আফগান তালিবান মুখপাত্র কারি ইউসেফ আহমাদি ৩১ জুলাই ঘোষণা করেছেন যে, যদি আফগান সরকার স্থানীয় সময় পয়লা আগষ্ট ১২টার আগে তালিবানের দাবি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তারা অব্যাহতভাবে দক্ষিণ কোরীয় জিম্মিদের হত্যা করবে। এদিন আফগান প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, আফগান সরকার তালিবানের সদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে নমনীয় হবে না। দু'পক্ষের মনোভাব খুবই কঠোর। সেকারণে বাকী ২১জন দক্ষিণ কোরীয় জিম্মির ব্যাপারে সবাই উদ্বীগ্ন।
তালিবান ১৯ জুলাই আফগানিস্তানের গাজনি প্রদেশে ২৩জন দক্ষিণ কোরীয় জিম্মিকে অপহরণের পর শান্তিপূর্ণভাবে জিম্মিদের মুক্তি করার চেষ্টা চলছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত আফগানিস্তানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাছেন এবং আশা করছেন সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে অপহৃত সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তালিবান দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে আফগানিস্তান থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। এ পর্যন্ত তালিবান আফগান সরকারকে একই সংখ্যার তালিবান বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে দক্ষিণ কোরীয় জিম্মিদের মুক্ত করার দাবী জানিয়েছে। আফগান সরকার তালিবানের প্রথমে দক্ষিণ কোরীয়ার ১৮জন নারী জিম্মির বিনিময়ে তালিবান বন্দীদের মুক্তি দেয়ার দাবী প্রত্যাখ্যান করায় আলোচনা পুনরায় অচলাবস্থায় পড়েছে। তালিবানরা স্থানীয় সময় ৩০ জুলাই রাতে আরেকজন পুরুষ জিম্মিকেও হত্যা করেছে।
বর্তমানে বিভিন্ন পক্ষের তথ্য থেকে জানা গেছে বাকী দক্ষিণ কোরীয় জিম্মির ভবিষ্যত্ আশংকাজনক। তালিবানের মুখপাত্র আহমাদি দ্বিতীয় জিম্মিকে হত্যা ও পরের একজন জিম্মিকে হত্যার সময়সীমা নির্ধারণের পর বলেছে, তালিবান বন্দীদেরকে মুক্তি করা হল সমস্যা নিরসনের একমাত্র পদ্ধতি। আহমাদি আরো ঘোষণা করেছে যে, নারীসহ কয়েকজন জিম্মিদেরকে একসাথে হত্যার সম্ভাবনা আছে। তালিবানের কঠোর মনোভাব ও সহিংস তত্পরতা আফগান ও দক্ষিণ কোরিয় সরকারের ওপর আরো বেশি চাপ পড়েছে।
তালিবান আরেকজন জিম্মিকে হত্যা করার পর দক্ষিণ কোরীয় সরকার তীব্র নিন্দা করা ছাড়াও আশা করেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথাশীঘ্র সম্ভব দক্ষিণ কোরীয় জিম্মিদেরকে মুক্ত করার চিরাচরিত পদ্ধতির পরিবর্তন করবে। আফগান প্রেসিডেন্ট অফিস এদিন এক বিবৃতিতে বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জানে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ধরণের ঘটনা মোকাবেলার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত, কিন্তু আফগান সরকার নমনীয়তাও প্রকাশ করতে চায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখন পর্যন্ত তালিবান এবারের অপহৃত ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে ৮বার জিম্মিদেরকে হত্যার সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে দু'পক্ষের অবস্থানের ওপর সবার সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
তালিবানের এই অপহরণ ও নারীদের হত্যা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। এখনো স্থানীয় উপজাতির প্রধানগণ তালিবানকে রাজী করানোর চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয় জিম্মিকে হত্যার ঘটনা থেকে দেখা গেছে, তালিবানের অবস্থান অনঢ় এবং তা পরিবর্তন করা কঠিন। এদিকে কিন্তু আফগান সরকারী বাহিনী ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী অপহরণকারী তালিবানদের ধরাও করে রেখেছে। সেজন্য অপহরণকারীরা যদি সব জিম্মিকে হত্যা করে, তাহলে তারাও বাঁচতে পারবে না। তালিবানের এ সমস্যা বিবেচনা করার সম্ভাবনা আছে।
গত মার্চ মাসে আফগান সরকার তালিবানের এক দল গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মুক্তি দিয়েছে ইতালির একজন সাংবাদিকের বিনিময়ে। এর ফলে দেশী ও বিদেশী, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারের ওপর প্রবল চাপ দিয়েছে। তালিবান সম্প্রতি অব্যাহতভাবে বিদেশী জিম্মিকে অপহরণের নীতিতে অবিচল থাকার কথা ঘোষণা করেছে। যদি আফগান সরকার জিম্মিদের বিনিময়ে তালিবান বন্দীদের মুক্তি দেয়, তাহলে সন্ত্রাসবাদকে উত্সাহ দেয়ার জন্যে তার নিন্দা করা হবে। তখন আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষা যাবেনা।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এবারের অপহরণের ঘটনা ও সম্প্রতি আফগানিস্তানে বিদেশীদের অপহরণের অনেক ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এবারের অপহৃত ঘটনার নিরসন হল আফগান সরকার ও আফগানিস্তানে বহুদেশীয় সন্ত্রাস দমন বাহিনীর একটি বিলাট পরীক্ষা।
ছাই ইউয়ে
|