চারদিনব্যাপী পাক—আফগান উপজাতিদের প্রথম যৌথ সম্মেলন ১২ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শেষ হয়েছে। সম্মেলনে পারস্পরিক আস্থা জোরদার এবং পাশা পাশি সন্ত্রাস ও চরমপন্থী দমন সহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছে এবং একটি যৌথ ঘোষণা গৃহীত হয়েছে। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, পাক—আফগান উপজাতিদের যৌথ সম্মেলনে অর্জিত অগ্রগতি হচ্ছে দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে উন্নত এবং অভিন্ন নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।
এবারের পাক—আফগান উপজাতিদের যৌথ সম্মেলন হচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উপজাতিদের প্রধানদের প্রথম যৌথ সম্মেলন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা উপজাতিগুলোর প্রধান, সংসদ সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তা সহ প্রায় ৭শ' জন এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়াও সম্মেলনে তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাস ও চরমপন্থী দমন করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। সম্মেলনশেষে গৃহীত এক যৌথ ঘোষণায় অংশগ্রহণকারীগণ বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু'দেশের ৫০জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ছোট আকারের উপজাতিগুলোর প্রধান সম্মেলন গঠিত হবে। এই সম্মেলন তালিবানসহ সামরিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে এবং যৌথ ঘোষণায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতৈক্য কার্যকর নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে। অংশগ্রহণকারীরা পাক—আফগান পরস্পরের সীমান্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য না দেয়া এবং মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহারে সমভাগী হওয়াসহ বিভিন্ন ব্যাপারে একমত হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ এবং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কার্জাই এবারের সম্মেলনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। অনিবার্য কারণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুশাররফ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন নি। তিনি ১২ আগস্ট কাবুলে সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণ দেয়ার সময় মুশাররফ বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সন্ত্রাস ও চরমপন্থীদের হুমকির সম্মুখীন। সুতরাং, একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী আফগানিস্তান পাকিস্তানের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। পাকিস্তান আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণের পররাষ্ট্রনীতি নেবে না। কারণ, এটা হচ্ছে 'বিপদজনক ও অদূরদর্শী'। মুশাররফ বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু'দেশ পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা জোরদার এবং দু'দেশের মধ্যেকার ভুল বোঝাবুঝি ও মতভেদ সৃষ্টির ব্যাপারে বহিরাগত শক্তির তত্পরতা সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট কার্জাই প্রেসিডেন্ট মুশাররফের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার প্রশংসা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এবারের সম্মেলন দু'দেশের পারস্পরিক আস্থা আরো জোরদার করবে।
জনমত লক্ষ্য করেছে যে, যখন দু'দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে, তখন এবারের যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এটি প্রায় এক বছরের মধ্যে মুশাররফ ও কার্জাইয়ের মধ্যে প্রথম সাক্ষাত্। গত বছর থেকে তালিবান সশস্ত্র যোদ্ধারা আফগানিস্তানে আবার তত্পর হয়েছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে বিদেশী জিম্মিদের অপহরণের ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে। এতে আবারো আফগানিস্তানের সন্ত্রাসদমন পরিস্থিতির দুরুহতা ও জটিলতা প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানে 'লাল মসজিদ' ঘটনার পর থেকে সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বোমা বিস্ফোরণও মাঝে মাঝে হচ্ছে। বলা যায়, দু'দেশ উভয়ই সন্ত্রসী তত্পরতার শিকার। সুতরাং দু'দেশের সন্ত্রাসদমন সংগ্রামে সহযোগিতা করা উচিত। বরং, গত বছর থেকে দু'দেশ সীমান্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ সমস্যার ব্যাপারে পরস্পরকে অভিযোগ করে আসছিল। তা দু'দেশের সন্ত্রাসদমনের প্রক্রিয়াকে অনেকটা প্রভাবিত করেছে। এ প্রেক্ষাপটে দু'দেশের উপজাতিগুলোর প্রধানদের যৌথ সম্মেলনের আয়োজন নিঃসন্দেহ পরস্পরের অবস্থানের সমন্বয় এবং পারস্পরের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানসহ কয়েকটি প্রভাবশালী উপজাতির প্রধানরা এবারের সম্মেলনে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে এবারের সম্মেলনের ফলে স্বল্পমেয়াদী সন্ত্রাসদমন যুদ্ধে কী ধরনের পরিবর্তন এনে দেবে তা বলা মুশ্কিল।
(খোং চিয়া চিয়া)
|