v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-08-01 19:15:48    
চীনা গণ মুক্তি ফৌজের সৈনিক ফান তা ছুয়ানের একদিন

cri
১ আগস্ট চীনা গণ মুক্তি ফৌজের ৮০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । আজকের অনুষ্ঠানে আমি শি চিং উ আপনাদেরকে চীনা গণ মুক্তি ফৌজের সবুজ সামরিক শিবিরে নিয়ে যাবো এবং ফান তা ছুয়ান নামক একজন চীনা সৈনিকের সংগে পরিচয় করিয়ে দেবো । সেখানে আপনারা চীনা সৈনিকদের সাধারণ জীবন সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারবেন ।

ভোর ৬টায় ফান তা ছুয়ান ও তার সহযোদ্ধারা বিছানা থেকে উঠার সংগে সংগে একদিনের অনুশীলন শুরু করেন । তারা হলেন চীনা গণ মুক্তি ফৌজের কোনো একটি ইউনিটের সাজোয়া গাড়ি মেরামতের কাজে নিয়োজিত সৈনিক । প্রতিদিন নাস্তার আগে তারা এক ঘন্টা ধরে শারীরিক ও লাইনগত অনুশীলনে অংশ নেন । ঝড় হোক , বৃষ্টি হোক , এর কোনো ব্যতিক্রম নেই ।

স্থল বাহিনীর এসব তরুণ সৈনিকের দায়িত্ব হচ্ছে ট্যাংকসহ তাদের ইউনিটের যাবতীয় সাজোয়া গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা , যাতে এ সাজোয়া গাড়ীগুলো অবাধে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ ও লড়াইয়ের কর্তব্য সম্পাদন করতে পারে । যদি বলা হয়ে থাকে যে , সামরিক চিকিত্সকদের দায়িত্ব হচ্ছে সৈনিকদের রোগ নিরাময় করা , তাহলে এসব সৈনিকদের দায়িত্ব থাকবে সাজোয়া গাড়িগুলোর নানা অসুখ দূর করা । সুতরাং অনেকে তাদেরকে সাজোয়া চিকিত্সক বলে আখ্যায়িত করেন । এ সামরির ইউনিটের রাজনৈতিক বিভাগের উপপরিচালক চাও সিন চুন বলেছেন , স্কোয়াড লিডার ফান তা ছুয়ানের বয়স ৩২ বছর । তিনি ১৩ বছর ধরে গণ মুক্তি ফৌজে কাজ করে আসছেন । তিনি এসব সৈনিকের মধ্যে একজন অগ্রণী ব্যক্তি । চাও সিন চুন বলেন ,

ফান তা ছুয়ান একজন দুর্লভ সাজোয়া চিকিত্সক । সব ধরণের সাজোয়া গাড়ির সামর্থ্য , গঠন ও তাত্ত্বিত দিকে তার ভালো দখল রয়েছে । দশ বারো বছরের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তার পেশাগত মান ও সামরিক প্রকৃতি একটি উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়েছে । সাজোয়া গাড়ির সাধারণ গোলযোগ তিনি সহজেই দূর করতে পারেন ।

ফান তা ছুয়ান দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সু ছুয়ান প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে এসেছেন । তিনি লম্বা নন । মুখ ফর্সা । বহু বছরের সামরিক জীবনযাপনের মাধ্যমে তার সমান বয়সের লোকদের তুলনায় তাকে আরো দৃপ্তিমান ও সুদর্শন দেখাচ্ছে ।

নাস্তার পর সৈনিকরা ব্যস্ততম সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেন । সাজোয়া গাড়ির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত সৈনিকদের জন্যে রণক্ষেত্র ও প্রশিক্ষণাগার হচ্ছে সাজোয়া গাড়ি মেরামতের স্থান । এখানে বসানো রয়েছে প্রশিক্ষণের সম্মুখফ্রন্ট থেকে নিয়ে আসা নানা গোলযোগপূর্ণ সাজোয়া গাড়ি । এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইন অপসারণকারী গাড়ি , সৈন্য বহনকারী গাড়ি , ট্যাংক ও লড়াই পরিচালনা গাড়ি । ফান তা ছুয়ান তার স্কোয়াডের সৈনিকদের নিয়ে একটি সাজোয়া পরিচালনা গাড়ির উপর সর্বশেষ পরীক্ষা নিচ্ছিলেন । তিনি বলেন ,

