v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-03 19:45:48    
গ্রামীণ নারী চু চানসিয়াংয়ের গাছ লাগানো জীবন

cri
    চু চানসিয়াং হেইলুংচিয়াং প্রদেশের লিনখৌ জেলার চুচিয়াং থানার ফুশান গ্রামের অধিবাসী । ১৯৭৮ সালে চু চানসিয়াং ও স্বামী গ্রামীণ সরকারের কাছে ৫০ ইউয়ান ধার নিয়েছিলেন । এই ৫০ ইউয়ান দিয়ে তারা এক সাদাসিধা বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন । তখনকারে গ্রামীণ সরকারের এক নিয়ম ছিল যে , পাহাড়ে গাছ লাগালে এবং গাছের সংখ্যা অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করা যায় । তাই এ নিয়ম অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী দুজন গাছ লাগিয়ে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন । সে সময় থেকে চু চানসিয়াং তাঁর গাছ লাগানো জীবন শুরু করলেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন , গাছ লাগানোর প্রথম দিকে কচি গাছ এক বছরে ৮০-৯০ সেনটিমিটার বেড়ে যায় দেখে আমি অত্যন্ত উত্সাহিত হই । তাই সুযোগ পেলে আমি অনাবাদী পাহাড়ে গাছ লাগিয়ে দিতাম ।

    ১৯৮৫ সালে চুচিয়া থানার ফুশান গ্রামে ঠিকাদারী ব্যবস্থা চালু হয় । এর অর্থ হল, জমি কৃষকদের বন্টন করে দেয়া এবং তাদেরকে ইচ্ছামতো জমি চাষ করতে অনুমোদন দেয়া । সে সময় কৃষকরা রোজই কোদাল নিয়ে জমি চাষ করতে যেতেন । কিন্তু চু চানসিয়াং রোজ ভোরে কোদাল নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে গাছ লাগাতেন। গাছ লাগানোর জন্য ১৯৮৮ সালের বসন্তকালে চু চানসিয়াং নিজের জমি প্রতিবেশীকে বর্গাদিলেন । তিনি পরিবারসহ ফুশান গ্রাম থেকে পাহাড়ে বাড়ি স্থানান্তর করলেন । তখন পাহাড়ে কোনো বাড়িঘর ছিল না । স্বামী-স্ত্রী দুজন ভূগর্ভে দুটি ঘর বানালেন । ঘরে বাতি ছিল না , বেতার অনুষ্ঠান শোনা যেতো না এবং টেলিফোন ছিল না । কিন্তু চু চানসিয়াং ও তাঁর পরিবার এমন ঘরে থাকতেন । কচি গাছের সাথে থাকতেন ।

    উত্তর চীনের বসন্তকাল অতি স্বল্প সময়ের । চু চানসিয়াং সাধারণত মোরগের প্রথম ডাকার সময় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে গাছের চারা দেখাশোনা করতেন এবং সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসতেন । পাহাড়ে গাছের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যায় । এ সময় চু চানসিয়াংয়ের শরিরের অবস্থা দিনদিন খারাপ হয় ।

    এক বছরের বসন্তকালে চু চানসিয়াংয়ের পাকস্থলীতে ব্যথা হয় । কিন্তু সে সময় গাছ লাগানোর ঋতু । তিনি ব্যথা সহ্য করে পাহাড়ে গাছ লাগানোর কাজে অটল থাকেন । পাকস্থলীতে এত ব্যথা ছিল যে আর সহ্য করতে না পারায় তিনি বাধ্য হয়ে হাসপাতালে যান । পরীক্ষার ফলাফলে সন্দেহ করা হয় যে ,তিনি পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত । খবরটা শুনে তিনি হাসপাতাল থেকে স্বামীকে টেলিফোন করে নিজের শেষ কথা বললেন । তিনি বলেছেন , " গাছগুলো আমি লাগিয়েছি । আমার সবচেয়ে সুন্দর সময় পাহাড়ে কাটিয়েছি । মরে যাওয়ার পর আমার ছাই পাহাড়ে ছড়িয়ে দাও । যাতে জীবিত থাকাকালে আমি পাহাড়কে ভালবাসতাম মরে যাওযার পরও আমি পাহাড়কে রক্ষা করব ।

