v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-24 15:51:46    
নারী সৈন্য লি কোচুর তিব্বতের ভালবাসা

cri
    দেশ রক্ষা,বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রান কাজ করা, রাজপথ তৈরী করা সহ যেখানে বিপদ সেখানেই চীনা গণ মুক্তি ফৌজের সৈনিকরা থাকবেন । তারা আমাদের কাছে সবচেয়ে ভালবাসার ও সম্মানিতমানুষ । ৫৫ বছর আগে এমন কিছু নারী সৈনিক ছিলেন তারা পায়ে হেটে তিব্বতে প্রবেশ করে তাদের নিজদের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও আন্তরিকতা দিয়ে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির জন্য বিরাট অবদান রেখে গিয়েছেন। লি কোচু নামে এক নারী এই সব নারী সৈনিকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ।২০- ৩০ বছর আগে তিনি তিব্বত ত্যাগ করেন । কিন্তু তিব্বতে ২০-২২ বছরের জীবনযাপন চিরকালই তার মনে থাকবে ।

    ১৯৪৯ সালে লি কোচু সামরিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন । স্নাতক হওয়ার প্রাক্কালে বিদ্যালয় তিব্বতে গণ মুক্তি ফৌজের অভিযানকে সাহায্য ও সমর্থন সম্পর্কে এক সমাবেশের আয়োজন করেছিল । তিব্বতের মুক্তি ও মাতৃভূমির একীকরণ বাস্তবায়নের মহত কাজ সম্পর্কিত বক্তৃতায় সামরিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা খুব উত্সাহিত হন । অক্সিজেনের অভাব সহ নানা অসুবিধা উপেক্ষা করে ১০০জন মেয়ে তিব্বতে যাওয়ার জন্য নাম লেখান। লি কোচু ১০০জন মেয়ের মধ্যে একজন ছিলেন । তিনি এবং অন্য ৯জন নারী সৈনিক অগ্রগামী দলের রাজনৈতিক বিভাগের কর্মগ্রুপে ভর্তি হন । এই কর্মগ্রুপে ৩৪জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩জন পুরুষ ছিলেন । বলা যায় তাদের এই কর্মগ্রুপ সত্যিকার একটি নারী কর্মগ্রুপ ।

    ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লি কোচু ও তার সহযোদ্ধারা রওয়ানা হলেন । সিছুয়ান প্রদেশ থেকে তিব্বতে যাওয়ার পথে প্রথম কয়েক দিনে সব সময় তাদের হাসিখুশি ও গান শোনা যেত । কিন্তু পরের দিনগুলোতে যখন গাড়ি মালভূমিতে প্রবেশ করে তখন অক্সিজেনের অভাবের কারণে বুক ব্যথা ও মাথা ব্যথা সহ মালভূমির নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা হয় । সৈনিকরা নানা অসুবিধা কাটিয়ে কানচি এলাকায় পৌঁছান । কানচি থেকে ছাংতুতে পায়ে হেটে এক হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয় । তারা ২০০টি তিব্বতীয় গরু নিয়ে কাঁধে ২০-৩০ কিলোগ্রামের মালপত্র বহন করে প্রতিদিন ২০-৩০ কিলোমিটারপথ ও দশ-বারোটি নদী পার হতেন ।

    ২ বছর পর অর্থাত ১৯৫২ সালের জুলাই মাসে লি কোচু ও তার সহযোদ্ধারা ৩০০০ কিলোমিটারপথ অতিক্রম করে গন্তব্যস্থান তিব্বতের চিয়াংচি এলাকায় পৌঁছান । এ সময়ের মধ্যে লি কোচু ছাংতুতে সামরিক অভিযান এবং মহাসড়ক মেরামতের কাজে অংশ নেন ।

    লি কোচু তিব্বতে মোট বিশ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন । তিব্বতীরা তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন । তাই লি কোচু তিব্বতীদের নিজের ভাইবোন নিজের আত্মীয়হিসেবে মনে করতেন ।

