এখন বড় শহরে থাকা অনেক আধুনিক লোকের জীবন ক্রমেই আরো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে । প্রতিদিনকার চাকরি তাদের অধিকাংশ সময় দখল করে নিয়েছে , ই-মেইল লিখতে হয় এবং বিভিন্ন মিটিং-এ অংশ নিতে হয় । তা ছাড়া , সাপ্তাহিক ছুটিতে মাঝে মাঝে কাজও করতে হয় । তাই যখন সারা দিনের কাজ শেষে বাসায় ফেরেন , তখন তারা অনেক ক্লান্ত , বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময়ও ক্রমেই কমে যাচ্ছে । তবে , এখন পেইচিংয়ে এমন একটি ফোরাম আছে , তার নাম পেইচিং আন্তর্জাতিক ফোরাম , এ ফোরামের সদস্যরা সবাই সবাইকে জানতে চায় , ব্যস্ত বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ না করার কোন কারণ নেই , বন্ধুর সঙ্গে অনুভুতি ভাগাভাগি করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের নিয়ে এ ফোরামে যাবো এবং শুনবো এ ফোরামের বিদেশি বন্ধুদের মতামত ।
পেইচিং আন্তর্জাতিক ফোরাম বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গঠিত একটি উন্মুক্ত ফোরাম । প্রত্যেক সপ্তাহে তারা চীনের গণ ব্যাংকের ব্যচেলর ইন্সটিটিউটে মিলিত হন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মতামত জানান । প্রত্যেক সদস্যেরই ফোরামে সভাপতিত্ব করার সুযোগ আছে । যে লোক ইংরেজী বলতে পারে , সে এ ফোরামে অংশ নিতে পারবে ।
এখন এ ফোরামের প্রধান হলেন ফ্রান্ক । তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক । তিনি বলেছেন , একজনের বন্ধুর যোগাযোগ তার সাফল্যের জন্য খুবই সহায়ক । এ ফোরাম বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের লোককে বিনিময়ের একটি মঞ্চ দিয়েছে । সবাই এখানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে মতামত প্রকাশ করতে পারে । তিনি বলেছেন :
সানী লি ২০০৪ সালে এ আন্তর্জাতিক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেছেন । তিনি পেইচিংয়ে থাকা একজন দক্ষিণ কোরিয় মানুষ । এ ফোরাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হল বিদেশি ও চীনাদেরকে মতামত বিনিময় এবং বন্ধু হওয়ার সুযোগ দেয়া । এ ফোরাম সরকারী সংস্থা নয় , এ সংস্থা কোন লাভের জন্য প্রতিষ্ঠিত , তাও নয় । এ ফোরাম সবাইকে নতুনভাবে বন্ধুত্ব করার সুযোগ দিয়েছে ।
এ ফোরামের মাধ্যমে বিদেশি বন্ধুরা চীন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পেরেছে , অন্য দিকে চীনা বন্ধুদের ইংরেজী ভাষার মানও অনেক উন্নত হয়েছে । তা ছাড়া , অনেক সংবাদদাতাও এ ফোরামে গিয়ে কিছু নতুন চিন্তাধারা শুনে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারছেন ।
বন্ধুত্ব করা এবং মতামত ভাগাভাগি করা হল এ ফোরামের মর্ম । কতিপয় ভাগ্যবান লোক এখানে তাদের ভালোবাসার মানুষটিকেও খুঁজে পেয়েছে । জেন তাদের মধ্যে অন্যতম ।
আমি এ ফোরামে আমার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি । এখন আমাদের বিয়ে হয়েছে ।
জেনের স্বামী জাপানী । তাঁরা এখন টোকিউতে আনন্দের সঙ্গে জীবন কাটান । জেন কাজের জন্য পেইচিংয়ে এসেছেন । পেইচিংয়ে ফিরে আসার পর পরই তিনি এ ফোরামে এসেছেন । তিনি জাপানে ফিরে যাওয়ার আগে এ ফোরামে অংশ নেয়ার কথা স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন । ফোরামের সদ্যসরা তার জন্য একটি বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছে । জেন বলেছেন :
তখন আমার অনুভুতি ছিল খুব আবেগময় । এক দিকে , আমি আমার প্রিয়তমাকে এখানে খুঁজে পেয়েছি । আর অন্য দিকে , মানে আমাকে এখানকার সব ভালো বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করতে হচ্ছে এবং যেতে হচ্ছে একটি নতুন পরিবেশে । এমন জটিল অনুভুতির জন্য আমি কেদেছি। তখন আমার মনে হতো , যদি সুযোগ পাই , তাহলে আমি নিশ্চয় আবার পেইচিংয়ে ফিরে আসবো এবং ফিরে আসবোএ ফোরামে ।
এ সপ্তাহের আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ শুধু জেনের ফিরে আসার কারণ তা নয় , আরো একটি কারণ হল ফোরামের প্রধান লিন্ডা লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন ।
লিন্ডা এ ফোরামের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন । তিনি ফোরামের সদস্যদের জন্য অনেক পরিসেবার কাজ করেছেন । সবাই লিন্ডাকে বিশ্বাস এবং পছন্দ করে । এ ফোরামের সদস্যদের মধ্যে এমন উত্কন্ঠাও আছে : লিন্ডা ছাড়া এ ফোরাম কি টিকে থাকতে পারবে ?
এখন ফ্রান্ক এ ফোরামের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন । তিনি এ ফোরামের উন্নয়নের জন্য সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালাবেন । তিনি সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি লোকদের ফোরামে যোগ দানের ব্যবস্থা করবেন এবং এ ফোরামের জন্য অবদান রাখার উত্সাহ যোগাবেন । তিনি বলেছেন :
আমি মনে করি , এ ফোরামের উন্নয়ন সবাইয়ের শক্তির ওপর নির্ভর করে । প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে ।
ফোরামে সবার মৈত্রী গভীর করার জন্য ফ্রান্ক পেইচিং আন্তর্জাতিক ফোরামের ওয়েইবসাইট স্থাপন করেছেন । ফ্রান্ক আশা করেন এ ওয়েইবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফোরামের সদস্যদের দূরত্ব কমাতে পারবে , আরো বেশি বন্ধু এ ফোরামে যোগ দেবেন এবং এ আন্তর্জাতিক পরিবারের উষ্ণতা অনুভব করতে পারবেন ।
|