সিরিয়া সফররত ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাজি ওত্রি, প্রেসিডেন্ট বাশার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মালিকি তিন দিনব্যাপী এক আনুষ্ঠানিক সফরে ২০ আগস্ট দামাস্কাসে পৌঁছেছেন। এবার হচ্ছে তার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব লাভের পর প্রথম সিরিয়া সফর। ৩০ বছরের মধ্যে সিরিয়ায় ইরাকের কোন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর। এবার সফরের তিনটি প্রধান বিষয়বস্তু এখন আমি আপনাদের জানাবো।
প্রথমতঃ মালিকির এবারের সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সিরিয়ার কাছ থেকে ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে সমর্থন লাভ করা। ইরাক মনে করে, সিরিয়া তার সীমান্ত এলাকায় ফলপ্রসুভাবে সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ করলে ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় সমঝোতা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মালিকি জোর দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তার বিষয়টি হচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। মালিকি সিরিয়াকে দু'দেশের সীমান্ত এলাকায় পালিয়ে থাকা সশস্ত্র ব্যক্তিদের দমন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার বলেছেন, সিরিয়া ইরাকের স্থিতিশীলতা বাস্তবায়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তিনি বলেছেন, ইরাকের বিভিন্ন দলের মধ্যে জাতীয়ভাবে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। যাতে ইরাকের স্বাধীনতা ও অখন্ডতা সুরক্ষা করা যায়।
দ্বিতীয়তঃ ঐতিহাসিক কিছু সমস্যা সমাধান করতে হবে। যাতে দু'দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়। বর্তমানে দু'দেশ ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে অনুপ্রবেশ করার পূর্বে স্বাক্ষরিত বাণিজ্যিক চুক্তি বিবেচনা করবে এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেবে। মালিকি ইরাক সফরকালে দু'দেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য , পেট্রোলিয়াম ও জলসেচ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত আলোচনার কোন বিষয়বস্তু প্রকাশ করেন নি। তবে মালিকি ও সিরিয়ার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তারা যার যার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন। মালিকি বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়া বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তিনি আশা করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতার মাধ্যমে দু'পক্ষ অভিন্ন আশা বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।
তৃতীয়তঃ দু'দেশ শরণার্থী সমস্যা সমন্বিত করবে। বর্তমানে শরণার্থী হিসেবে প্রতি মাসেই গড়পরতা ৩০ হাজারেরও বেশি সিরিয়ায় প্রবেশ করছে। এ পর্যন্ত সিরিয়ায় থাকার ইরাকী শরণার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ। এটি সিরিয়ার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। সফরকালে মালিকি ব্যাপক ইরাকী শরণার্থী গ্রহণের ব্যাপারে সিরিয়ার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, সিরিয়ায় শরণার্থীদের জীবনযাত্রার মান সুরক্ষা করার জন্য ইরাক সরকার সিরিয়া সরকারকে সাহায্য দেবে। যাতে তাদের ইরাকে ফিরে আসার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের জনমত মনে করে, মালিকির এবারের সফর দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে একটি নতুন উন্মোচিত হয়েছে। এর পাশাপাশি সিরিয়ার শরণার্থীদের কাছে সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে নতুন সুযোগ ও সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনমত মনে করে, মালিকি সরকার ও সিরিয়ার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে স্পষ্ট মতভেদ রয়েছে। তারা মনে করে, জাতীয় শান্তিপূর্ণ সমঝোতা হচ্ছে ইরাকের সংকট নিরসণের একমাত্র উপায়। বিদেশী বাহিনীর ইরাকে মোতায়েন হচ্ছে বিভিন্ন অসংগতিপূর্ণ কঠিন সমস্যা সমাধানের মূল কারণ। ইরাক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার না করলে ইরাক কাছাকাছি দেশগুলোর পুরোপুরি সমর্থন লাভে সক্ষম হবে না।
|