    ১৯৬৯ সালের শীতকালের একদিন লি কোচুর অসুখ হল । যখন তিনি অসুস্থঅনুভব করেন তখন তার বাড়ির বাইরে শুধু লাবা নামে একজন তিব্বতীয় ক্যাডার ছিলেন । তিনি লাবা নাম ডেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ।এই অসাধারণ আওয়াজ শুনে লাবা বুঝলেন লি কোচুর কিছু হয়েছে । তিনি তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তারকে খবর জানালেন এবং ডাক্তারের সঙ্গে লি কোচুর বাড়ি গেলেন । ডাক্তারের সময়োচিত চিকিত্সায় লি কোচু বেঁচে যান । তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো কিছু সময় লাগবে বলে তাকে খাটে শুয়ে থাকতে হয়। কিন্তু পরিবারপরিজন কাছে নেই বলে নেতৃবৃন্দগণ কুশান নামে এক তিব্বতী মেয়েকে তাকে দেখাশোনা করতে পাঠালেন । কুশানের সযত্নে লি কোচু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। কথাটা স্মরণ করলে লি কোচু এখনো আবেগের সঙ্গে বলেন, তিব্বতীবাসীদেরকে আমি কোনোদিনই ভুলতে পারব না ।

    ১৯৭২ সাল থেকে লি কোচু তিব্বতের পর ফুচিয়েন, শানতুঙ এবং পেইচিংয়ে কাজ করেছেন । তিনি উপলব্ধি করেছেন যে , অনেকে বিশেষ করে যুবকযুবতীরা তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি সম্পর্কে খুব কম জানেন । তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে , তিনি সবাইকে জানাবেন তিব্বতের মুক্তি ও স্থিতিশীলতা সহজে আসে নি । যাতে তারা তিব্বতের স্থিতিশীলতা এবং চীনের স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করবেন ।

    একবার তিনি " ৫০০জন নারী সৈনিকের তিব্বত অভিযান" শিরোনামে এক বই পড়েন । বইটির মিথ্যা কথা পাঠকদের মধ্যে কুপ্রভাব বিস্তার করে । বইটা পড়ে তিনি এবং সহযোদ্ধারা খুব রাগ হলেন । তারা মনে করেন , নারী সৈনিকের তিব্বত অভিযানের সত্যতা সবাইকে জানিয়ে দেয়া তাদের দায়িত্ব । ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর পেইচিংয়ে তিব্বতে প্রবেশকারী নারী সৈনিকের এক সমাবেশে তারা মিলিত হলেন এবং "তিব্বতে প্রবেশকারী প্রথম কিস্তির নারী সৈনিকরা" শিরোনামে একটি বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন । ১৯৫১ সালের শেষ দিকে তিব্বতে প্রবেশকারী নারী সৈনিকরা বইটির জন্য মানসিকতা ,সময় এবং আর্থিক দিক থেকে অনেক সাহায্য করেছেন । ৫ বছর চলার পর বইটি ২০০৪ সালের ১৬ জানুয়ারী প্রকাশিত হয় এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুরস্কার পায় । তাদের কাজের প্রতি এটা চমত্কারভাবে স্বীকৃতি ।

    ২০০৪ সাল তিব্বতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ প্রতিহত করার শততম বার্ষিকী । এ উপলক্ষে লি কোচু "১৯০৪ সালে তিব্বতের চিয়াংচি এলাকার বৃটিশ আক্রমণ প্রতিহত সংগ্রামের ইতিহাস" শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেন । অসম চীন-বৃটেন চুক্তি এবং তিব্বত মুক্তির পর অসম চুক্তি বাতিল করা সম্পর্কিত দলিল সহ তিব্বতে কাজ করার সময় বৃটিশ আক্রমণ প্রতিহত -যুদ্ধে তিনি যে দলিল অনুবাদ করেছেন সে সবই বইটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে ।

    ১৯৯৪ ও ২০০৫ সালে লি কোচু পরপর দুবার "শ্রেষ্ঠ কমিউনিস্ট পার্টি সদস্য" হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন । এটা তার কাজের আন্তরিকতা ও সাফল্য নিশ্চিত করেছে । এখন ৭৩ বছর বয়সী লি কোচু ৮ বছর বয়স থেকে এ পর্যন্ত নিজের অভিজ্ঞতাকে জীবনী রূপে আরেকটি বই লিখবেন । লি কোচু অনেক বছর আগে তিব্বত ত্যাগ করেছেন । কিন্তু তিনি তিব্বত সম্পর্কিত সব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন । তিনি তার তিব্বত জীবনযাত্রা ভুলতে পারেন না । তিনি নিজের প্রাণঢালা ও যৌবন তিব্বতে রেখে এসেছেন ।