v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-22 21:08:59    
খোলা মাঠে চলচ্চিত্র প্রদর্শক ছেন ইয়ুন লিনের কাহিনী

cri

    আজকের অনুষ্ঠানে পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের গ্রামাঞ্চলের একজন চলচ্চিত্র প্রদর্শক ছেন ইয়ুন লিনের কাহিনী শোনানো হবে । তিনি একজন প্রতিবন্ধী । গত কয়েক দশক ধরে তিনি তার অসুবিধাজনক ডান পা নিয়ে ৮৫টি গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্যে ৪ হাজার ৪ শ'রও বেশি বার চলচ্চিত্র দেখিয়েছেন ।

    ছেন ইয়ুন লিনের বয়স ৫৭ বছর । তিনি এ পর্যন্ত ২৪ বছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের জন্যে নানা ধরণের ছায়াছবি দেখিয়েছেন । প্রতিবার ছেন ইয়ুন লিন আসলে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা অনেক আগে থেকেই খোলা মাঠে সমবেত হয়ে অপেক্ষা করেন । দর্শকদের সংখ্যা বেশি পক্ষে কয়েক শ'তে পৌঁছতে পারে । কৃষক চাং ছাই ফোং বহুবার ছেন ইয়ুন লিনের দেখানো ছায়াছবি দেখেছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    বসন্ত উত্সেবের চেয়েও সরগরম । সবাই আনন্দে আত্মহারা । তিনি অনেক বছর ধরে আমাদের জন্যে ছায়াছবি দেখিয়েছেন । আমাদের মধ্যে অনেকে তার দেখানো ছায়াছবি দেখে দেখে বড় হয়ে গেছেন ।

    গত শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে ছেন ইয়ুন লিন একটি ছোট ছেলে ছিলেন । তখন তিনি প্রথমবার গ্রামাঞ্চলের খোলা মাঠে ছায়াছবি দেখলেন । সেসময় চীনের গ্রামে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল । কৃষকরা সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় ছায়াছবি দেখতেন । তখন একটি খোলা জায়গায় একটি সাদা কাপড় টাংগিয়ে চলচ্চিত্রের পর্দা হিসেবে গ্রহণ করা হতো । ছেন ইয়ুন লিনের এখনো স্পষ্ট মনে আছে যে , তিনি যে প্রথম ছায়াছবি দেখেছেন , তার নাম হলো " লিয়াং শান পোও ও চু ইন থাই" । এ ছায়াছবিতে প্রাচীন চীনের দুজন প্রেমিক ও প্রেমিকার প্রেমের কাহিনী বলা হয়েছে । তখন থেকে ছেন ইয়ুন লিন ছায়াছবিতে বিভোর হয়ে যান । তিনি আশা করেছিলেন , বড় হয়ে তিনি চলচ্চিত্রের সংগে জড়িত পেশায় নিয়োজিত হবেন ।

    ১৯৮৩ সালে ছেন ইয়ুন লিনের আশা পূরণ হলো । তার গ্রামে গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠিত হয় এবং তাকে এ ক্লাবের চলচ্চিত্র প্রদর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয় । ছোট বেলায় একবার অসাবধানবশত আছাড় খেয়ে তিনি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন । তখন থেকে হাঁটার সময় তার ডান পার অসুবিধা হয় । অথচ তিনি একজন চলচ্চিত্র প্রদর্শক হিসেবে কাজ শুরু করার পর তিনি নানা ধরণের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কয়েক দশক ধরে দিনের পর দিন ভারী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সাজসরঞ্জাম কাঁধে নিয়ে পাহাড় ডিংগিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং কৃষকদের অবসরকালীন জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন । কৃষক ওয়াং তা লি বলেছেন ,

    একটি জায়গায় যেতে সাধারণ লোকের দেড় ঘন্টা লাগলে , তার বেলায় আড়াই ঘন্টা লাগবে ।

    প্রতিটি ছায়াছবি দেখানোর আগে ছেন ইয়ুন লিন সবসময় বিজ্ঞান ও শিক্ষাভিত্তক প্রামাণ্য ছবি দেখান । এটি হচ্ছে ছেন ইয়ুন লিনের বহু বছরের একটি অভ্যাস । তিনি বলেন ,

    দর্শকরা মনোযোগ দিয়ে এসব প্রামাণ্য ছবি দেখলে , তারা অনেক কিছু শিখতে পারবেন । আমি আশি করি যে , তারা এ ছবিগুলো থেকে কিছু জ্ঞানার্জন করতে পারেন ।

