গত বছরের ২৩ আগষ্ট দুপুরে চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচৌ শহরের ১ নম্বর সুপেই গণ হাসপাতালের দাহজনিত ক্ষত বিভাগ এক অত্যন্ত গুরুতর রোগী গ্রহণ করেছে । ডাক্তার চৌ কাং লক্ষ্য করেছেন, এই রোগীর ৮৫ শতাংশ চামড়ায় দাহজনিত ক্ষত সৃষ্টিহয়েছে । রোগীর গোটা শরীরে ফোসকা পড়েছে । তার প্রাণের স্পন্দনধীরেধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । লোকটির কি হয়েছে ? শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা কেমন হয়েছে ?
প্রায় তিন ঘন্টার জরুরী চিকিত্সার পর রোগীটির প্রাণের স্পন্দন কিছুটা বেড়ে গেলেও তিনি চেতনাহীন এবং বিপদ্জনক অবস্থায় পড়ে থাকেন । রোগীটির নাম সেন পাওফু, তিনি চিয়াংসু প্রদেশের চিয়াং ইয়েন শহরের কুকাও থানার সেন ইয়াং গ্রামের এক সাধারণ কৃষক । অনেক বছরের অভিজ্ঞ ডাক্তার চৌ কাং ভাবেন, কিসের কারণে লোকটির এত গুরুতর দাহজনিত ক্ষয় হয়েছে ? বারবার জিজ্ঞেস করে ডাক্তার চৌ জানলেন ,কুকাও থানা এক অত্যন্ত গরিব এলাকা । যাতায়াতের অবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত থাকার কারণে রোগী সেন পাওফুর গ্রাম এই এলাকার সবচেয়ে গরিব গ্রাম ছিল । কয়েক বছর আগে সেন পাওফুর দুটি সন্তানমাধ্যমিক স্কুলবয়সী হল । বাচ্চার স্কুলফি এই পরিবারের ওপর এক ভারী বোঝায় পরিণত হয় । যখন বাচ্চাদের স্কুলফি নিয়ে চিন্তা করছিলেন ঠিক এই সময় সেন পাওফু এক খবর পেয়েছেন যে , মদ প্রক্রিয়া করার মাধ্যমে পাশে গ্রামের একজন কৃষকের আয় অনেক বেড়েছে । সেন পাওফু ভাবলেন, আমিও মদ তৈরী করে বিক্রি করব । ২০০৩ সালে সেন পাওফু নিজের সব জমা অর্থ দিয়ে মদ তৈরী করার সরঞ্জাম কিনে গ্রামবাসীদের জন্য মত প্রক্রিয়া শুরু করেন।মদ প্রক্রিয়ার মুনাফা বেশি না হলেও দুই সন্তানের স্কুলফি দিতে তা যথেষ্ট হয় । কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি, বিনা অনুমোদনে মদ তৈরী ও বিক্রি করা এক অবৈধ কাজ । তিনি আরও ভাবতে পারেনিন যে,বেআইনীভাবে মদ তৈরী করা তার এবং তার পরিবারের জন্য ভয়ংকর দুর্যোগ ডেকে আনবে ।
২২ আগষ্ট সেন পাওফু সাধারণ সময়ের মতো ব্যস্ত ছিলেন । যখন তিনি মদ রাখার পাত্র থেকে মদ বের করতে যাচ্ছিলেন, হঠাত মদ রাখার পাত্রের বিস্ফোরণ হল । অতি ঘন মদ সেন পাওফুর গায়ে, বাইরের খড়ের স্তূপ এবং মদের উপাদানের উপরে ছড়িয়ে পড়ে । এক আকস্মিক ঘটনা ঘটল । আগুণ সেন পাফুর গায়ের ঘন মদে আরও জ্বলে ওঠে । এক মুহুর্তে আগুণ সেন পাওফুকে গ্রাস করে ফেলে । সেন পাওফুর অবস্থা সাংঘাতিক হয়ে যায় ।
