলনশীল পশু পালনের ঘাস চাষ করতে শুরু করেছেন । ফলে পানি সাশ্রয়ী জলসেচ ব্যবস্থা ব্যবহার শুরু হয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    পশু পালনের ঘাস চাষ শুরু করার পর কৃষকদের আয় বেড়ে গেছে । আগে প্রতি একর জমিতে আয় শুধু ১ হাজার ২ শো ইউয়ান ছিল । পশু পালনের ঘাস ও ফল গাছ লাগানোর ফলে প্রতি একর জমিতে বার্ষিক আয় ৩ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এখন গ্রামে মোট ৩ শো একরেরও বেশি জমিতে পশু পালনের ঘাস চাষ করা হচ্ছে ।

    পানি সাশ্রয়ী উন্নত মানের জলসেচ প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি চীনের বহু খাদ্য শস্য উত্পাদনকারী এলাকাগুলোতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পদ্ধতিও চালু হয়েছে । শান শি প্রদেশের চিয়ামাখৌ অঞ্চলে পানি সম্পদ ব্যবহার বিষয়ক কমিটি গঠিত হয়েছে । এই কমিটির উদ্যোগে পানি সম্পদ সুষমভাবে বন্টন করা হবে , কৃষকদের পরিসেবা করা হবে এবং গ্রামবাসীদের কাছে পানির দাম , পরিমাণ ও পানি সরবরাহের সময়ের ক্ষেত্রে অবহিত করা হবে।

    এ ছাড়াও চীনের জলসেচ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে আরো বেশি পুঁজি বিনিয়োগের জন্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে উত্সাহ দেয়া হচ্ছে । যাতে পানি সাশ্রয়ী নতুন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল জনপ্রিয় করে তোলা যায় এবং কৃষকদের সচ্ছলতা বাস্তবায়িত করা যায় । (লিলি)