    অথচ ছেং ইয়ুন লিনের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কাজে কিছু সময়ের জন্যে মন্দা দেখা দিয়েছিল । চীনের গ্রামাঞ্চলে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর চীনের কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে । তাদের অনেকে টেলিভিশন সেট কিনেছেন । কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে ক্যাবল টেলিভিশনের ব্যবস্থাও বসিয়ে দিয়েছেন । এভাবে অনেক কৃষক আরামে বাড়িতে বসে টিভি অনুষ্ঠান উপভোগ করতে শুরু করেন । আর খুবই কম কৃষক খোলা মাঠে ছায়াছবি দেখতে আসেন । একবার ছেন ইয়ুন লিন ছায়াছবি দেখানোর সময় মাত্র ৮জন দর্শক এসেছেন । বিশ বছরের মধ্যে এটি ছিল তার জন্যে একটি সবচেয়ে শোচনীয় অভিজ্ঞতা ।

    তবে গত বছর থেকে চীনের গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল টেলিভিশনের প্রবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার সংগে সংগে চীনের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের খোলা মাঠে ছায়াছবি দেখানোর কাজে আবারো প্রাণশক্তি ফিরে এসেছে । অনেক কৃষক আবার খোলা মাঠে ফিরেছেন দেখে ছেং ইয়ুন লিন মহা খুশী । তিনি বলেন ,

    আমি খোলা মাঠে ছায়াছবি প্রদর্শন করতে থাকবো । যতদিন পর্যন্ত আমার হাতপা নড়তে পারবে , ততদিন পর্যন্ত আমার কাজ চলতে থাকবে । যখন আমার হাতপা আর নড়বে না, তখন আমার চলচ্চিত্র জীবনের অবসান ঘটবে ।

    বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার সময় ছেন ইয়ুন লিন সবসময় একটি কার্ড সংগে নিয়ে যান । এ কার্ডে শতাধিক ছায়াছবির নাম থাকে । কৃষকরা এ নামের তালিকা থেকে নিজেদের পছন্দ ছায়াছবি বেছে নিতে পারেন । এবার কৃষকরা বেছে নিয়েছেন " নতুন পুলিশের কাহিনী" । অনেকে রাস্তার পাশে বা নদীর তীরে বসে ছায়াছবি উপভোগ করেন । যখন ছেন ইয়ুন লিন দেখতে পান যে, কৃষকরা গভীর আগ্রহের সংগে ছায়াছবি দেখেন , তখন অত্যন্ত আনন্দিত হন ।

    ছেন ইয়ুন লিনের এ খোলা মাঠে বসানো সিনেমাহলের আরো সুষ্ঠু বিকাশের জন্যে স্থানীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে তার জন্যে ডিজিটাল চলচ্চিত্র দেখানোর সাজসরঞ্জাম কিনে নিয়েছে । স্থানীয় সাংস্কৃতিক মহলের একজন কর্মকর্তা হোয়াং সিয়াং ইয়ুন বলেছেন ,

    এ বছর আমরা ২ হাজার ৮শ' ছায়াছবি দেখানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি । এর অধিকাংশই সরকারী খরচে চালানো হবে । ।এভাবে এসব চলচ্চিত্র প্রদর্শকদের নির্দিষ্ট বাজার ও বেতনের নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হয়েছে । এ ব্যবস্থা গ্রামাঞ্চলের সাংস্কৃতিক কাজ সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণামূলক ভূমিকা পালন করবে ।

    স্থানীয় সরকারের সহায়তায় ছেং ইয়ুন লিন প্রতিটি ছায়াছবি দেখানোর জন্যে ১০০ ইউয়ান ভাতা পেতে পারেন । তবে তার মন টাকা উপার্জন করা কৃষকদের জন্যে তার ছায়াছবি দেখানোর একমাত্র লক্ষ্য নয় । তিনি বলেছেন , টাকা উপার্জনের জন্যে আমি এ কাজ করি নি । টাকা আমার পকেটে গেলে শুধু আমি লাভবান হবো । কিন্তু একটি ছায়াছবি দেখানোর সময় যদি এক শ' লোক দেখেন , তাহলে এক শ' দর্শক আমার ছায়াছবিতে শামীল হবেন ।

    ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছেং ইয়ুন লিন প্রতি বছর চে চিয়াং প্রদেশ ও থাই চৌ শহরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রদর্শক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন । গত অক্টোবর মাসে তিনি আবার থাই চৌ শহরের দশজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ।