v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-10 19:58:57    
ফান তু ও তাঁর "উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসা" নামে শিশু গ্রাম

cri
    উত্তর পূর্ব চীনের তালিয়েন শহরের ল্যুসুনখৌ এলাকার সুয়াং থাই কৌ ছুন গ্রামে " উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসা" নামে একটি শিশু গ্রাম আছে। শিশু গ্রামটি ফান তু নামে একজন মহিলা বিশেষভাবে জেলবন্দীদের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ।

    সুয়াং থাইকৌ ছুন গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত এক দু তলা বাড়িতে আমাদের সাংবাদিক " উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসা" নামে শিশু গ্রামের স্নেহময় মা ফান তুর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন । চার বছর আগে ৩৮ বছর বয়সী ফান তু চীনের হংকংয়ের স্বেচ্ছাসেবক কর্তৃক দুষ্ট ছেলেমেয়েদের সাহায্য করা সম্পর্কিত এক প্রামান্য চলচ্চিত্র দেখেছিলেন । ফান তু জানতে চান , তার কাছে সাহায্য প্রয়োজন এমন ছেলেমেয়ে আছে কী না । এ জন্য তিনি লিয়াও নিং প্রদেশের কয়েকটি জেলখানা পরিদর্শন করেছেন । জেলখানার একজন ওয়র্ডেনের কাছ থেকে একটি গল্প শোনার পর তিনি বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন , এক দম্পতি নির্মান ক্ষেত্রে চুরি করেছে বলে তাদেরকে জেলখানায় আটক রাখা হয়েছে । দ্বিতীয় দিন ওয়ার্ডেনরা লক্ষ্য করেছেন , জেলখানার গেটে এক ছেলে ও এক মেয়ে উবু হয়ে বসে আছে । তারা এই দম্পতির ছেলেমেয়ে । বাবা মা ছাড়া তাদের কোনো আতীয়স্বজন নেই । ব্যাপারটা জেনে জেলখানার কর্মচারীরা পালাক্রমে ছেলেমেয়ে দুজনকে দেখাশোনা করেন ।

    ফান তু মনে করেন , সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের মতো এই সব ছেলেমেয়েদের তাদের আনন্দময় শিশুকাল উপভোগ করার অধিকার থাকা দরকার ।  তাদের উষ্ণ পরিবার দরকার । সুতরাং তিনি একটি শিশু পল্লি গড়ে তোলা এবং জেলবন্দীদের অবয়স্ক ছেলেমেয়েদের গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    ২০০৩ সালের শরত্কালে ফাং তু চাকরী ছেড়ে দুজন বন্ধুর সঙ্গে তালিয়েন শহরের ল্যুসুনখৌ এলাকার সুয়াং থাই কৌ ছুন গ্রামে একটি দু তলা বাড়ি ভাড়া নেন এবং এখানে " উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসা" নামে শিশু গ্রাম গড়ে তুলেছেন । তাঁরা তালিয়েন শহরের আশেপাশে কয়েকটি জেলখানায় গিয়ে বন্দীদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন । চুক্তি অনুযায়ী তাদের ছেলেমেয়েরা শিশু পল্লীতেথাকবে এবং নিকটবর্তী স্কুলে লেখাপড়া করবে । তাদের জীবনযাত্রা ও লেখাপড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যয় শিশু পল্লী বহন করবে ।

    সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের তুলনায় বাবা মার ভালবাসার অভাবের ছেলেমেয়েদের চরিত্রে কিছু ত্রুটি দেখা দেয় । শিশু পল্লির মায়ামমতাপূর্ণ মা ইয়াং মেই বলেছেন , ---২--- প্রথম দিকে সহজভাবে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা যায় না । তারা কাউকে বিশ্বাস করে না , সব ব্যাপারে সন্দেহ করে । তার জিনিসে স্পর্শ করলে সে রাগ করবে এবং বলবে, স্পর্শ করো না , এটা আমার । আমি মনে করি , তারা অত্যন্ত স্বার্থপর ।

