রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২৫ জুলাই বলেছেন, "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" স্বাক্ষরের সময় ন্যাটো ও ওয়ার্শ চুক্তি সংস্থা ছিলো না। এখন এই চুক্তি অযৌক্তিক হয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে পুতিন দ্বিতীয় বার "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" নিয়ে স্পষ্ট মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রতি রাশিয়ার মনোভাব প্রতিদিনই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
সে দিন রাশিয়ার প্রভাবশালী বিভাগের উর্ধ্বতন সামরিক অফিসারদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সময় পুতিন বলেছেন, এখন প্রায় সকল পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেখানকার অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই চুক্তি অযৌক্তিক হয়েছে। তাই রাশিয়া বাধ্য হয়ে অস্থায়ীভাবে "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" ও তার সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর কার্যকরীকরণ বন্ধ করবে।
"ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" এর ব্যাপারে রাশিয়া প্রতিদিনই আরো শক্ত অবস্থান নেয়ার কারণে এই চুক্তির মৌলিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়া ছাড়াও পূর্ব ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ বছরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তীব্র বিরোধীতা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপীয় দেশে তার ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করার ব্যাপারে অনমনীয় রয়েছে। তার উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকী কমানো। ফলে রাশিয়া নিজ দেশের নিরাপত্তা ও কেন্দ্রীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত সমস্যাকে অবহেলা করতে পারে না।
"ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি"-এর ব্যাপারে রাশিয়ার অবস্থান প্রতিদিনই শক্ত হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী সমস্যায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রস্তাবের সরাসরি জবাব দেয় নি। পুতিনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী সংক্রান্ত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় ইউরোপের অন্যান্য দেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, কিন্তু এর পূর্ব শর্ত হলো যুক্তরাষ্ট্র চেক প্রজাতন্ত্র ও পোল্যান্ডে তার ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করবে না। পুতিন আরো প্রস্তাব করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আজারবাইজানে রাশিয়ার রাডার ব্যবহার করে তার ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা নির্মাণ করতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তাহলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নে কৌশলগত পরিবর্তন হবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র তা গ্রহণ না করে, তাহলে দু'দেশের সম্পর্কের অবনতি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ সরাসরি পুতিনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান না করলেও জোর দিয়ে বলেছেন যে, চেক প্রজাতন্ত্র ও পোল্যান্ড তার ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে।তিনি মনে করেন, ইউরোপের বাইরে ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা নির্মাণ কেবল তার গোটা পরিকল্পনার পরিপূরকতা । পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরিস্থিতির ভারসাম্যহীনতা রোধ করার জন্য রাশিয়ার শক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাও স্বাভাবিক।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" এর সমস্যায় রাশিয়ার অবস্থান শক্ত হওয়ার মূল কারণ রয়েছে, প্রথমতঃ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর টেকসই পূর্বমুখী সম্প্রসারণের দরুন রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থান সীমিত হয়েছে এবং তার নিরাপত্তা পরিবেশের অবনতি হয়েছে। এ জন্য রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে হুশিয়ারী সংকেত দেয়া দরকার। যদি ন্যাটো অব্যাহতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নীতি অনুসরণ করে, তাহলে রাশিয়া ইচ্ছা মতো সহযোগিতা না করার অবস্থান নেবে। যদি তার সংকেত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব না পায়, তাহলে রাশিয়া অস্থায়ীভাবে চুক্তির কার্যকরীকরণ বন্ধ করা থেকে ফিরে না আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি বিষয়ক চুক্তি" প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতিমূলক কাজ করছে। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো "ইউরোপের সাধারণ অস্ত্রশস্ত্র শক্তি সংক্রান্ত সংশোধন চুক্তি" অনুমোদন করে নি এবং এই চুক্তি অনুমোদন করার শর্ত হিসেবে তারা রাশিয়াকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। রাশিয়া মনে করে, এই চুক্তি রাশিয়া ও স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে বাধ্য করার এক অসম চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান অবস্থা দেখে বুঝা যায় যে, রাশিয়ার এই চুক্তি প্রত্যাহার করা কেবল সময়ের ব্যাপার। তৃতীয়তঃ এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। পুতিনের সমর্থনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা রয়েছে।
|