চীন আন্তর্জাতিক বেতার ঐতিহ্যিক গণ মাধ্যমের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে নতুন প্রচার পদ্ধতি অন্বেষণএবং আন্তর্জাতিক জনমতে নিজের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে । সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রধান ওয়াং কেন নিয়েন সি আর আই অন লাইন ও গণ নেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নতুন পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন ।
চীন আন্তর্জাতিক বেতার সি আর আইয়ের ইতিহাস ৬৫ বছরের । প্রতিদিন সি আর আই থেকে ৪৩টি ভাষার অনুষ্ঠান পৃথিবীর দু শ'টি দেশ ও অঞ্চলের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয় । সি আর আই আন্তর্জাতিক প্রভাবসম্পন্ন একটি বেতার কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সি আর আই শর্টওয়েভে বেতার অনুষ্ঠান প্রচার করা ছাড়াও নতুন প্রচার পদ্ধতি অন্বেষণের চেষ্টা করছে ।
ওয়াং কেন নিয়েন মনে করেন , যদিও নতুন প্রচার পদ্ধতিগুলোর আবির্ভাব ঐতিহ্যিক প্রচার মাধ্যমের প্রতি চাপ সৃষ্টি করেছে , তবে ঐতিহ্যিক প্রচার পদ্ধতি নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের উন্নয়ন তরান্বিত করতে পেরেছে । তিনি বলেছেন , আমরা জানি নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগানোয় সি আর আইয়ের প্রাণশক্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । যদিও সি আর আইয়ের ইতিহাস ৬৫ বছর হল , প্রচারের ভাষার সংখ্যা ও প্রচারিত অনুষ্ঠানের সময়ের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকা , বৃটেনের বিবিসি ও সি আর আই বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে । এর আগে সি আর আইয়ের প্রভাব ভয়েস অব আমেরিকা ও বিবিসির অনেক পিছনে ছিল। গত দু বছরে সি আর আইয়ের অনুষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটে পাঠানো হয়েছে । ইন্টারনেটে সি আর আইয়ের স্থান ভয়েস অব আমেরিকা ও বি বি সিকে ছাড়িয়ে গেছে । নতুন প্রযুক্তির কল্যাণেই সি আর আইয়ের এই বিরাট পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে ।
১৯৯৮ সালে চীন আন্তর্জাতিক বেতার ইন্টারনেটে সি আর আই অন লাইন চালু করে এবং সূচনা হিসেবে চীনা , ইংরেজী , ফরাসি , জার্মানী ও স্পেন –পাঁচটি ভাষার অনুষ্ঠান দিয়ে ইন্টারনেটে নিজের ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করে । গত কয়েক বছরে সিআরআই অন লাইনের দ্রুত প্রসার হয়েছে । ২০০২ সালে সি আর আইয়ের ৪৩টি ভাষার অনুষ্ঠান ইন্টারনেটে পাঠানো হয়েছে । সি ডি এন প্রযুক্তি ব্যবহারের কল্যাণে বিদেশের নেট নাগরিকরা খুব স্পষ্টভাবে সি আর আইয়ের অনুষ্ঠান শুনতে পারেন এবং বিভিন্ন ভাষার নেট পৃষ্ঠা থেকে খবর ও নানা বিষয়ের অনুষ্ঠান পড়তে পারেন ।
নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পর চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রভাব অনেক বেড়েছে। প্রতি দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঁচ থেকে ছয় লাখ নেট নাগরিক সি আর আইয়ের অনুষ্ঠান শুনেন বা পড়েন ।
ওয়াং কেন নিয়েন বলেছেন , নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সি আর আইয়ের সম্প্রচার ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে । তবে অনুষ্ঠানের গুনগতমান উন্নত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । তিনি বলেছেন , ইন্টারনেটের কোনো রাষ্ট্রসীমা নেই। নেট নাগরিকরা নিজের ইচ্ছামতো ইন্টারনেটের অনুষ্ঠান বেছে নেন । যে দেশের অনুষ্ঠান ভালো , তারা সেই দেশের অনুষ্ঠান বেছে নেবেন । তাই অনুষ্ঠানের মান উন্নত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে প্রায় দু হাজার পেশাদারী নেট কর্মী এবং ৪৩টি ভাষার কর্মী রয়েছে । তারা নেট নাগরিকদের প্রয়োজনীয় যে কোনো অনুষ্ঠান তৈরী করতে পারে । তিনি জোর দিয়ে বলেছেন , বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতায়ই সি আর আইয়ের বেতার অনুষ্ঠান ও নেট পৃষ্ঠা আরো সুন্দর হবে ।
বহু বছর ধরে চীন আন্তর্জাতিক বেতার চীন ও বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সেতুর ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে । চীন আন্তর্জাতিক বেতার চীনা জনগণের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কেজানার একটি জানালাও বটে । ওয়াং কেন নিয়েন মনে করেন , সি আর আইয়ের নতুন প্রচার পদ্ধতি বিশ্বে চীনের সংস্কৃতি প্রচার ও চীন সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে সমঝোতা বাড়াতে সাহায্য করবে । চীনের সংস্কৃতির প্রাণ শক্তি প্রবল , অতীতে আমাদের প্রচার সরঞ্জাম সীমিত ছিল বলে বিশ্বে চীনা সংস্কৃতির প্রভাব প্রবল ছিল না। আমি বিশ্বাস করি , নতুন প্রযুক্তি ও নতুন প্রচার পদ্ধতির কল্যাণে বিশ্বের আরো বেশি লোক চীনের সংস্কৃতি গ্রহণ ও পছন্দ করবেন ।
|