ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ৩০ জুলাই থেকে তাঁর তিন দিনব্যাপী রাশিয়া সফর শুরু করেছেন। সফরকালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং তাঁর সঙ্গে ফিলিস্তিনের উদ্বেগজনক অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করবেন।
খবরে জানা গেছে, আব্বাসের এবারের মস্কো সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনের ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যকার সংঘর্ষে ফাতাহের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন চাওয়া। আব্বাস আশা করেন, রাশিয়া ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ সমাধান এবং ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের অচলাবস্থা ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আব্বাসের হামাস সরকারকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সংশ্লিষ্ট চার পক্ষের মধ্যে রাশিয়া হচ্ছে হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ বাজায় রাখা একমাত্র দেশ বলে আব্বাসের এবারের রাশিয়া সফর খুবই উল্লেখযোগ্য।
পরিকল্পনা অনুসারে আব্বাসের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় রাশিয়া সফরের কথা। ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে নতুন দফা সংঘর্ষ ঘটায় তা পিছিয়ে দেয়া হয়। চলতি বছরের ১০ জুন ফিলিস্তিনের দুটি প্রধান রাজনৈতিক সম্প্রদায় ফাতাহ এবং হামাসের মধ্যে মর্ম এবং রাজনৈতিক নীতি ভিন্ন বলে নতুন দফা তুমুল সংঘর্ষ ঘটেছিল। সংঘর্ষে দু'পক্ষের অনেকে হতাহত হয়েছে। এ ছাড়াও, হামাসের গাজা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা এবং ফাতাহের জর্দান নদীর পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করার গুরুতর বিভক্তিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টিহয়েছে। ১৭ জুন সালাম ফায়াদের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের জরুরী সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। এ থেকে বোঝা গেছে যে, শুধুমাত্র তিন মাস সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফিলিস্তিনের জাতীয় যৌথ সরকার ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। জরুরী সরকারের সদস্যদের মধ্যে হামাসের একজন সদস্যও নেই বলে প্রতিষ্ঠার পর তা শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্র, ই ইউ এবং ইস্রাইলের সমর্থন পেয়েছে। আব্বাস এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া সফর করেন। তিনি আশা করেন, এবারের সফরের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের জাতীয় ক্ষমতাসীন সরকার এবং ফাতাহকে রাশিয়ার সমর্থন পাওয়া যাবে। পাশাপাশি তিনি আশা করেন, রাশিয়া সতর্কভাবে হামাসের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরোভ ৩০ জুলাই আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ফিলিস্তিনের বৈধ নেতা আব্বাসকে সমর্থন করে এবং আব্বাসের সঙ্গে ফিলিস্তিনকে সাহায্য দেয়ার নির্দিষ্ট উপায় নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে লাভরোভ সংবাদদাতাদেরকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, রাশিয়া একটি ঐক্যবদ্ধ এবং মুক্ত ফিলিস্তিনকে দেখতে ইচ্ছুক। তিনি বলেছেন, বর্তমানে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি খুব জটিল। ফাতাহ এবং হামাসকে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধান করতে হবে। বৈঠক আবার শুরু করার ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সংশ্লিষ্ট চার পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
লাভরোভের একই মন্তব্য রাশিয়ার আব্বাস, ফিলিস্তিনের একীকরণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থনের অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু তথ্য মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক সমস্যায় রাশিয়া সম্ভবত আব্বাসের ইচ্ছা মতো কাজ করবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রথমত: রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব সম্প্রসারণ করতে ইচ্ছুক। আব্বাসকে মধ্যপন্থী বলে মনে করা হয়। তাই রাশিয়া বরাবরই আব্বাসকে সমর্থনের কথা বলে। দিতীয়ত: রাশিয়া হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ফিলিস্তিন ও ইস্রাইল সংঘর্ষ সমাধানের প্রক্রিয়ায় আরো বেশী সুযোগ হস্তগত করতে ইচ্ছুক। তাই ইস্রাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং ই ইউ'র সদস্য দেশগুলো সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে হামাসের নিন্দা করার পাশাপাশি রাশিয়া হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রয়েছে। (লিলি)
|