সংঘর্ষের জন্য বিশ্বের দৃষ্টি বেশি আকর্ষণ করা ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের অঞ্চলে সম্প্রতি পকূটনৈতিক আলোচনা চলছে। এ জন্য এর উপর বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যম সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমদেশগুলো ও আরব দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকগণ এখানে চলে এসেছেন। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দু'পক্ষও প্রাথমিকভাবে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে। যাতে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায়। তবে এসব কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে এ অঞ্চলের সংঘর্ষ বন্ধ করা সম্ভব হবে কিনা , এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ।
এসব কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যে দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়া সবচে' বড় বিষয় হচ্ছে আরব লীগের প্রতিনিধি দলের প্রথম ইসরাইল সফর । ২৫ জুলাই, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আহমেদ আবল ঘেইত এবং জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল্লোহ আল-খাতিবের নেতৃত্বাধীন আরব লীগের একটি প্রতিনিধি দল ইসরাইলের রাজধানি তেল আবিবে পৌঁছেছে। যাতে ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরব দেশগুলোর শান্তিপূর্ণ প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত করা যায়। এটি হচ্ছে আরব লীগ প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মত প্রতিনিধি দলটির ইসরাইল সফর । ইসরাইলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটা হচ্ছে প্রথম " ঐতিহাসিক" সফর। মিসর ও জর্দান যৌথভাবে ইসরাইলের সঙ্গে সহায়তা করছে। দু'পক্ষই আরব দেশগুলোর এ শান্তিপূর্ণ প্রস্তাবকে ইসরাইল সুষ্ঠুভাবে বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে সক্রিয়ভাবে জবাব দেবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, এ প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধে দখল করা আরব ভূমি প্রত্যাহার করতে হয়। এ বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কেবল আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর আগে ইসরাইল বলেছে, এ প্রস্তাবকে হাতে নেয়া হচ্ছে দু'পক্ষের আলোচনার ইতিবাচক ভিত্তি । তবে এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় সংশোধন করাও প্রয়োজন।
আরব লীগের প্রতিনিধি দলটির ইসরাইল সফর করার কয়েক ঘন্টা আগে, ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত চার পক্ষের নতুন বিশেষ দূত টনী ব্লেয়ার ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সফর শেষ করেন। ব্লেয়া এবারের সফরের শুভকামনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মধ্য প্রাচ্যের সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের উচিত অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মধ্য প্রাচ্য অঞ্চলে পুনরায় ফিরে আসার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতি নেয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস আগামি সপ্তাহে এ অঞ্চল সফর করবেন বলেও অনুমান করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ইসরাইল ফিলিস্তিনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংলাপ করছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট ২৫ জুলাই সংবাদ-মাধ্যমকে বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফিলিস্তিনের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। যাতে নীতিগত চুক্তির ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছানো যায়। এ চুক্তির বিষয় অনুযায়ী, গাজা অঞ্চল এবং জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ৯০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এ ভিত্তিতে দু'পক্ষের পুনরায় ফিলিস্তিনের চূড়ান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সংঘর্ষ, জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনও অধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র। ওলমার্ট বলেছেন, এখনো আলোচনার নির্দিষ্ট সময় ও তালিকা নির্ধারিত হয়নি। তবে দু'পক্ষ কিছু কিছু বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একজন বিশ্লেষক মনে করেন যে, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল অঞ্চলে চালানো এ সব " কূটনৈতিক আলোচনা" , দু'পক্ষের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। জুন মাসে হামাস গাজা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের পর, হামাস ও ফাতাহ'র যৌথ সরকারকে আব্বাস ভেঙ্গে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর ফলে গাজা অঞ্চল ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীর অঞ্চল বিছিন্ন হওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসরাইল ও পশ্চিম দেশগুলো আব্বাসকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।
তবে এ সব কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর পাশা পাশি দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল অঞ্চলে সংঘর্ষ এখনো বন্ধ হয়নি। গাজা অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠনগুলো রকেট বোমার বিস্ফোরণ অব্যহত রেখেছে।
|