অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মঙ্গোলিয়া, হান, হুই এবং মান জাতিসহ ৪৯টি জাতি রয়েছে । তাদের মধ্যে মঙ্গোলিয় জাতির লোকসংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি । যদি পর্যটকরা মঙ্গোলিয় জাতির রীতিনীতি জানতে চান, তাহলে তাদের অবশ্যই তৃণভূমিতে যেতে হবে । সিলিনগোলিট, হুলুনবুইর ও কার্চিনসহ বিভিন্ন তৃণভূমি অনেক জনপ্রিয় । পেইচিং থেকে আসা পর্যটক ওয়াং ই অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমি দেখে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন এভাবে, অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমিতে আসার পর আমার খুব ভালো লাগছে । এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পশুপালকদের জীবনযাপন আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে ।
ওয়াং ই'র মনে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার সবচেয়ে গভীর ছাপ হল তৃণভূমির সুন্দর দৃশ্য ও পর্যটকদের জন্য মঙ্গোলিয় জাতির লোকদের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা । সীমাহীন তৃণভূতিতে পশুপালকদের বাড়িতে প্রবেশ করার পর নারী জেহোভা অবিলম্বে মঙ্গোলিয় জাতির ঐতিহ্যিক রীতিনীতি অনুযায়ী অতিথিদের জন্য দূধ দিয়ে চা তৈরী করেন এবং খাঁসির মাংস রান্না করেন । খাবার খাওয়ার সময় জেহোভা হাতে দূধ দিয়ে তৈরী মদের রূপার পেয়ালা নিয়ে মঙ্গোলিয় জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মদ গান গেয়ে অতিথিদের জন্য নিজের দূধে তৈরী মদ দেন । সাদা ছাগল, হলুদ গরু ও সোনালী উট বিশাল তৃণভূমিতে হাটা বেশ আরামদায়ক , তৃণভূমিতে মঙ্গোলিয় তাঁবুও রয়েছে অনেক । তা হচ্ছে তৃণভূমির আসল দৃশ্য । শহরে থাকা নাগরিকদের অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমিতে এসে নিজস্বভাবে মঙ্গোলিয় জাতির রীতিনীতি উপভোগ করা সত্যিই এক ধরনের চমত্কার অভিজ্ঞতা । অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের পর্যটন ব্যুরোর উপ-প্রধান ইউয়ুন তা পিং বলেছেন, পেইচিং থেকে হোহোট আসতে বিমানে করে মাত্র ৪৫ মিনিট । মহা -সড়ক পথে আসতে সারে চার ঘন্টা এবং ট্রেনে আসতে প্রায় ১১ ঘন্টা সময় লাগে । হোহোট থেকে তৃণভূমিতে যেতে কোনো সমস্যা নেই, সেখানকার দৃশ্য খুবই সুন্দর । আমাদের সড়ক ব্যবস্থা এখন খুবই সুবিধাজনক ।
অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার সিলিনগোলিটের কোংপাওলাগো তৃণভূমি থেকে রাজধানী পেইচিংয়ে পৌঁছতে ৩ ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগে গাড়িতে । তা হচ্ছে পেইচিংয়ের সঙ্গে সবচেয়ে কাছাকাছি একটি প্রাকৃতিক তৃণভূমি । গত কয়েক বছরে তৃণভূমির পশুপালকরা আস্তে আস্তে পশুপালকদের জন্য বাড়ি পর্যটন প্রকল্প শুরু করেছেন । পর্যটকরা পশুপালকদের বাড়িতে থেকে তাদের জীবনযাপন উপভোগ করতে সক্ষম । পশুপালক লিনতাওয়ারচি কয়েক বছর আগে কোংবাওলাগো তৃণভূমিতে ৫টি মঙ্গোলিয় তাঁবু নির্মাণ করেছেন । পশুপালন করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের অভ্যর্থনা করেন । তিনি বলেছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন । আমাদের এ স্থান একটি সুন্দর তৃণভূমি । পর্যটকরা আসলে তৃণভূমিতে পশু পালন করতে পারেন । গরুর দূধ সংগ্রহ করতে পারেন এবং দূধ দিয়ে বীনকার্ড তৈরী করতে পারেন । তারা পশুপালকদের কাছ থেকে নানা ধরনের দূধ জাতীয় খাবার তৈরী করা শেখেন । তা ছাড়া হাত দিয়ে খাওয়া খাঁসির মাংস ও শুষ্ক গরুর মাংস খুবই সুস্বাদু । সেগুলো পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সবুজ খাবারও বটে ।
