গ্রীষ্মকাল আমাদের জন্য একটি কষ্টকর ঋতু । অনেকে গরম আবহাওয়া সহ্য করার পাশাপাশি চামড়ার ওপর গরমের প্রভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেয়া দেয় । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে গ্রীষ্মকালে চামড়ার ওপর তাপ প্রতিরোধক কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলবো ।
দীর্ঘকাল ধরে লোকজন জানতো সানক্রিম গ্রীষ্মকালে বাইরে যাওয়ার সময় চামড়ার উষ্ণতা প্রতিরোধক এক ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস এবং ভালো পদ্ধতি । কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে সংক্রামক রোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, সান ক্রিম এবং সান লোশন সুর্যালোকের উষ্ণতায় চামড়ার মেলানোমা আক্রান্ত হওয়ার প্রতিরোধে কোনো ভুমিকা পালন করতে সক্ষম নয় । সুইজাল্যান্ডের চামড়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্টিফেন তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, সান ক্রিম মেলানোমা প্রতিরোধ করতে পারে বলে কোন ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না ।
মেলানোমা হচ্ছে এক ধরনের গুরুতর চামড়ার ক্যানসার । সাদা চামড়া বা চামড়ায় কালো মেচেতা থাকা লোকজন সহজভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় । ইউরোপের সাদা চামড়ার লোকজন আফ্রিকা ও এশিয়ার কালো ও হলুদ চামড়ার লোকজনের চেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি । বিগত বছরগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া লোকজনের সংখ্যা যে কোনো ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া লোক সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি । প্রতি ১০ বা ২০ বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে । এর মূল কারণ হল ১৯৫০ সাল থেকে আরো বেশি লোকজন সবসময় নিজেদের চামড়া সুর্যালোকের উষ্ণতার রাখা ।
পাশ্চাত্য দেশগুলোতে মেলানোমার আক্রান্তের হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে । এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ১ শতাংশেরও বেশি । চীনের মেলানোমা রোগীদের সংখ্যা আগের চেয়েও বেড়েছে । ২০০০ সালে আক্রান্তে হার ছিল ৫ লাখের মধ্যে ১ জন এবং ২০০৫ সালে এসে তা ১ লাখের মধ্যে ১ জন হয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, যদি আপনারা সবসময় যদি সূর্যালোকের উষ্ণতার কারণে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় ,বিশেষ করে ছোটবেলায় উষ্ণতার কারণে চামড়ার ক্ষতি হলে, ভবিষ্যতে মেলানোমা আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ।
তা ছাড়া, নারীরা পুরুষদের চেয়ে চামড়ার উষ্ণতার প্রতিরোধে বেশি মনোযোগ দেন । আসলে পুরুষদের চামড়ারও যত্ন লাগে। পুরুষদের চামড়া সূর্যালোকে আরো উত্তেজনাময় হয়ে ওঠে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করলে , সহজভাবেই চর্মজাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় ।
সান ক্রিম ছাড়া সূর্যালোক প্রতিরোধক কাপড় ও টুপি পরা এবং সুর্যালোকের সরাসরি উষ্ণতা প্রতিরোধ করা হচ্ছে ভালো পদ্ধতি । সুইজাল্যান্ডের চামড়া বিষয়ক ডাক্তার স্টিফেন এ কথা জানিয়েছেন । তিনি আরো বলেছেন, কয়েকটি দ্বীপ দেশে গরম আবহাওয়ায় নারীরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত অনেক কাপড় পরে চামড়াকে প্রতিরোধ করে । আসলে এটা খুবই কার্যকর সূর্যালোক উষ্ণতা প্রতিরোধক পদ্ধতি ।
সূর্যালোকের রশ্মি ইউ.ভি.এ আর ইউ.ভি.বিসহ বিভিন্ন আলো নিয়ে গঠিত । সাধারণত সানক্রিম শুধু ইউ.ভি.বি প্রতিরোধ করতে পারে । আসলে ইউ.ভি.এ. চামড়ার ক্ষতিকর কারণ বেশি । সানক্রিমের সূর্যালোক প্রতিরোধক সামর্থ্য তার এস.পি.এফ সংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত । এস.পি.এফের সংখ্যা যত বেশি হবে তত তার সূর্যালোক প্রতিরোধক সামর্থ্যও ভালো হবে । যেমন বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার পথে লোকজন এস.পি.এফ ১৫ সানক্রিম ব্যবহার করে এবং সমুদ্র বেলাভুমি যাওয়ার সময় এস.পি.এফ ৪০ সানক্রিম ব্যবহার করে । ফলে কিছু লোকের ধারণা সবসময় এস.পি.এফ ৪০ সানক্রিম ব্যবহার করে, দীর্ঘকাল ধরে সুর্যালোকের উষ্ণতার প্রতিরোধ করা যায় । আসলে এটা খুবই ভূল । এ ধরনের সানক্রিম চামড়ার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার কমাতে সক্ষম । এ কারণে গ্রীষ্মকালে আপনাদের বাইরে যাওয়ার সময় টুপি ও স্যানগ্লাস পরা ভালো এবং দীর্ঘ সময় সূর্যালোকের উষ্ণতা এড়িয়ে চলে প্রতিরোধ করা ভালো ।
|