সমসাময়িককালে এটি একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত লড়াই পরিচালনা গাড়ি । এ গাড়ি সেনাবাহিনীর লড়াই ও প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োজিত থাকে । আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যাতে সাজোয়া গাড়িগুলো স্বাভাবিকভাবে তাদের সামর্থ্য প্রসারিত করতে পারে , সেজন্যে তার নিশ্চয়তা বিধান করা । কোনো জরুরী অবস্থা দেখা দিলে আমরা এসব সাজোয়া গাড়িকে সচল রাখতে পারবো ।

রণক্ষেত্রে লড়াই পরিচালনা গাড়ির দায়িত্ব হচ্ছে লড়াই পরিচালনা করা । সাধারণত সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা এসব গাড়িতে বসেন । তাই এ গাড়িগুলো সবসময় শত্রুর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় । ফান তা ছুয়ান ব্যাখ্যা করে বলেছেন , এ গাড়ির গঠন জটিল হলেও তার ও তার সহযোদ্ধাদের জন্যে তার সমস্যা মোটেই বড় সমস্যা নয় ।আমাদের সংবাদদাতা প্রশ্ন করেছেন ,

এ গাড়ির সমস্যা কোথায় ? ফান তা ছুয়ান উত্তরে বলেন ,

মোড় নেয়ার যন্ত্রের কিছু সমস্যা আছে । আমরা ঠিক করে ফেলেছি । সর্বশেষ প্রণালী হিসেবে আমরা গাড়িটির পরীক্ষা নিচ্ছি ।

ফান তা ছুয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে আরো বলেন , সাধারণ মোটর গাড়ির চেয়ে এ রকম প্রকান্ড সাজোয়া গাড়ি মেরামত করার কাজ অনেক জটিল । এ কাজ করতে হলে উন্নত কৌশলের দরকার পড়বে । তাছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে হয় । তিনি বলেন ,

সেনাবাহিনীর জন্যে সময় একান্ত জরুরী । সম্মুখফ্রন্টে লড়াই চলছে , সাজোয়া গাড়িতে গোলযোগ দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ না হলে লড়াই ব্যহত হবে । আমাদের কাজ হচ্ছে যত তাড়িতাড়ি সম্ভব গোলযোগপূর্ণ সাজোয়া গাড়ি মেরামত করে তাকে আবার রণক্ষেত্রে পাঠানো ।

রণক্ষেত্রে ফান তা ছুয়ান ও তার সহযোদ্ধাদের ভারী ভারী সাজসরঞ্জাম কাঁধে নিয়ে সম্মুখফ্রন্টে গিয়ে ট্যাংক মেরামতের কাজ করতে হয় । সম্মুখফ্রন্টের সৈনিকদের মত তারাও অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন । এসব অবস্থার মোকাবিলার জন্যে তাদের উন্নত শারীরিক গুণাবলি ও সামরিক প্রকৃতি থাকতে হবে । সাধারণ দিনের প্রশিক্ষণেও এ রকম প্রস্তুতি তাদের নিতে হয় । ফান তা ছুয়ান বলেন ,

যুদ্ধে মানুষ শামীল হলে উন্নত শারীরিক গুণাবলীর দরকার পড়বে । ভালো শারীরিক অবস্থা না থাকলে চলবে না । আমাদের সবসময় হাতিয়ার নিয়ে দৌড় দিতে হবে । ভালো শরীর না থাকলে সাজোয়া গাড়ি মেরামত করা তো দূরের কথা , আপনি হয়তো গোলযোগপূর্ণ সাজোয়া গাড়ির কাছেও পৌছতে পারবেন না ।

অবসর সময় ফান তা ছুয়ান কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন । তার কাছে একটি ছোট ভিডিও ক্যামেরা আছে । প্রতি বছর কোনো সৈনিক অবসর নেয়ার সময় তিনি তাদের জন্যে ফটো করে থাকেন

প্রতিদিন ঘুমের আগে ফান তা ছুয়ান সি ছুয়ান প্রদেশের বাড়িতে থাকা তার স্ত্রী ও ৫ বছরের ছেলের কাছে ফোন করে কিছুক্ষণ গল্প করেন । একজন স্বামী ও বাবা হিসেবে তিনি খুব কম সময় তার স্ত্রী ও ছেলের সংগে মেলামেশা করেন । এতে তার সবসময় একটু দু:খ লাগে ।

রাত সাড়ে ৯টায় ফান তা ছুয়ান ও তার সহযোদ্ধারা যথাসময় ঘুমান । এমনি করে তাদের দিন কেটে যায় । শান্তিপূর্ণ যুগের সৈনিক হিসেবে খুবই সাধারণ হলেও তারা নিজেদের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্যে গভীরভাবে গর্ববোধ করেন ।