v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-02 20:13:41    
তিব্বতের চাংমু বন্দরে সমৃদ্ধ চীন-নেপাল সীমান্ত বাণিজ্য

cri

    বন্ধুরা, চাংমু চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পশ্চিম দিকে ৭শো কিলোমিটার দূরে হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর চীনের চাংমু। চাংমুর পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চল নেপালের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতি বছর এ অঞ্চলের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের পরিমান ১০ কোটিরও বেশি ইউয়ান হয়। এরফলে শুধু ৭০ বর্গ কিলোমিটারের চাংমু থানার অর্থনীতি আজ অনেক সমৃদ্ধ। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে চাংমুর চীন-নেপাল সীমান্ত বাণিজ্যর কিছু কথা বলবো।

    চাংমু হল নিয়েলামু জেলার একটি থানা। যদিও চাংমু ও নিয়েলামুর মধ্যে দুরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। তবুও চাংমুর সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতা নিয়েলামুরের চেয়ে অন্তত ২হাজার মিটার কম। সেজন্য চাংমু বন্দরের প্রাকৃতিক দৃশ্য তিব্বতের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক ভিন্ন। পাহাড় ঢালু ও উদ্ভিদ সমৃদ্ধ।

    কিন্তু এ ছোট থানার পাহাড়ের গায়ে শুধু ১০মিটার চওড়া সীমান্ত পথে প্রতিদিন কয়েক শো চীন ও নেপালের বাণিজ্যিক পণ্যদ্রব্য পরিবহন ট্রাক আসা-যাওয়া করে। চাংমু স্থল বন্দর পরিচালনা কমিশনের উপপরিচালক লাবাছিরেন বলেছেন, ১৭৯২ সাল থেকেই চীন ও নেপালের নাগরিকরা সীমান্ত বাণিজ্য করতে থাকে। ১৯৮৩ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে চাংমুতে জাতীয় প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্যিক স্থল বন্দর নির্মাণ করে। বর্তমানে, চাংমু স্থল বন্দরের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মোট পরিমাণের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি। তিনি বলেছেন, 'চাংমু বন্দরে রফতানিকৃত পণ্যদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে প্রধানত: পোষাক, জুতা ও নিন্ত্র প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য। এছাড়াও, ফল, রসুন ও বাড়িতে ব্যবহৃত ছোট ইলেকট্রোনিক পণ্যদ্রব্য। আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, ভোজ্য তেল, ও পিতলের পাত্রসহ অন্যান্য ।'

    তিনি আরো বলেছেন, চাংমুর ভূ-সংস্থান মানচিত্রর কারণে আবাদী জমি কম। নাগরিকরা প্রধানত সীমান্ত বাণিজ্য ও ঘর ভাড়া দিয়ে উপর্জন করে থাকে। ২০০৬ সালে চাংমু থানার মাথা পিছু আয় ৬হাজার ৭শো ইউয়ান রেনমিপি। কোনো কোনো ব্যবসায়ী প্রতি বছর ২ ও ৩ লাখ ইউয়ান রেনমিনপি আয় করে থাকে।

    চাংমু থানায় সড়কগুলোর দু'পারে ঘনিষ্ঠ দু ও তিন তলা বারিঘর রয়েছে। এসব বারিঘরের প্রথম তলা দোকান ও হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব দোকানে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য বিক্রী হয় এবং বেশির ভাগ হল ভারত ও নেপালের খাদ্য ও কারা শিল্প পণ্য।

    নেপালের দোকানদার নাঁমগিয়াল বলেছেন, তিনি প্রতি বছর নেপালের চেয়েও চাংমুতে বেশি থাকেন। তিনি বলেছেন, '১৯৭৯ সাল থেকে আমি চাংমুতে ব্যবসা করি। আগে আমি সড়কে পণ্যদ্রব্য বিক্রী করতাম এবং আমার ব্যবসা ভাল ছিল না। এখন পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে। আমি দোকান ভাড়া নিতে পারি এবং অতিথির সংখ্যাও বেশি হয়েছে। চাংমু চীন-নেপাল সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত, এখান থেকে আমার বাড়ি যেতে শুধু এক দিন লাগে। এখানে ব্যবসা ভাল, আমি এক বছরে প্রায় ১.৫ লাখ ইউয়ান রেনমিনবি আয় করতে পারি।'