প্রথম তিন দিন সেন পাওফু চেতনাহীন অবস্থায় ছিল । ডাক্তারদের জরুরী চিকিত্সায় সেন পাওফুর প্রাণ রক্ষা পায় । কিন্তু শরিরের ৮৫ শতাংশ চামড়া আগুণে ক্ষত হওয়ায় সেন পাওফু যে কোনো সময়ে প্রাণ হারাতে পারে । একমাত্র উপায় হল তার গায়ে চামড়া লাগিয়ে দেয়া ।
২৭ আগষ্ট হাসপাতালের দাহজনিত ক্ষত বিভাগ সেন পাওফুর জন্য প্রথম দফা চামড়া লাগিয়ে দেয় । তার মাথার ৮০ শতাংশ চামড়া কেটে ফেলে এবং তার বুকের ক্ষত জায়গায় চিকিত্সা করে। তার পর সেন পাওফুর জন্য উপযোগী চামড়া খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এটা সবার জন্য একটি বড় বাধা।
সেন পাওফুর ছোটো ভাই বাড়িতে নেই । তার ছোটো বোন তাকে চামড়া দিতে চান না । সেন পাওফুকে চামড়া দিতে পারে এমন লোকের মধ্যে শুধু সেন পাওফুর বাবা মা ও মেয়ে সেন সিয়াওলির চামড়া তার জন্য উপযোগী । কিন্তু ডাক্তারের চোখে তারা সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক চামড়া দানকারী নন । অচেতন অবস্থায় থাকলেও সেন পাওফু বাচ্চার স্কুলফির কথা ভুলতে পারেননি । গুরুতর অবস্থায়বাবা ছোটো ভাই ও নিজের স্কুলফির কথা সবসময় মনে রাখেন দেখে সেন সিয়াওলি কেঁদে ওঠে । গত কয়েক বছরে বাবা তাদের ভাইবোন দুজনের জন্য যে প্রচেষ্টা করেছেন সে সবই সিয়াওলির মনে ভেসে আসে । বারবার বিবেচনার পর সিয়াওলি সাহস করে এক সিদ্ধান্ত নিল, সে নিজের চামড়া বাবাকে দান করবে ।
সিয়াওলির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ডাক্তার চৌ কাং আশা করেন যে , সিয়াওলি আরও ভালভাবে নিজের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবে । কিন্তু বাবাকে নিজের চামড়া দান করবে সিয়াওলির এই মনোভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি । সিয়াওলি গম্ভীরভাবে শল্যচিকিত্সা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে । ৩১ আগষ্ট সকালে ডাক্তাররা সেন পাওফুর জন্য দ্বিতীয় দফা চামড়া লাগিয়ে দেয়ার শল্যচিকিত্সা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন । সেন পাওফুকে যখন শল্যচিকিত্সা রূমে পাঠানো হচ্ছিল তখন তিনি জানতে পারলেন যে, মেয়ে সিয়াওলি তাকে চামড়া দান করবে । তিনি কাঁদলেন এবং শল্যচিকিত্সা করতে অস্বীকার করেন । ডাক্তারের পরামর্শে সেন পাওফু শল্যচিকিত্সা গ্রহণ করতে রাজী হন । শল্যচিকিত্সা অত্যন্ত সফল হয়। ৪ মাস পর সেন পাওফু হাসপাতাল থেকে বের হন । এবারের দুর্ঘটানা থেকে সেন পাওফু এই সত্য বুঝেছেন যে, অবৈধভাবে উপার্জন করে ধনী হওয়া যাবে না । এখন তিনি সন্তানকে যে কথা সবচেয়ে বেশী বলেন তাহল মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করো । স্থানীয় সরকার ও গ্রামবাসীদের সাহায্যে সিয়াওলি ভাইবোন দুজনের স্কুলফি সমস্যা সমাধান হয়েছে ।
|