২০ আগস্ট ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কুছনারের ইরাক সফরের দ্বিতীয় দিন। এই দিন ফ্রান্সের বিভিন্ন তথ্য মাধ্যম ভাষ্যে উল্লেখ করেছে যে, কুছনারের ইরাক সফর হচ্ছে ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পর ফ্রান্সের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রথম ইরাক সফর। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ইরাক সমস্যার ওপর ফ্রান্সের মনোযোগ নিবিড় হয়েছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হবে। মে মাসে নিকোলাস সার্কোজি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের সঙ্গে এবারের সফরের সম্পর্ক রয়েছে।
ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুছনার ১৯ আগস্ট বাগদাদ পৌঁছে ইরাকে আনুষ্ঠানিক তার ইরাক সফর শুরু করেন। এটা হচ্ছে ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের কারণে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র আর ইরাকের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পর ফ্রান্সের কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রথম ইরাক সফর। কুছনারের ইরাক সফরের আগে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ইরাকের প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানির আমন্ত্রণে কুছনার বাগদাদ সফর করেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ফ্রান্স ও ইরাকের সংহতির কথা ইরাকী জনগণকে জানানো এবং বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
এই মুখপাত্র ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, কুছনারের ১৯ আগস্ট বাগদাদ পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হচ্ছে এই দিন তাঁর ভালো বন্ধু, জাতিসংঘের ইরাক সমস্যা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সার্জিয়ো দ্যা মেলো'র বাগদাদে বোমা হামলা শিকার হয়ে মৃত্যুর চতুর্থ বার্ষিকী। তিনি এই দিন বাগদাদে দে-মেল্লোর স্মরণ করবেন। কিন্তু কিছু বিশ্লেষক তার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেন না। তাঁরা মনে করেন, কুছনারের এবারের ইরাক সফরের সময় আর সদসমাপ্ত সার্কোজির "যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির" সঙ্গে সম্পর্ক আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কুছনারের ইরাকে আকস্মিক সফর নিঃসন্দেহে প্রেসিডেন্টের সমর্থন পেয়েছে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, সার্কোজি যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটানোর সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠককালে ইরাক সমস্যায় তাঁদের মনোভাবের প্রকাশ গত চার বছরের দু'দেশের বৈরি অবস্থা প্রশমিত হয়েছে। এরপর ইরাক যুদ্ধের চার বছর পর ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বার ইরাক সফর হয়েছে। একই দিন কুছনার ইরাকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করার সময় বলেছেন, ফ্রান্স ইরাকের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে ইচ্ছুক।
বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন, কুছনারের এবারের ইরাক সফর সার্কোজির ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টার সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ফরাসী সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধ বাঁধিয়েছে বলে তীব্র সমালোচনা করায় ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এক সময় শূণ্যের কোঠায় নেমে যায়। সার্কোজি মার্কিন পন্থী। তিনি মনে করেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক সম্পর্ক সামান্য হলেও ফ্রান্সের স্বার্থের ক্ষতি করেছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারি রাষ্ট্র। ফলে তাদের সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। সেই জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সার্কোজি ফ্রান্সের পররাষ্ট্র নীতি সুবিন্যস্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের মৈত্রীকে বিশ্বাস করে। মৈত্রী মানে তার বন্ধু বিভিন্ন চিন্তাভাবনার পদ্ধতি মেনে নিতে পারে। তাঁর কথা শুনে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনস্থাপন করতে চায়।
তবে বিশ্লেষকরা আরো উল্লেখ করেছেন, যদিও সার্কোজির মার্কিন ছুটি শেষ হওয়ার একই দিন কুছনার ইরাকে পৌঁছেছেন, তবু তা থেকে বলা যায় না যে, ফ্রান্স সব কাজে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকবে। তাঁরা মনে করেন, সার্কোজি ফরাসী প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বলেছেন, নেটোর অতিরিক্ত বিকাশের কারণে জাতিসংঘের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তিনি এর বিরোধীতা করেন। তিনি বিশ্বের আবহাওয়ার উষ্ণায়ন সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিজের দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন করেছে, সার্কোজি তার সঙ্গে একমত হতে পারেন নি। ইরানের পারমাণবিক সমস্যায় তিনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এর বিরোদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কিন্তু তিনি ইরানের বিরোদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর বিরোধীতা করেন। তিনি বলেছেন, ফ্রান্স ও ইরানের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি বিষয়ক সহযোগিতার সম্ভাবনা এখনো আছে। ফলে বুঝা যায়, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যায় সার্কোজি ফ্রান্সের বরাবরই তার অবস্থান বজায় রাখবেন। কেবল এর ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন করা যায়। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|