v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-16 18:53:29    
পেইচিং শহরের সকল শিল্পকর্মীদের গ্যালারী

cri

 

    প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান। আমি খোং চিয়া চিয়া এবং আমার সঙ্গে রয়েছেন আমার সহকর্মী আবাম ছালাউদ্দিন। আজকে আমরা আপনাদের পেইচিং শহরের একটি বিশেষ যাদুঘর—যা হচ্ছে পেইচিং শহরের সকল শিল্পকর্মীদের গ্যালারী। যাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে চীনের এক হাজারেরও বেশী ধরনের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, এর মধ্যে প্রাসাদ সূচিকর্ম, জেড পাথর, বার্নিশ এবং লোকশিল্প হিসেবে কাগজের-ফুলসহ বিভিন্ন পণ্য। প্রথমে আমরা আপনাদের কয়েক ধরনের প্রাসাদ হস্তশিল্প সম্পর্ক জানাবো।

    সকল শিল্পকর্মীর এ কেন্দ্রটি দক্ষিণ পেচিং-এ অবস্থিত। ৫০ হাজার বর্গমিটারের একটি বিশাল হলে ৩০টিরও বেশী খ্যাতিমান শিল্পীদের প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। এ সব খ্যাতিমানশিল্পীদের প্রদর্শনী কক্ষে সংগৃহিত চীনের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সাধারণত দু'রকমঃ এক রকম হচ্ছে প্রাসাদ হস্তশিল্প, আরেক রকম হচ্ছে লোকজ হস্তশিল্প। আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার চেয়ারম্যান এরিক দুলুক সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারী পরিদর্শন করার পর তাকে 'চীনের ল্যুভর যাদুঘর' এর সঙ্গে তুলনা করে এর প্রশংসা করেছেন। সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারীর কর্মী মি. থাও ইয়ে বলেছেন,

    আসলে সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারী হচ্ছে একটি বিশেষ যাদুঘর। এর লক্ষ্য শুধু পথপ্রদর্শক পর্যটকদের নিয়ে ছবি ও বস্তুগত দিক দেখানোর জন্য নয়, এটা প্রধানত খ্যাতিমান শিল্পী ও তাদের ছাত্রছাত্রীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে, পর্যটকদের খ্যাতিমানশিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেয়া। খ্যাতিমানশিল্পীরা তাদের কাজ করতে করতে পর্যটকদের প্রশ্ন উত্তরও দিয়ে থাকেন।

    বর্তমানে সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারীতে দশ-বারো ধরনের প্রাসাদ হস্তশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে। পেইচিং সূচিকর্ম হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রাসাদ হস্তশিল্প। পেইচিং সূচিকর্ম অথবা প্রাসাদ সূচিকর্ম মানে রাজপ্রাসাদ ও অভিজাত সম্প্রদায়ের জমকালো পোশাক বা সজ্জা তৈরী করা। সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারীর পেইচিং সূচিকর্মের শিল্পী মি. ইয়াও ফু ইং-এর বয়স এখন ৬৬ বছর। তিনি ৪৮ বছর ধরে সূচীকর্মের কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন,

    'সাধারণত পেইচিং সূচিকর্মের ছবির নিজের অর্থ রয়েছে এবং অর্থটা অবশ্যই মঙ্গলজনক। এটা প্রাসাদের অভিপ্রায়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

    পেইচিং সূচিকর্মের ধরন ও মানদণ্ডের রকমারিতা, বিশেষ করে কিছু কিছু সূচিকর্মের নমুনা স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা যায় না। যেমন রাজার ঢিলা পোশাক ও রাজকীয় রাজাজ্ঞা ইত্যাদি। ইয়াও ফু ইং বলেছেন, প্রাচীনকালে রাজা ছিলেন শীর্ষ নেতা। ড্রাগন রাজার প্রতীক হিসেবে, মর্যাদাসম্পন্ন ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। সুতরাং রাজার ঢিলা পোশাক তৈরী করার উপকরণের প্রতি যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ থাকতো বেশী।

