অধিকাংশ ভারতীয় মানুষের জন্য, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা তাদের তিনটি জিনিস রেখে গেছেঃ তাহলো ইংরেজী ভাষা, সংসদ ও রেল-পথ। এর মধ্যে, রেল-পথ নির্মাণ হচ্ছে ভারতের জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবিকার সঙ্গে এমনকি সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অনুকূল ব্যাপার। ১৮৫৩ সালে এশিয়ার প্রথম ট্রেন মুম্বাই স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। পরের ১৪০ বছরে ভারত 'এশিয়ার রেল-পথ নেটওয়ার্ক প্রথম সারির দেশ' ও 'বিশ্বের রেল-পথের মধ্যে সবচে' বেশী দৈর্ঘ্যের দেশে পরিনত হয়েছে। চার দিকে ছড়িয়ে থাকা রেল-পথ নেটওয়ার্ক ভারতের শহর ও গ্রামকে যুক্ত করার পাশাপাশি, বিভিন্ন ভাষা, রীতিনীতি ও ধর্মেরও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হয়েছে।
ভারতের রেল-পথের উন্নয়নের ইতিহাস উপলব্ধি করতে চাইলে, সবচে' ভালো জায়গা হচ্ছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর কেন্দ্রে অবস্থিত রেল-পথ যাদুঘর। ভারত সরকার ১৯৭৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে যাদুঘর চালু করে, এ পর্যন্ত এশিয়ার রেল-পথের এটাই একমাত্র যাদুঘর। যাদুঘরের আয়তন ৪৫ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশী। এতে একটি বৃহদাকার আভ্যন্তরীণ প্রদর্শনী ঘর, প্রাচীন ও পুরানো বগি আর রেল লাইনের বেলের পাতি এবং রেল লাইনের ওপর দক্ষিণ এশিয় উপমহাদেশের ট্রেন রয়েছে। এ সব কিছুই আগের ইতিহাসের কথা বলছে।
নয়াদিল্লীর রেল-পথ যাদুঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন হচ্ছে এখনও যাত্রীসেবা দেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিন—কাসিওপেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিন। এটা হচ্ছে যাদুঘরের একমাত্র কাজ লাগানো ট্রেন। ১৮৫৫ সালে, কাসিওপেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিন ব্রিটেন থেকে ভারতে আসে এবং পূর্ব ভারতের কোম্পানির রেল লাইনে প্রথম যাত্রা শুরু করেছিলো। ১৯০৮ সালে, কাসিওপেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিলো, পরে ১৯৯৭ সালে, এই ট্রেন আবারও যাত্রীসেবা শুরু করেছে যাদুঘরের ২০তম বার্ষিকীতে। সে দিন থেকেই প্রতি শনিবার ও রবিবার কাসিওপেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিন দশ বারোটি বগিতে পর্যটকদের নিয়ে নয়াদিল্লী থেকে রাজস্থানে যায়। ফলে কাসিওপেয়া বাষ্পচালিত রেল ইনজিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ট্রেন হিসেবে গীনেস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
যাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের রেল লাইন ও বাষ্পচালিত রেল ইনজিন রয়েছে এবং এ সব হচ্ছে বর্তমানে ভারতের রেল পথ চালু হওয়ার সত্যিকারের ঐতিহাসিক প্রতিফলন।
২১ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে, ভারতের রেল পথের মোট মাইলফলক ও মাথাপিছু রেল পথের মাইলফলক অধিকার করা দুটো লক্ষ্যমাত্রাই চীনের চেয়ে কম। প্রশাসন ও সাজ-সরঞ্জামের কারণে রেল পথের সড়ক দুর্ঘটনা ভারতের রেল পথকে গুরুতর প্রভাবিত করছে। যেকোন প্রকারে, ভারতের রেল পথের দেড়শ' বছরের ইতিহাস এখনও মানুষের সম্মান ও যত্ন পাচ্ছে।
|