ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি ৯ আগস্ট ইরানে তাঁর দু'দিনব্যাপী সফর শেষ করেছেন। সফরকালে মালিকি পৃথক পৃথকভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ্ আলী খামেনী, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট পারভেজ দাভৌদি, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কমিটির সচিব আলি লারিজানি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মনোছের মোত্তাকিসহ ইরানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গোটা দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, মালিকির এবারের সফর সাফল্যমন্ডিত হয়েছে। কারণ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জ্বালানি সম্পদ সরবরাহসহ ইরাকী জনগণের মনোযোগী সমস্যাগুলোতে ইরান ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
মালিকির এবারের ইরাক সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ইরাকের নিরাপত্তা সমস্যার প্রতি ইরানের যথাসাধ্য সমর্থন অন্বেষণ করা এবং ইরাকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন করা। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট দাভৌদির সঙ্গে বৈঠক করার সময়ে মালিকি স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাঁর এবারের ইরান সফরের উদ্দেশ্য হলো ইরানের সাহায্য নেয়া এবং যৌথভাবে বর্তমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা।
ইরাকের নিরাপত্তা সমস্যা খুব জটিল, এর নানা কারণ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের সশস্ত্র ব্যক্তিদেরকে ইরান অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে। ইরান জোর দিয়ে বলে যে, বর্তমানে ইরাকের নিরাপত্তা অবস্থার মূল কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দখল। সুতরাং যদিও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে তিন বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এর কোন বাস্তব অগ্রগতি হয় নি। এবার ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় মালিকি ইচ্ছা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের অসংগতি এড়িয়েছে। তিনি কেবল বলেছেন, ইরাকের নিরাপত্তা রক্ষা করা ও সন্ত্রাসবাদীদের ওপর আঘাত হানার ক্ষেত্রে ইরান সক্রিয় ও গঠনমূলক কাজ করেছে। এ জন্য তিনি তার কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো বলেছেন, ইরাক সরকার মার্কিন বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত পাঁচ জন ইরানী কূটনীতিবিদকে মুক্তি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তাগিদ দেয়ার চেষ্টা করবে।
মালিকির মনোভাবের ওপর ইরান খুব সন্তুষ্ট। ইরান ইরাকের পুনর্বাসন ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার সাহায্য করতে ইচ্ছুক। বৈঠকে ইরানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পারভেজ দাভৌদি বলেছেন, ইরান সর্বদাই ইরাকের নিরাপত্তা অবস্থা উন্নয়নের সাহায্য করে আসছে। কারণ ইরাকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন হলে ইরান ও গোটা অঞ্চলে কল্যাণ বয়ে আনবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ বলেছেন, ইরান ও ইরাক উভয় অঞ্চলই শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব বহন করে। এখন এই অঞ্চলের পরিস্থিতি খুব স্পর্শকাতর। ইরান মনে করে, এই অঞ্চলের ভবিষ্যত ইরাকের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে।
মালিকির এবারের সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানো, বিভিন্ন ক্ষেত্র, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা জোরদার করা।
বৈঠকে ইরানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট দাভৌদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ইরান অব্যাহতভাবে শীতকালে ইরাকী জনগণের জন্য গরম ব্যবস্থা সরবরাহ করবে। তিনি আরো বলেছেন, ইরান ইরাকের কারবালায় একটি তৈল শোধনাগার স্থাপন করবে। তা ছাড়া ইরান ও ইরাক তেল পাইপ পরিবহনের একটি চুক্তি ও স্বাক্ষর করবে। এই পাইপ লাইন ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের শহর আবাদান থেকে ইরাকের বসরা পর্যন্ত যাবে। এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইরান ইরাক থেকে সরাসরি অশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে, তারপর পেট্রোলিয়াম পণ্য ইরাকী জনগণের কাছে সরবরাহ করবে, যাতে জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে তাঁদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। তা ছাড়া, ইরান ইরাকের শিল্প স্থাপনা উন্নয়নের জন্য ইরাককে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে।
জনগণ লক্ষ্য করেছে যে, মালিকি ইরান সফর করার পাশাপাশি ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সমন্বয় কমিটির অধিবেশন ৮ আগস্ট সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে প্রধানতঃ ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ইরাক ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইরানের প্রতিনিধিও এই অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। বুঝা যায়, ইরান নিজের পদ্ধতিতেই ইরাকের বর্তমান সংকট সমাধানে সাহায্য করছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|