ইরাকের বৃহত্তম সুন্নিপন্থী রাজনৈতিক দল - ইরাকী অ্যাকোর্ডেন্স ফ্রন্ট গত বুধবার মালিকির নেতৃত্বাধীন ঐক্য সরকার থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । ফলে মালিকির নেতৃত্বে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রক্রিয়া গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । একই সময় ইরাকের শৃংখলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয় নি । বুধবার বাগদাদে সংঘটিত আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৭০জন নিহত ও প্রায় এক শ' লোক আহত হয়েছে । বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , মালিকির নেতৃত্বাধীন ঐক্য সরকার ইতোমধ্যে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে , এমন কি ভেংগে যাওয়ার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে ।
জাতীয় সংসদের ২৭৫ টি আসনের মধ্যে ইরাকী আকোর্ডেন্স ফ্রন্টের ৪৪টি আসন রয়েছে ।সুতরাং সংসদে এর কিছু প্রভাব রয়েছে । সেই এক সাপ্তাহ আগে সুন্নিপন্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক আল-হাশেমীর নেতৃত্বাধীন এ রাজনৈতিক জোট মালিকির কাছে কিছু দাবি উত্থাপন করেছিল । এ দাবিগুলো হলো : নিরাপত্তার কারণে আটকে রাখা ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়া , গণ মিলিশিয় জংগী দলকে ভেংগে দেয়া , মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ফ্রন্টকে সুযোগ দেয়া । ফ্রন্ট বলেছিল , তাদের দাবি গ্রহণ না করলে ফ্রন্টের অধীন মন্ত্রিসভার ৬জন সদস্য ঐক্য সরকার থেকে সরে আসবেন । যেহেতু মালিকি তার এ দাবিগুলো গ্রহণ করেন নি , সেহেতু ফ্রন্ট বুধবার মালিকি সরকার থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে । এ রাজনৈতিক জোটের অধীন মন্ত্রিসভার উপপ্রধানমন্ত্রী ও অন্য ৫জন মন্ত্রী মালিকির কাছে তাদের পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন । ইরাকী আকোর্ডেন্স ফ্রন্ট সতর্ক করে বলেছে যে , অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা না থাকলে তারা গোটা রাজনৈতিক সমঝোতার প্রক্রিয়ায় শামীল থাকার সম্ভাব্যতা পুনর্বিবেচনা করবে ।
ইরাকের ঐক্য সারকারের ভেংগে যাওয়া এড়ানোর জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের কর্মকর্তারা সম্প্রতি বিভিন্ন মহলের মধ্যে বোঝাপড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে , যাতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর উপায় খুঁজে বের করা যায় । অথচ বিশ্লেষকরা বলেছেন , এসব তত্পরতার সাফল্য খুবই সীমিত । তাদের প্রচেষ্টা ইরাকের ঐক্য সরকারের গুরুতর সংকটের পরিবর্তন করতে পারে নি।
প্রথমত: ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে । এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে । ইরাকের অসুবিধাজনক অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্যে বুশ সরকার আশা করেছে যে , সৈন্য বাড়ানোর মাধ্যমে ইরাকের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ড বন্ধ করা যাবে এবং বিভিন্ন দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে মালিকি সরকারের জন্যে কিছু সময় বাঁচানো যাবে । বর্তমানে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈনিকদের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে । তবে যুক্তারাস্ট্রের সৈন্য বাড়ানোর পরিকল্পনা ইরাকের সহিংস ঘটনাকে রোধ করতে পারে নি । নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি অনিবার্যভাবে রাজনৈতিক সংকটকে আরো গভীরতর করেছে ।
দ্বিতীয়ত: ইরাক সরকারের ভেতরে বিভিন্ন দলের মধ্যে মনোমালিন্য তীব্র আকার ধারণ করেছে । ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পর সাদ্দামের সময়কার স্বার্থগত কাঠামো ভেংগে গেছে। জ্বালানীর স্বার্থ , রাজনৈতিক ক্ষমতা বন্টন ও সেনাবাহিনীর সংস্কারের মত সমস্যায় শিয়াপন্থী , সুন্নিপন্থী ও কুর্দসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । অথচ এসব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় মালিকির নেতৃত্বাধীন ঐক্য সরকার কিছু করতে পারে নি ।
তৃতীয়ত: মার্কিন-ইরাক সমন্বয় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে । যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ইরাক সমস্যায় মতভেদ আরো প্রকট হয়ে উঠেছে । ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র পর পর ১৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার ইরাকী সৈনিক ও পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে । অথচ ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী আজ পর্যন্তও কার্যকরভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , যদি বিভিন্ন দল সদিচ্ছা নিয়ে পিছ পা না হয় ,তাহলে মালিকি সরকার আরো গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে ।
|