    ২৮ বছর বয়সী ইয়াং মেই একজন অবিবাহিত মেয়ে হলেও বিগত তিন বছরে তিনি এক মা'র সব সুখ দুঃখ ও কষ্ট উপভোগ করেছেন । এই সব ছেলেমেয়েদের স্বার্থপরতা ও রাগের কথার সম্মুখে ইয়াং মেই মায়ের সহিষ্ণুতা ও ভালবাসা দিয়ে তাদের মুগ্ধ করার চেষ্টা করেন । হাই ওয়া নামে এক ছেলে তার মনে সবচেয়ে গভীর রেখাপাত করেছে । হাই ওয়া এক সুন্দর ও বুদ্ধিমানছেলে । তার বয়স যখন আট বছর সেই সালে বাবা ও মার মধ্যে কিছু বিরোধ হওয়ায় বাবা অসাবধানে মাকে মেরে ফেলেন । বাবাকে কারাদন্ড দেয়া হয় । ঘটনাটি হাই ওয়ার মনে সাংঘাতিকভাবে আঘাত হেনেছে । হাই ওয়া এক আনন্দময় ও স্ফূর্ত ছেলে থেকে একটি অমিশুক ও খামখেয়ালী ছেলেতে পরিণত হয় । সে সম্পর্কে হাই ওয়া বলেছে, সে ঘটনা ঘটার পর আমি বাবাকে খুব ঘৃণা করি। তিনিই আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করেছেন । অন্য ছেলেমেয়েরা বাবামার ভালবাসা ও আদর পায় কিন্তু আমার নেই । আমি তাদেরকে ইর্ষা করি এবং আত্ম-হীনতা বোধ করি ।

    " উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসা" নামে শিশু গ্রামের মায়েরা নিজেদের ভালবাসা দিয়ে এই সব ছেলেমেয়ের মনের দুঃখ নিরসন করার প্রচেষ্টা চালাবেন । তাঁরা কমবয়সী ছেলেমেয়ের জন্য হাতমুখ ও পা ধুয়ে দেন । মায়ের মতো তাদের গল্প শোনান এবং তাদের ঘুম পাড়ান । কোনো শিশুর অসুখ হলে মায়েরা অধীর হবেন এবং সারা রাত তার পাশে বসে থাকবেন । এই বিশেষ বড় পরিবারের জন্য মায়েরা নিজেদের সব ভালবাসা দান করেন ।

    এখন ভালবাসাপূর্ণ মায়েদের স্নেহে শিশু গ্রামের ছেলেমেয়েরা সুষ্ঠু ও আনন্দের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠে ।এই বিশেষ বড় পরিবারের সাহায্যে তারা ভালবাসার অর্থ বুঝেছে । অন্য লোককে ভালবাসা করতে এবং তাদের যত্ন নিতে শিখেছে। মায়েদের শিক্ষায় ছেলেমেয়েরা দুঃখের অতীতকে নতুন করে চিনে ফেলেছে । সঠিকভাবে নিজেদের বাবা ও মাকে দেখতে শিখেছে । তারা বাবা মাকে নিজেদের ঘৃণা পরিবর্তন করে ভালবাসা ও উত্সাহ দিতে শুরু করেছে ।

    ছেলেমেয়েদের পরিবর্তন শিশু গ্রামের স্নেহময় মায়েদের সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার । আরেকটি আনন্দের ব্যাপার হল , শিশু গ্রামের ছেলেমেয়েদের পরিবর্তন ধীরেধীরে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । বিভিন্ন স্তরের গণ সরকার , দাতব্য সংস্থা ও ব্যক্তিদের প্রদান করা অর্থ ও জিনিসপত্র এই বিশেষ পরিবারে পাঠানো হচ্ছে । শিশু গ্রাম এখন তত ধনী না হলেও ফান তু খুব সন্তুষ্ট । তিনি বলেন , মাথা তুলে ধরে আমাদের বাইরের বিশ্ব দেখো এবং সাহায্য ও যত্ন প্রয়োজন এমন লোকজনের যত্ন নাও । ঘৃণা করার চেয়ে ভালবাসা এবং গ্রহণ করার চেয়ে দান করা ভাল । ভালবাসা দিলে ভালবাসা পাবে এবং সুখ দান করলে সুখ পাবে । যারা ভালবাসা দান করেন তাদের কাছে ভালবাসা ফিরে আসবে ।

    ফান তু বলেছেন, উপকূলীয় এলাকায় ভালবাসার অর্থ হল, শিশু গ্রামের জীবনযাত্রা সমুদ্রের পানির মতো ছেলেমেয়েদের হৃদয়ের তিক্ত স্মৃতি মুছে ফেলবে এবং সমুদ্রের মতো উদার হৃদয় দিয়ে তাদের গ্রহণ করবে বলে আশা করি । যাতে তারা পুনরায় সুখের শিশুকাল উপভোগ করবে এবং তাদের আনন্দের চেহারায় আর অশ্রু দেখা যাবে না ।