    তিনি আরো বলেছেন, তাঁর অতিথিরা প্রধানত চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসা ও শিগাটস থেকে এসেছেন। তাঁর পণ্যদ্রব্যের মধ্যে যেমন নেপালের চাল, চিনি ও চকলেট খুবই জনপ্রিয়। তিনি বলেছেন, তিব্বতী জাতি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করে তিনি ভালভাবে তিব্বতী ভাষা বলতে পারেন। এখন তিনি হান ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। কারণ অধিক থেকে অধিকতর চীনের অন্যান্য স্থানের মানুষ পর্যটন ও ব্যবসা করে চাংমুতে এসে। তিনি সিআরআই'র সাংবাদিকদের কাছে কিছু হান ভাষায় নিজের পণ্যদ্রব্যের ব্যাখ্যা করেছেন। 'এ পানীয় এক পোটি ৪৫ ইউয়ান রেনমিনপি, এ বিস্কুট এক ব্যাগ ১২ ইউয়ান রেনমিনপি, এ ধরণের জিনিস ১১ ইউয়ান, সেটা অর্ধেক কেজি ৮ ইউয়ান ও চিনি অর্ধেক কেজি ২ ইউয়ান।'

    এতক্ষণ আমি চাংমু থানায় চীন-নেপাল সীমান্ত অঞ্চলে দু'দেশের নাগরিকদের বাণিজ্যের কথা বললাম। এখন আমি আপনাদেরকে নিয়ে চীন-নেপাল সীমান্তে মৈত্রী সেতুতে যাবো। এখানে সীমান্ত বাণিজ্য চাংমুর চেয়ে আরো সমৃদ্ধ। সেতুর দু'পারে পৃথক পৃথকভাবে দু'দেশের দকান ঘনিষ্ঠ রয়েছে। চীনের দোকানগুলোয় প্রধানত নিত্র প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বিক্রী হয়। যেমন, পরিবারে ব্যবহৃত ছোট ইলেকট্রোনিক পণ্যদ্রব্য, তিব্বত ঐতিহ্যিক গালিচা, কাগজ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্য। কিন্তু নেপালের দোকানগুলোয় প্রধানত আডিও-ভিডিও ও হস্তশিল্পজাত পণ্যদ্রব্য বিক্রী হয়।

    নেপালের পণ্যদ্রব্য বিক্রী করা একজন তিব্বতী জাতির মেয়ে জাসিইউচেন এখানে ১০ বছর ধরে ব্যবসা করেন। তাঁর দোকানে অনেক নেপালে তৈরী ব্রোন্জের বুদ্ধ মূর্তী, রাপার পণ্য ও কারা শিল্প পণ্য বিক্রী হয়। তিনি বলেছেন, 'আমার পণ্যদ্রব্যের বেশির ভাগ নেপালের কাঠমুন্ডু থেকে কেনা। এখান থেকে কাঠমান্ডু যেতে মাত্র চার ঘন্টা দরকার। আমার অতিথিদের বেশির ভাগ হল লাসা ও অভ্যন্তরভাগের পর্যটক। গত এপ্রিল মাস থেকে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ কয়েক বছরে আমার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। আগে প্রতি বছর আমার আয় শুধু ৩০ থেকে ৪০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি ছিল, কিন্তু এখন ২লাখেরও বেশি হয়।'

    তিনি আরো বলেছেন, এখন একটি দোকান আমার ব্যবসার জন্য যথেষ্ট নয়, সেজন্য আমি আরেকটি দোকান খুলবো। আগামী বছরে আমি আমার ব্যবসা বাড়াবো।

    এসব ছোট দোকানে চীন ও নেপালের সাধারণ পণ্যদ্রব্যগুলো দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করে এবং দু'দেশের নাগরিকদের অনেক সুবিধা দেয়। আমরা আশার করে, চীন নেপাল এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ চাংমুর সীমান্ত বাণিজ্যের মত দ্রুত উন্নীত হবে।