    জানা গেছে, একটি পেইচিং সূচিকর্ম করতে দশ-বারোটি প্রক্রিয়া দরকার এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজনকেই তা সম্পন্ন করতে হয়। একজন সুদক্ষ শ্রমিকের একটি রাজার ঢিলা পোশাক সেলাই সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই বছর লাগে। অতিসূক্ষ ও সুন্দর ছবি, উত্কৃষ্ট প্রযুক্তি ও গভীর সাংস্কৃতির অন্তর্নিহিত অর্থ সহ বিভিন্ন কারণে পেইচিং সূচিকর্ম দেশী-বিদেশী পর্যটক এবং সংগ্রাহকদের কাছে প্রিয়।

    শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আপনারা যে শব্দ শুনছেন, তা পান্না কাটার শব্দ। শুধু ভালো গুনগতমানের পান্নাই এতো রৌপ্যসদৃশ প্রতিফলন সৃষ্টি করতে পারে। ৩০ বছরেরও বেশী সময় জেড পাথর খোদাই কাজ করা বিখ্যাতশিল্পী মি. ইয়াং পাও চোং বলেছেন,

    ভালো উপকরণ, সুন্দর ডিজাইন ও কমনীয়তা সম্পন্ন করতে তিনটি উপাদান একটি শ্রেষ্ঠ জেড পাথর খোদাই শিল্প-কর্মের ভাগ্য নির্ধারন করে।

    মি. ইয়াং একটি খনিজ পান্না পাথর বাইরে নিয়ে এসেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এই পাথরে একটি বাঁধাকপি খোদাই করতে হবে। বাঁধাকপিকে চীনা ভাষায় বলে বাইছায়, এটা হচ্ছে চীনা জনগণের প্রিয় অর্থ। এই ধরনের জেড পাথর গায়ে পরলে, সব সুন্দর ইচ্ছাগুলো মানুষের কাছে আসে এবং তিনি ভাগ্যবান হন।

    বার্নিশের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী, পেইচিং বার্নিশ করার কাজ বার্নিশ শিল্পের এক ধরনের স্বচ্ছতা হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। লাল ও সবুজ ছিলো প্রাচীন বার্নিশ কাজের প্রধান রঙ। বার্নিশে ব্যবহৃত প্রসাধনের রং হচ্ছে প্রাকৃতিক। কোনো বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক বস্তু এতে থাকে না। এ রঙ খাওয়াও যায় এবং সুদীর্ঘ সময় রাখাও যায়। মাদাম ওয়াং শিয়াও ফেই হচ্ছেন সকল শিল্পকর্মীর গ্যালারীর বার্নিশ ম্যানেজার। তিনি আমাদের বার্নিশ সংক্রান্ত একটি গল্প বলেছেন,

    সে সময় একটি বিদেশী ব্যবসায়ী জাহাজ ইংলিশ চ্যানেল পার হবার সময় ডুবে যায়। ৩০ বছর পর, ডুবন্ত জাহাজ থেকে মালপত্র রক্ষা করা পণ্যদ্রব্যের মধ্যে দুটো বার্নিশের বোতল পাওয়া যায়। যা এতো উজ্জ্বল ঠিক যেন নতুনের মতো। যদিও সমুদ্রের পানিতে ক্ষয় খুবই বেশী হয়, তবুও বার্নিশের বোতল দু'টি ঠিক নতুনের মতোই রয়ে গেছে। এটা বার্নিশ শিল্পের উত্কৃষ্ট প্রমাণ।

    ব্যবহারিক ও মূল্যবিচারের কারণে রাজকীয় ও অভিজাত সম্প্রদায় বার্নিশ খুব পছন্দ করতেন। বিশ্বের বহু দেশ বার্নিশকে মূল্যবান ধাতু হিসেবে সংগ্রহ করতো অথবা সম্মানযোগ্য অতিথিদের উপহার হিসেবে প্রদান করতো।