v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-15 16:47:58    
যেখানে সংকট আছে , সেখানে চীনা বাহিনী থাকবে

cri

    লড়াই করা এবং বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ কাজ চালানো হচ্ছে বিশ্বের বহু দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব । চীনা সেনাবাহিনীও এর ব্যতিক্রম হয় না । বিশ্বের যেসব দেশে ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে থাকে , চীন সেসব দেশের অন্যতম । দেশ ও জনগণের স্বার্থের সংরক্ষণকারী হিসেবে চীনের সেনাবাহিনী অনিবার্যভাবে বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ কাজ চালানোর গুরুভার কাঁধে নিয়েছে ।

 

    সিনিয়ার কর্ণেল থিয়ান ই সিয়াং হচ্ছেন চীনা গণ মুক্তি ফৌজের দি জেনারেল স্টাফের জরুরী বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক । তিনি বলেন , চীনের সেনাবাহিনীর বিপুল ও সাধারণ কর্তব্য হচ্ছে বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ কাজ চালানো । ত্রাণ কাজে চীন সরকারের সহায়তাকারী একটি প্রাণশক্তি হিসেবে ১৯৪৯ সাল নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনা গণ মুক্তি ফৌজ প্রায় সকল প্রকার ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ কাজে যোগ দিয়েছে ।

    তিনি বলেন , বিশেষ করে ১৯৬৩ সালে উত্তর চীনে সংঘটিত প্রলয়ংকরী বন্যা , ১৯৬৬ সালে উত্তর চীনে সংঘটিত সিং থাইয়ের ভূমিকম্প , ১৯৭৬ সালে থাং শানের ভয়াবহ ভূমিকম্প , ১৯৮৭ সালে উত্তর-পূর্ব চীনের তা সিং আন লিংয়ের গুরুতর অগ্নিকান্ড এবং গত শতাব্দির শেষ দিকে চীনে সংঘটিত গুরুতর বন্যার কথা স্মরণ করার মত । কোথাও কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে নিশ্চয়ই চীনের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকবে । এটি চীনের সেনাবাহিনীর কর্তব্য ও দায়িত্ব ।

    সিনিয়ার কর্ণেল থিয়ান ই সিয়াং বলেন , হঠাত ঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে চীনের সেনাবাহিনীর কৌশলগত প্রস্তুতি পর্যাপ্ত , উচ্চতর সাংগঠনিক এবং প্রক্রিয়া দ্রুত বলে তারা অল্প সময়ের মধ্যে দুর্গত এলাকাগুলোতে গিয়ে ত্রাণ কাজে যোগ দিতে পারে এবং বৃহত্তম পরিসরে জনসাধারণের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে । তাই প্রতিটি বিপর্যয়ের ত্রাণ কাজে চীনের সেনাবাহিনী সবসময় সবচেয়ে বিপদজনক ও অসুবাধাজনক দায়িত্ব পালন করে থাকে ।

    তিনি বলেন , যেমন ১৯৯৮ সালে চীনের প্রলংয়করী বন্যার সময় গুরুত্বপূর্ণ সময় ও স্থানে চীন সরকার সবসময় সেনাবাহিনীকে তলব করে থাকে । চিয়াং সি প্রদেশের চিউ চিয়াংয়ের বন্যা প্রতিরোধের কাজে চীনের সেনাবাহিনী শামীল হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় । কিছুদিন আগে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের ফু আর এলাকায় রিখটার স্কেলে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে ।

    ভূমিকম্পে ১০ লাখেরও বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে এবং এর পরিমাণ ২৫০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি । ভূমিকম্প হওয়ার পর পরই ছেং তু সামরিক এলাকার সামরিক প্রকৌশল বাহিনী অকুস্থলে উপস্থিত হয় । তারা স্থানীয় স্কুল-বিদ্যালয় , গ্রাম ও কলকারখানায় গিয়ে ধ্বংসপ্রায় বাড়িঘর সাফ করা এবং দুর্গত জনগণের জন্যে নতুন বাড়িঘর নির্মাণের কাজে সাহায্য করে ।

