মানুষের আয়ু কত বছর ? এই ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরাও উত্তর দিতে পারেন না । ভিন্ন বিশেষজ্ঞের ভিন্ন মন্তব্য আছে । যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বানিজ্য প্রফেসার , ফিউচারলজি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি লসএঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ফিউচারলজি সংক্রান্ত বার্ষিক সম্মেলনে বলেছেন , মানব জাতি দীর্ঘায়ুর দ্বার খুলতে শুরু করেছে।
বিংশ শতাব্দিতে মানব জাতি নানা রকম ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেছে । ব্যাধি প্রতিরোধ করার জন্য তারা রোধ প্রতিরোধের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে । তার পর নানা রকম এন্টিবাওটিক আর রাসায়নিক চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহৃত হবার সংগে সংগে বসন্ত , পোলিও সহ কতিপয় সংক্রামক রোগ মানব জাতিকে যে বিপন্ন করতো , তা দূর হয়ে গেছে বা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে । বিরাটাকারের যুদ্ধের অবসান হয়েছে । ফলে মানব জাতির গড়পড়তা আয়ু বিপুলমাত্রায় বেড়ে গেছে । উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকদের গড়পড়তা আয়ু ৭৫ বছর ছাড়িয়ে গেছে , কোনো কোনো দেশে ৮০ বছরেরও বেশী হয়েছে আর চীন দেশেও ৭০ বছর ছাড়িয়ে গেছে । মানব জাতির প্রথম স্বাস্থ্য বিপ্লব জয়সূচক সাফল্য লাভ করেছে ।
বর্তমানে মানব জাতির প্রান ও সুম্বাস্থ্যের প্রথম হুমকী এসেছে ক্যান্সার , এইডজ্ আর হৃত্পিন্ড ও রক্তশীলার রোগ থেকে। নতুন শতাব্দিতে চিকিত্সাবিজ্ঞানীরা সার্বিকভাবে এই সব মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাবেন । একবিংশ শতাব্দি প্রাণ বিজ্ঞানের শতাব্দি । বিজ্ঞানীরা নানা রকম প্রেডিস্পোজিংজীন আবিস্কার করেছেন , যেমন উচ্চ রক্ত চাপ ,ডায়াবেটিস , বয়স্কদের ক্ষয়রোগ , মেদবহুলতা আর ক্যান্সার ও আয়ুর সংগে জড়িত কয়েক ধরনের জীন । এই সব গবেষনা জীনের চিকিত্সা ও নতুন ধরনের ঔষধের উন্নয়ন করতে সাহায্য করবে । একবিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে বেশীর ভাগ ক্যান্সার আরোগ্য করার নতুন ঔষধ আবিষ্কৃত হবে । জীনের চিকিত্সা পদ্ধতির সাহায্যে ক্যান্সারের জীবকোষ মেরে ফেলা যায় এবং ক্যান্সারের টিকা দেয়ার ফলে আগামী প্রজন্মের লোকেরা এই রোগের আক্রমনের কবল থেকে রেহাই পাবেন । আগে তথাকথিত দুরারোগ্য বহ রোগ প্রতিরোধ বা চিকিত্সা করা যায় । আজ যকৃতের অকার্যকরীতা আর অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের প্রান হারানোর আশংকা আছে । কিন্তু ভবিষ্যতে আপনার শরীরের কোনো অঙ্গের সমস্যা দেখা দিলে কৃত্রিম অঙ্গ বা প্রানীর অঙ্গ বদল করা যায় । অথবা পুরানো প্রত্যঙ্গের পরিবর্তে ক্লোন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে একটি নতুন প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায় ।
লোকদের অনুমান অনুযায়ী , একবিংশ শতাব্দিতে ত্বক , চক্ষুর কর্নিয়া , রক্ত , রক্তশীলা , হাড় প্রভৃতি কয়েক ধরনের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ লালন পালনের কাজ সম্পন্ন করা যাবে । তার মাধ্যমে পুরানো বা অকার্যকর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নবায়ন করা যাবে। ফলে মানুষ সুস্থ আর দীর্ঘায়ু থাকবেন ।
এখন চীনের প্রয়াত নেতা মাও সে তুংয়ের সুস্বাস্থ্যের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
মাও সে তুঙ সারা জীবনে শরীর চর্চা আর খেলাধূলা পছন্দ করেন । তিনি কাজে ব্যস্ত ছিলেন । কিন্তু তিনি কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে শরীর চর্চা করতেন । তার স্বাস্থ্য ও শরীর পরিচর্যার প্রধানপদ্ধতি হলঃ চুল আঁচড়ানো , মাসাজ , গোসল করা , হাঁটা , পাহাড়ে উঠা , সাঁতার কাটা , নাচ আর ভ্রমণ ।
মাও সে তুং কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাইরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন । তিনি মনে করেন , হাঁটা এক ধরনের সহজ শরীর চর্চা পদ্ধতি । তা চর্চার জন্য কোনো ভাল আবহাওয়া , খেলার মাঠ আর সামগ্রী লাগে না ।
নাচ ছিল মাও সে তুংয়ের সারা জীবনের এক ধরনের আমোদ প্রমোদ তত্পরতা । সংগীতের তালে তালে নাচ করলে যেমন শরীর চর্চা হয় , তেমনি জনসাধারণের সংগে সম্পর্কও নিবিড় হয় ।
চুল আঁচড়ানোও মাও সে তুংয়ের সুস্বাস্থ্যের এক ধরনের পছন্দনীয় পদ্ধতি । তার মাধ্যমে রক্ত চলাচলের কাজ জোরদার করা যায় ।
|