    আরেকবার পরীক্ষার পর চিহ্নিত হয় যে চু চানসিয়াং ক্যান্সারে আক্রান্ত নন তিনি গ্যাস্ট্রাইটিসে আক্রান্ত । নিজে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হননি কথাটা শোনার সঙ্গেসঙ্গে চু চানসিয়াং পাহাড়ে ফিরে যান । তিনি বলেছিলেন , গাছ লাগানোর এক মিনিটের মূল্যবান সময়ও তিনি নষ্ট করতে চান না ।

    গাছ লাগানো এবং চারা চাষ করা একটি কৌশলসম্পন্ন কাজ । লেখাপড়া করেননি চু চানসিয়াংয়ের পক্ষে এটা এক সহজ কাজ নয় । এ জন্য চু চানসিয়াং বিশেষজ্ঞের কাছে চারা চাষ সম্পর্কিত কলাকৌশল শিখে নেন । চারার সজীবতা রক্ষার জন্য চু চানসিয়াং এক নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন । আগামী বসন্তকালে তার পদ্ধতিতে সংরক্ষিত গাছের চারাগুলোর উদ্বর্গামীনতার হার অপরিবর্তনীয় তাপমাত্রায় সংরক্ষিত চারার চেয়ে বেশি ।

    এর পর নিজের চাহিদাপূরণ ছাড়া চু চানসিয়াংয়ের চারা অন্য থানার গ্রামবাসীদেরকেও সরবরাহ করা হয় । এ সম্পর্কে লিনখৌ থানার বন বপন কেন্দ্রের প্রধান মেই চিয়েনচি বলেন, লার্চজাতের পাইন গাছের চারা চাষ করা ছাড়া এখন চু চানসিয়াং কোরিয়াং পাইন সহ বেশ কয়েকজাতের পাইন গাছের চারা চাষ শুরু করেছেন । এথেকে তার বেশ ভাল আয় হয় ।

    চারা চাষের কৌশল আয়ত্তের পর চু চানসিয়াংয়ের আর্থিক অবস্থা দিন দিন উন্নত হয়েছে । তবে তিনি সন্তুষ্ট হননি । তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিলে অনাবাদী পাহাড়কে সবুজ পাহাড়ে পরিণত করেছেন । তার বিনাশর্তে সাহায্যে গ্রামবাসীদের জীবনযাপনও দিনদিন ভাল হয়েছে । এ সম্পর্কে গ্রামবাসী ইউয়ু ছিংচিয়াং বলেছেন, তিনি বিনাখরচে আমাকে ২০০০টি চারা দিয়েছেন। আমি তাঁকে খুব কৃতজ্ঞ । তাঁর কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে ।

    চু চানসিয়াংয়ের সাহায্যে গাছ লাগানোর মাধ্যমে ফুশান গ্রামের প্রতিটি পরিবারের আর্থিক অবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে ।

    চু চিয়া থানার বনের আবৃতির হার ৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । চীনের বন মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৯ বছরে চু চানসিয়াং প্রায় ১৫০ হেক্টর আয়তনের পাহাড়ে ৩ লাখ গাছের চারা লাগিয়েছেন । তার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় এক কোটি রেনমিনপিতে দাঁড়িয়েছে । চু চানসিয়াংয়ের ২৯ বছরের প্রচেষ্টায় এই অনাবাদী পাহাড় এক সবুজ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে । বন থাকার কারণে এই এলাকায় আগের মতো এখন পাহাড় ধ্বসে পড়া বা কাদা মাটি ও পাথরের প্রবাহ হয়নি ।

    এখন প্রতি সন্ধ্যার সময় চু চানসিয়াং ও স্বামী নিজের নতুন বাড়ির সামনে বসে চার দিকের সুন্দর দৃশ্য দেখেন । আপনারা যে গানটি শুনছেন সেটা চু চানসিয়াংয়ের স্বামীর গাওয়া গান । গানটির কয়েক কথা এমনি , বসন্তকাল এসেছে । পাহাড়ের সর্বত্রই লাল ফুল ফুটেছে । আমি সারা জীবনে গাছ লাগাই । আমি গাছ লাগিয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে চাই ।