মঙ্গোলিয় জাতির লোকজন খুবই আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ । বাড়িতে অতিথি আসলে জেহোভা ছাগল জবাই করে খাঁসির মাংস রান্না করেন এবং দূধে তৈরী মদ খেতে দেন । তা ছাড়া মঙ্গোলিয় জাতির লোকজন নানা ধরনের ঐতিহ্যিক দূধের খাবার খেতে পছন্দ করেন । দূধের খাবার ও খাঁসির রোস্ট শ্রেষ্ঠ খাবার হিসেবে অতিথিদের জন্য দেয়া হয় । মদ খাওয়ার পর আনন্দাময় সময় জেহোভা বহু বছর ধরে রাখা মদ অতিথিদেরকে খাওয়াবেন । যদি আপনারা মদ খেতে না পারেন তাহলে মঙ্গোলিয় জাতির লোকজনের মত অনামিকা দিয়ে আকাশ ও মাটির জন্য শ্রদ্ধা প্রকাশ করার জন্য মদ দেন ,তারপর অল্প মদ খেয়ে জেহোভার জন্য ধন্যবাদ জানান । নীল আকাশ, সাদা মেঘ, সবুজ তৃণভূমি ও ঘোড়া পালন ছাড়া অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার আরো সুন্দর দৃশ্য রয়েছে । পশ্চিম অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ারআলাশান হচ্ছে উটের জন্মস্থান। এবং ওরডোসিট মালভূমি সীমাহীন বালি ও পাথর সমুদ্রের জন্য পরিচিত । সোনালী মরুভূমিতে উটে চড়লে এবং মরুভূমির শান্তিময় বিশেষ দৃশ্য উপভোগ করলে, আপনাদের মনে অবশ্যই গভীর ছাপ থাকবে ।
যদি আপনারা অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে মঙ্গোলিয় জাতির পূর্বপুরুষদের স্মরণীয় অনুষ্ঠান দেখা উচিত । মঙ্গোলিয় জাতির মহা বীর চেংগিস খানের সমাধি দীর্ঘকাল ধরে মঙ্গোলিয় জাতির উপজাতি দারহুট লোকজন সংরক্ষণ করে আসছে । প্রতি বছরের চার ঋতুতেই ব্যাপকভাবে পূর্বপুরুষদের স্মরণীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় । এ সময় প্রতিদিন নিয়মিত স্মরণীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়,তা খুই পবিত্র ।
তাছাড়া মঙ্গোলিয় জাতির আরেকটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হল বার্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত নাদামু আমেজ সম্মেলন । নাদামু মঙ্গোলিয় ভাষার অর্থ হচ্ছে বিনোদন । প্রতি বছরের গ্রীষ্মকাল ও শরতকালে তৃণভূমিতে অনুষ্ঠিত হয় এই উত্সব । পশুপালকরা একসাথে মিলে ঘোড়ায় চড়া ও কুস্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয় । এসব প্রতিযোগিতা মঙ্গোলিয় জাতির হাজার বছরের ঐতিহ্যিক জীবনযাপনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত ।
চলতি বছর হচ্ছে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ৬০ তম বার্ষিকী । তখন ৭০ এরও বেশি ধরনের তৃণভূমিতে বেড়ানোর কার্যক্রম ও ছুটি কাটানোর কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে । এসব কার্যক্রম সম্পর্কে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া পর্যটন ব্যুরোর উপ-প্রধান ইউয়ুন তা পিং বলেছেন, তখন অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ায় চতুর্থ আন্তর্জাতিক তৃণভূমি সাংস্কৃতিক উত্সব ও চীনের প্রথম তৃণভূমি সংগীত প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে । ২০০৭ সালের ২৫ থেকে ৩১ জুলাই ১৮তম নাদামু কার্যক্রম , চীনের মঙ্গোলিয় জাতির ফ্যাশন উত্সব ও আর্শান পবিত্র পানি দিবস ছাড়াও হোংশান পাহাড় পূজ্যবস্তু প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, যদি আপনারা বিশাল তৃণভূমিতে মঙ্গোলিয় জাতির রীতিনীতি উপভোগ করতে চান এবং ব্যস্ত শহরের জীবনযাপন থেকে কিছুটা সময় একটু দূরে থাকতে চান , তাহলে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া হচ্ছে একটি ভালো স্থান । সেখানে মঙ্গোলিয় জনগণ সুন্দর নাচ ও সুস্বাদু দূধের তৈরী মদ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বন্ধুদের স্বাগত জানাবেন ।
|