    এ বাহিনীর একটি কোম্পানির কমান্ডার ছেন হুং চি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , জনসাধারণের অসুবিধা দূর করার জন্যে আমরা সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি । তাদের কোনো চাহিদা থাকলে আমরা সবসময় তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসি । ধ্বংসপ্রায় বাড়িঘর ভংগে দেয়ার সময় তাদের মালপত্রের ক্ষতি হতে পারে , এ কথা বিবেচনা করে ঘর ভেংগে দেয়ার সময় আমরা যত দূর সম্ভব তাদের মালপত্র রক্ষার চেষ্টা করি ।

    যেসব জিনিস ঘর থেকে উদ্ধার করা যায় , সেসব জিনিস জীবনের ঝুকি নিয়েও ঘর থেকে বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করি , যাতে তাদের ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় । সাধারণত চীনের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দুর্গত এলাকাগুলোর জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে দেয় । দুর্গত এলাকার একজন কৃষক চাং ইয়ুং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , সেনাবাহিনী এখানে আসার পর আমরা অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছি ।

    ঘন ঘন ভূকম্প সত্ত্বেও তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে আমাদের জানমাল উদ্ধারের জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে । তারা সরকারের পাঠানো দূতের মত কাজ করে যাচ্ছে । আমরা নিশ্চয় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবো, ভূমিকম্পকে পরাজিত করবো এবং মাতৃভূমি পুনর্গঠন করবো । চীনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ এবং জাতীয় শক্তির বৃদ্ধির সংগে সংগে চীনের সেনাবাহিনী এখন অধিক থেকে অধিকতর আন্তর্জাতিক ত্রাণ কাজ কাঁধে নিতে শুরু করেছে ।

    ২০০১ সালে চীনা আন্তর্জাতিক ত্রাণ দল গঠিত হয় । এটি চীনের সামরিক প্রকৌল বাহিনী , চীনা সশস্ত্র পুলিশের চিকিত্সক এবং চীনা জাতীয় ভূমিকম্প ব্যুরোর কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত । এ দলে চীনের সৈনিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ।

    গত ৬ বছরে চীনা আন্তর্জাতিক ত্রাণ দল পর পর আলজিরিয়া , ইরান ও পাকিস্তানে সংঘটিত ভূমিকম্পের সময় এবং ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির সময় ত্রাণ কাজে অংশ নিয়েছে । চীনা আন্তর্জাতিক ত্রাণ দলের উত্কৃষ্ট প্রকৃতি , উন্নত সাজসরঞ্জাম ও ত্রাণের মান সাহায্য গ্রহীত দেশগুলোর জনগণের প্রশংসা লাভ করেছে ।

    পেইচিং সামরিক এলাকার একটি ইঞ্জনিয়ারীং রেজিমেন্টের ত্রাণ দলের সদস্য চাং চিয়ান ছিয়াং বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক ত্রাণ কাজে যোগ দিয়েছেন । অন্যান্য দেশে ত্রাণ কাজে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি মনে করেন যে , অন্যদের সাহায্য করার পাশাপাশি তিনি অপার আনন্দ পেয়েছেন এবং সেসব দেশের জনসাধারণের মৈত্রীও লাভ করেছেন ।

    তিনি বলেন , একজন সৈনিক ও ত্রাণ দলের সদস্য হিসেবে আমি চীন ও চীনা জনগণের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশকে সাহায্য করতে যাচ্ছি । এতে আমি গর্ব বোধ করি । যখন আমরা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজে গিয়েছি , তখন স্থানীয় লোকেরা সবসময় জিজ্ঞেস করে যে , আপনারা কোন দেশের লোক ।

    যখন আমরা বলি , আমরা চীন থেকে এসেছি , তখন তারা প্রশংসা করে বলেন , চীন খুবই ভালো । বর্তমান পরিস্থিতির বিকাশের সংগে সংগে বিপর্যয়ের সময় ত্রাণের মত হঠাত ঘটিত দুর্ঘটনা মোকাবিলা ইতোমধ্যে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে ।

     সেজন্যে চীনা গণ মুক্তি ফৌজ এ ক্ষেত্রে আরো বিরাট অবদান রাখার জন্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে , যাতে তাদের জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করা যায় ।