দু'দিনব্যাপী তৃতীয় উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধ সহযোগিতা অংশীদার" নামক শীর্ষ সম্মেলন ২০ আগস্ট ক্যানাডার কিউবেকের ছাতেও মন্টেবেল্লোয় শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কাল্ডেরন ও ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার একসঙ্গে বসে বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক ক্ষমতা, খাদ্য ও পণ্যের নিরাপত্তা, টেকসই জ্বালানি সম্পদ, জ্বালানি সম্পদের পরিচালনা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ পাঁচটি ক্ষেত্রের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সম্মেলন চলাকালে তাঁরা সহযোগিতা জোরদার করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা পুনরায় ঘোষণা করা ছাড়াও অন্য কোন বিশেষ অগ্রগতি হবে না। কারণ এই তিনটি দেশ পরস্পরের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সদিচ্ছা আছে বলে সবাই উত্তর আমেরিকান অঞ্চলের একত্রীকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে চায়। তবে এর জন্য তিনটি দেশের আরো দীর্ঘ পথ এগিয়ে যেতে হবে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। প্রেসিডেন্ট বুশের কার্যমেয়াদ আর বেশি দিন বাকি নেই। ফলে তাঁর কার্যমেয়াদে উত্তর আমেরিকান অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমস্যা বা অভিবাসী সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে না। সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা সমস্যা ও বুনিয়াদী ব্যবস্থার পুঁজি বিনিয়োগের অভাব হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক একত্রীকরণের বাধা সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সীমান্ত এলাকায় সর্বদাই গুরুতর মাদক দ্রব্য পাচার ও নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। এ বছরের প্রথম দিকে মেক্সিকো জুড়ে বিরাট আকারের মাদক দ্রব্য পাচার সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু মাদকদ্রব্য কারবারীদের প্রতিরোধের মুখে মেক্সিকোর কয়েকজন পুলিশ গুরুতর হতাহত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট কাল্ডেরন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার সমর্থন ও সাহায্যের প্রত্যাশা করেন। এখন কাল্ডেরনের অনুরোধ মার্কিন পক্ষের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর জন্য সামগ্রী সরবরাহ করবে এবং প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ দেবে। অনুমান অনুযায়ী, বুশ ও কাল্ডেরন ছাতেও শীর্ষ সম্মেলনের সুযোগে সাহায্যদান সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন।
অভিবাসী সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে জড়িত আরেকটি আলোচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকোর অভিবাসীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে নিজ দেশের অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ও মেক্সিকো সরকারের একটি বিবেচনার বিষয়। চলতি বছরের জুন মাসে মার্কিন কংগ্রেস দ্বিতীয়বারের মত অভিবাসী সংস্কার বিল নাকচ করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিবাসী সংস্কার অচলাবস্থায় পড়েছে। তা ছাড়া, দু'দেশের সীমান্ত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পৃথকীকরণ দেয়াল নির্মাণ করার দরুণ অভিবাসী সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর অসংগতি আরো তীব্রতর হয়েছে। সুতরাং, অভিবাসী সমস্যাও ছাতেও শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হবে।
তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ক্যানাডা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক ক্ষমতা নিয়েও আলোচনা করবেন। ১৯৯৪ সালে "উত্তর আমেরিকার অবাধ বানিজ্য চুক্তি" আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ক্যানাডার বাণিজ্য ও পূঁজি বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রেই বিপুল প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু তিনটি দেশের মধ্যে গুরুতর বাণিজ্যিক বিবাদও অব্যাহত ছিল। এমন কি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তার মধ্যস্থতা করেছে। এখন চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্মুখীন উত্তর আমেরিকার তিনটি দেশের সবাই উপলব্ধি করেছে যে, তারা অব্যাহতভাবে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, যাতে পৃথিবীতে তাঁদের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক ক্ষমতা বাড়বে।
এখন ছাতেও মন্টেবেল্লো শীর্ষ সম্মেলন ক্যানাডায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ১৯ আগস্ট ক্যানাডার রাজধানী অটোয়ায় প্রায় হাজার খানেক লোক সমবেত হয়ে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, "উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধ সহযোগিতা অংশীদার" নামক শীর্ষ সম্মেলনের স্বচ্ছতা ও প্রকাশ্যের অভাব রয়েছে। তাঁরা ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিরোধীতা করেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। তা ছাড়া, ক্যানাডার অনেক রাজনৈতিক দল যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার মধ্যকার পানি সম্পদ ও জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রের সহযোগিতার বিরোধীতা করেছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|