v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-27 15:38:16    
পাহাড়ের মেয়ে---লোকশিল্পী ছেনছিন

cri
    চীনের শহরায়ন প্রক্রিয়ার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু লোকশিল্পের মর্যাদা ভিন্ন মাত্রায় কমে যায় । চিয়াংসি প্রদেশের উনিং জেলার দুশ'রেরও বেশি বছরের ইতিহাস সম্পন্ন ঢাকঢোল বাজিয়ে গান এগুলোর মধ্যে একটি লোক শিল্প। ছেন ছিন এমন একজন লোক শিল্পী যিনি ঢাকঢোল বাজিয়ে গান সুরক্ষা ও উত্তরাধিকার করার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন । তাই স্থানীয় লোকের মধ্যে তিনি "পাহাড়ের মেয়ে"নামে পরিচিত ।

    শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা যে গানটি শুনছেন তা হল মধ্য চীনের চিয়াংসি প্রদেশের উনিং জেলার পাহাড়ী গান--ঢাকঢোল বাজানোগান । কৃষিজমিতে চাষ করার সময় উনিং জেলার পাহাড়ী এলাকার কৃষকরা প্রায় ঢাকঢোল সহ গান গেয়ে নিজেদের মনের আনন্দ ব্যক্ত করেন । ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গাওয়ার সময় সাধারণত একজন ঢাকঢোল বাজান । ঢাকঢোলের তালেতালে বাকি সবাই মিলিত কন্ঠে গান গান । এ পর্যন্ত উনিং জেলার ঢাকঢোল বাজিয়ে গানের ইতিহাস দুশ' বছরের বেশী পুরোনো । এখন গানটি অবস্তুগত পুরাকীর্তি হিসেবে চিয়াংসি প্রদেশের সংরক্ষিত নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।

    চিয়াংসি প্রদেশের উনিং জেলার প্রাকৃতি পরিবেশ খুবই সুন্দর ।সেখানকার নদীর পানি আয়নার মতো নির্মল , পাহাড়ের দৃশ্য মনোরম । উনিং জেলার একটি সুন্দর গ্রামে ৩৮ বছর বয়সী ছেন ছিনের জন্ম হয় । ছেন ছিন বলেন , তিনি ছোট বেলা থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে গান ও চা তোলার গান শুনে বড় হয়ে ওঠেন । চা তোলার গান এক ধরণের স্থানীয় অপেরা । এর উত্স হল পাহাড়ী গান । উ নিং জেলা একটি পাহাড়ী জেলা । চা এই জেলা একটি প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য । চায়ের গাছের জন্য আগাছা সাফ করা বা জমি আলগা করার সময় কৃষকরা দলে দলে মাঠে আসেন । তিন-চারজন কৃষক ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গাইতে শুরু করেন । বাকি সবাই ঢাকঢোলের তালেতালে তাদের সঙ্গেযোগ দেন । ছেন ছিন বলেন, সে সময় গ্রামে টেলিভিশন ছিল না এবং সিনেমাও খুব কম ছিল । ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গাওয়া গ্রামের একটি আনন্দের ব্যাপার ।বাড়িতে কেউ ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গাইলে উত্সবের চেয়েও আনন্দ হয় ।

    চমত্কারভাবে ঢাকঢোল বাজাতে পারতেন বলে ছেনছিনের ঠাকুরদাদা আশেপাশে জেলায় খুব বিখ্যাত ছিলেন । ছেন ছিনের ছোট বেলায় অনেক জায়গা দাদাকে ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গাইতে আমন্ত্রণ করত । ধীরেধীরে ছেন ছিনও এই লোক সঙ্গীত পছন্দ করেন । ১৯৮৪ সালে ছেন ছিন চিয়াংসি প্রদেশের শিল্পকলা বিদ্যালয়ের উ নিং জেলার চা তোলার অপেরা ক্লাসে ভর্তি হন এবং স্নাতক হওয়ার পর উ নিং জেলার চা তোলা অপেরা দলে ভর্তি হন । চা তোলা অপেরা সম্পূর্ণভাবে তার জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় । কিন্তু ১৯৯৩ সালের গ্রীষ্মকালে চা তোলা অপেরা দল ভেঙ্গে যায় । ছেন ছিন এই পরিণাম বিশ্বাসএবং গ্রহণ করতে পারেন না ।

