মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস ২ আগস্ট ফিলিস্তিন ও ইসরাইলে তার স্বল্পকালীন সফর শেষ করেছেন। জনমত লক্ষ্য করেছে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকার ২ বছরের মধ্যেই রাইস বহু বার ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সফর করেছিলেন। আগের সফরে রাইস একাধিকবার জোর দিয়ে বলেছেন, তার সফর 'শোনা'র জন্য, মানে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দু'দেশের অবস্থানকে উপলব্ধি করা। বরং এবারের সফরে তিনি একাধিকবার উভয় পক্ষকেই 'কার্যকর' আলোচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রস্তাবিত মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায়। এ থেকে দেখা যায় যে, রাইস তার নির্দিষ্ট তত্পরতা শুরু করেছেন।
বর্তমান অবস্থা থেকে দেখা যায়, রাইসের এবারের সফরের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি বৈঠক চালানো সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সব সময় ইসরাইলের সঙ্গে সীমান্ত, জেরুজালেমের অবস্থান ও ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকারসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। তবে ইসরাইল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এবার রাইসের মধ্যস্থতায় দু'দেশ এ ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ২ আগস্ট আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে রাইস বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট ফিলিস্তিনের সঙ্গে কিছু 'মৌলিক সমস্যা' নিয়ে সংলাপ চালাতে রাজী হয়েছেন। এবং আব্বাসও এর আগে ওলমার্টের উপস্থাপিত চূড়ান্ত মর্যাদামূলক সমস্যা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার পূর্বেই, দু'দেশ প্রথমে একটি 'নীতিগত ঘোষণা' স্বাক্ষর করে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে রাজী হয়েছেন।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের এ আপোস দু'দেশের মধ্যে মধ্য-প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার আগেই আরো বেশী আলোচনা চালানোর জন্য পথ সুগম করেছে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ মধ্য-প্রাচ্য সমস্যার ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যায়। সম্ভবতঃ সম্মেলনটি চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ২ আগস্ট রাইস রামাল্লায় বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বুশের এবারের সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান শুধুমাত্র সম্মেলন আয়োজন করার জন্য অথবা একটি গ্রুপ ছবি তোলার সুযোগের জন্য নয়, বরং তিনি আশা করেন যে, সম্মেলনে সারগর্ভ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং সত্যিকারভাবেই তা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে ত্বরান্বিত করতে পারবে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ইতিবাচক আলোচনা আয়োজন করতে এবং একটি 'মৌলিক চুক্তি'-তে পৌঁছানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো নিশ্চিত করতে সাজী হয়েছে। এটি সম্মেলনের সাফল্যের জন্য ভিক্তি স্থাপন করবে।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল আলোচনা ত্বরান্বিত করার জন্য সফরকালে রাইস অনেক কাজ করেছেন। ইসরাইলে তিনি দু'দেশের প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মধ্য-প্রাচ্য শান্তি বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। ফিলিস্তিনে তিনি ফিলিস্তিনের নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সকল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যাতে ইসরাইলের সঙ্গে সম্প্রতি গঠিত নতুন সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগকে সমর্থন করা যায়। তিনি ফিলিস্তিনের নতুন সরকারকে নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারের জন্য ৮ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছেন।
বিশ্লেষকগণ উল্লেখ করেছেন, যদি রাইস ফিলিস্তিন ও ইসরাইলকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'মৌলিক' কাঠামোয় পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে অচল ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য তা হবে নিঃসন্দেহে এক বিরাট পদক্ষেপ যেমন আব্বাস বলেছেন, কমপক্ষে ফিলিস্তিনের জনগণ ভবিষ্যতে তাদের দেশ কী রকম হবে তা দেখতে পারবেন। এর পাশাপাশি বিশ্লেষকগণ মনে করেন, রাইসের এ সব তত্পরতা অর্ধশতাব্দীরও বেশী সময়ের ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ সমাধানে সীমিত ভুমিকা নেবে। যদিও ফিলিস্তিন ও ইসরাইল এ দুটি দেশ 'মৌলিক চুক্তি'-তে পৌঁছাতে রাজী হয়েছে, তবুও দু'দেশের দ্বন্দ্বের মূল সমস্যা, যেমন জেরুজালেমের অবস্থান ও শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকারসহ বিভিন্ন সমস্যা, পুরোপুরিভাবে সমাধান হয় নি। এসব সমস্যা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। ভবিষ্যতে এ সব মূল সমস্যার ব্যাপারে দু'দেশের মতভেদ বজায় থাকলে এর আগে গৃহীত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে গাজা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হামাসকে নিঃসংগ করবে, তাও ফিলিস্তিন দেশ প্রতিষ্ঠার সহায়ক হবে না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট স্পষ্টভাবে উত্থাপন করেছেন যে, 'হামাসকে উড়িয়ে দিতে হবে'। কিন্তু হামাস অভিযোগ করেছে যে, রাইস ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়, বরং ফিলিস্তিনের বিভক্তি দ্রুততর করার জন্যে এসেছেন। হামাসের সহযোগিতা ছাড়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল হবে এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইলের শান্তি বাস্তবায়নও হবে খুব কঠিন।
|