    দু বছর ধরে নীরব হয়ে থাকার পর ১৯৯৫ সালে ছেন ছিন পাহাড়ী এলাকা থেকে বের হন । তিনি চিউ চিয়াং শহরের নৃত্য-সঙ্গীত দলের একজন উপস্থাপক হন । ২০০৪ সালে তিনি চিউচিয়াং শহর থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে যান । যেখানেই যাক না কেন ছেন ছিন সব সময় মনে করতেন, তিনি বন ছাড়া পাখি এবং নদী ছাড়া মাছের মতো শহরে জীবনযাত্রার স্তম্ভ হারিয়েছেন । তিনি বলেন, আমি পাহাড়ী গ্রামে বড় হয়ে ওঠা একটি মেয়ে । শহরে যেমন গ্রামের হাওয়ায় শ্বাসনিশ্বাস করা যায় না তেমনি পাহাড়ের পাখির গান এবং নদনদীর কলকল ধ্বনি শোনা যায় না ।

    এক আকস্মিক সুযোগে কয়েকজন বিদেশী বন্ধুর সঙ্গে ছেন ছিনের পরিচয় হয় । বন্ধুদের অনুরোধে ছেন ছিন তার গ্রামের পাহাড়ী গান গাইতে শুরু করেন । তার মধুর স্বর মধুর গান উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করেছে । তিনি বলেন ,মার্কিন বন্ধুদের অনুরোধে আমি ঢাকঢোল বাজিয়ে গান ও চা তোলার গান গেয়েছি । আমার গান শুনে তারা বলেছেন , কি আশ্চর্য , আপনার গ্রামের গান এত সুন্দর এত মধুর !

    বিদেশী বন্ধুদের কথা ছেন ছিনকে উত্সাহ দিয়েছে এবং তার গ্রামে ফিরে যাওয়ার মনোবলকে জোরদার করেছে ।

    ছেন ছিন শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসেন । তিনি চোখে গ্রামের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে এবং কানে মনোরম পাহাড়ী গান শুনতে পান । শিশুকালের স্বপ্ন তার চোখের সামনে ভেসে আসে । তিনি বলেন,আমার মন যেন আবার শিশুকালে এবং পাহাড় ও নদীর পরিবেশে ফিরে এসেছে । আমি মনেমনে ভাবছিলাম , আমি ঠাকুরদার পথ অনুসরণ করব ।

    এর পর ছেন ছিন মালপত্র পিঠে বহন করে এবং টিভি-ক্যামেরা নিয়ে উ নিং জেলার প্রতিটি গ্রামে বেড়ান । সেখানকার প্রবীন লোকশিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন , তাদের কাছ থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে গান ও চা তোলার গান সংগ্রহ করেন । ঠাকুরদার পুরনো বন্ধু ৭৮ বছর বয়সী মেন ফ্যানলিনের সঙ্গে সাক্ষাত করে ছেন ছিন খুব মুগ্ধ হন । ছেন ছিন বলেন, আপনি এখন ঢাকঢোল গান গান বা কাউকে শেখান প্রশ্ন করলে মেন দাদা বলেছেন , এধরণের পুরানো গান এখন কেউই শুনতে চায় না । তার কথা শুনে আমার দুঃখ লাগে । এই কাজ না করলে বিশ বছর পর আমার একই প্রজন্মের লোক আদিম ঢাকঢোল বাজিয়ে গান ও চা তোলার গান শুনতে পাবে না ।

    ঢাকঢোল বাজিয়ে গান ও চা তোলার অপেরার উত্তরাধিকারীর অভাব প্রবীন লোকশিল্পীদের মনের দুঃখ । লোকশিল্পকলার বেশির ভাগ মৌখিক শিল্পকলা । যারা এই সব মৌখিক শিল্পকলা জানেন তারা সবাই বুড়ো হয়েছেন । তারা মৃত্যুবরণ করলে এই সব লোকশিল্প হারানোর সম্মুখী হবে । উ নিং জেলার ঢোকঢোল বাজিয়ে গান ধ্বংস হওয়ার মুহুর্তে ছেন ছিন তা সম্প্রসারিত করার দায়িত্ব বহন করলেন । তিনি টিভি ক্যামেরা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে গান সংগ্রহ করেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন , আমি উনিং জেলার অনেক চা তোলার গান ও ঢাকঢোলবাজিয়ে গান সংগ্রহ করেছি এবং এগুলোকে ডিভিডি বানিয়েছি । আমার সংগ্রহিত তথ্য রাষ্ট্রীয় তথ্য হিসেবে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের লোক সংস্কৃতির উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রে সংরক্ষিত রয়েছে ।

    এ পর্যন্ত ছেন ছিন মোট বিশ হাজারটি লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করেছেন ।২০০৫ সালে তিনি "গ্রাম--পাহাড়ী ঢাকঢোল—পাহাড়ী গান—ঠাকুরদাদার গল্প" নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন । এই বইতে স্থানীয় পাহাড়ী গানের বর্তমান অবস্থা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । বইটা সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা মহলের বিশেষজ্ঞদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে ।