চীনের সু ছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেং তু মূলভূভাগের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত । তাইওয়ান থেকে ছেং তু শহরের দূরত্ব অনেক হলেও গত কয়েক বছর সি ছুয়ান প্রদেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের সংগে সংগে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক তাইওয়ানবাসী এ প্রদেশের রাজধানী ছেং তুতে ব্যবসা করতে এসেছেন এবং সপরিবারে এখানে বসবাস করতে শুরু করেছেন । তারা ছেং তুকে নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করেছেন । যাতে তাইওয়ানবাসীরা ছেং তুতে আরো ভালোভাবে কাজ করতে এবং জীবনযাপন করতে পারেন , সেজন্যে ছেং তু সরকারের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় সবসময় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের অফিসের দেয়ালে টাংগানো রয়েছে একটি পতাকা । পতাকায় লেখা রয়েছে : তাইওয়ানবাসীদের বাঁচিয়ে তুলে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের গভীর ভাবানুভূতি প্রতিফলিত । কথাটি লিখেছেন একজন তাইওয়ানবাসী ইয়ৌ শি মিং । এ পতাকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক হোয়াং শাও থাও বলেছেন , এ পতাকার পেছনে একটি কাহিনী নিহিত রয়েছে । তিনি বলেন ,
গত বছরের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় ইয়ৌ শি মিং হঠাত অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন । চিকিত্সা নেয়ার জন্যে তিনি ছেং তুর একটি হাসপাতালে গেলেন । তখন তার কাছে কোনো টাকা ছিল না । হাসপাতালটি আমাদের সংগে যোগাযোগ করল । সেসময় আমরা বললাম , আপনারা আগেই তার চিকিত্সার ব্যবস্থা করেন । এভাবে হাসপাতালটি তাকে ভর্তি করল ।
ইয়ৌ শি মিংয়ের জীবন বাঁচিয়ে তোলার জন্যে ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় জরুরী ভিত্তিতে তার কর্মীকে হাসপাতালটিতে পাঠায় । এ কর্মী বুঝিয়ে বলার পর হাসপাতালটির চিকিত্সকরা বিনা খরচে ইয়ৌ শি মিংয়ের জন্যে অস্ত্রোপচার করলেন । অস্ত্রোপচার সফল হল । চিকিত্সকরা তাঁর পেট থেকে অনেক পাথর বের করলেন । চিকিত্সকরা বললেন , সময়মত অস্ত্রোপচার না করলে এবং কয়েক ঘন্টা দেরি হলে তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ত ।
ভ্রমণের সময় ইয়ৌ শি মিং তার যাবতীয় প্রমাণপত্র ও টাকা হারালেন । এ অবস্থা জেনে ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় সংগে সংগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগে মিলে তার প্রমাণপত্র উদ্ধার করলেন । কার্যালয়টির কর্মীরা দেখতে পেলেন , তার প্রমাণপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে । তারা তার জন্যে থাকার ব্যবস্থা করলেন , প্রমাণপত্রের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করলেন এবং তার জন্যে তাইওয়ানে ফিরে যাওয়ার বিমান টিকেট কিনলেন । ইয়ৌ শি মিং অবাধে তাইওয়ানে ফিরে যাওয়ার পর বহুবার ফোন করে ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়টিকে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন । তিনি আবার অন্যদের মাধ্যমে পতাকা পাঠিয়ে তার সবচেয়ে সংকটজনক সময় তাকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করার জন্যে কার্যালয়টির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ।
ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় যেমন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তাইওয়ানবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে , তেমনি উদ্যোগের সংগে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের জন্যে পুঁজি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়েছে , যাতে তারা স্বচ্ছন্দে ছেং তুতে তাদের ব্যবসা চালাতে পারেন । কার্যালয়টি বিশেষভাবে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করেছে । যে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীরা সরাসরি এ অভিযোগ কেন্দ্রে যেতে পারেন । কার্যালয়টির অফিসের টেলিফোন ও সংশ্লিস্ট কর্মীদের মোবাইল ফোনগুলোও দিনে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে । কার্যালয়টির কর্মী লেই ছিং ফা ব্যাখ্যা করে বলেছেন ,
কখনো কখনো মধ্যরাত ১ টা থেক ২টো পর্যন্ত কেউ কেউ আমাদের ফোন করে থাকেন । কারো কারো জরুরী ব্যাপার দেখা দিলে সমস্যা সমাধানের জন্যে আমাদের ফোন করে থাকেন । আমাদের ফোন নম্বর প্রকাশিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আর কোনোদিন আমাদের মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয় নি । মোটের উপর এ ব্যবস্থা নেয়ার সুবাদে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তোলার চ্যানেল প্রসারিত হয়েছে । তারা যেমন ওয়েবসাইট ও টেলিফোনের মাধ্যমে অভিযোগ আনতে পারেন , তেমনি সরাসরি অফিসে গিয়ে অভিযোগ আনতে পারেন ।
জানা গেছে , ২০০৬ সালে ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় তাইওয়ানবাসীদের প্রায় এক শ'টি অভিযোগেরনিষ্পত্তি করেছে । এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ অভিযোগের সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের জন্যে ২ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ইউয়ানের ক্ষতি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ।
ছেং তুর তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় ও অন্যান্য বিভাগের প্রচেষ্টায় গত কয়েক বছরে ছেং তুতে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের পুঁজি বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে । বর্তমানে ছেং তুতে তাইওয়ানের পুঁজিবিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ শ'র কাছাকাছি হয়েছে এবং তাদের পুঁজি বিনিয়োগের মোট মূল্য ১.৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে । তাইওয়ানের সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি সমিতি একটানা তিন বছর ধরে মূল ভূভাগের দেড় শ'রও বেশি শহরের পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ ও ঝুঁকির উপর তদন্ত ও মূল্যায়ণ করেছে । এর ভিত্তিতে ছেং তু একটানা তিন বছর ধরে সবচেয়ে শীর্ষ পর্যায়ের সারিতে শামীল হয়েছে ।
তাইওয়ানী ব্যবসায়ী লু হুং চিয়ে ছেং তুর কালো কাঠকে খুবই পছন্দ করেন বলেই ৩ কোটিরও বেশি ইউয়ান বিনিয়োগ করে ছেং তুতে বিশ্বের একমাত্র বেসরকারী কালো কাঠ শিল্পকলা যাদুঘর নির্মাণ করেন । কালো কাঠ খুবই বিরল এবং নবায়ণযোগ্য নয় । চীনের সি ছুয়ান প্রদেশ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কালো কাঠ উত্পাদনকারী স্থান।
লু হুং চিয়ে বলেছেন , ছেং তুর রয়েছে উত্কৃষ্ট প্রাকৃতিক অবস্থা ও অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে , এখানে একদল অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুভাবাপন্ন ছেংতুবাসী এবং একটি নমনীয় ও উদার সরকার রয়েছে । তিনি বলেন ,
এ জায়গায় কালো কাঠ যাদুঘর নির্মাণের সুবর্ণ সযোগ আছে । আবার ছেং তু পৌর সরকার সাংস্কৃতিক পেশার বিকাশকে সমর্থন করে । এ সরকার বিশেষভাবে এখানে কালো কাঠ যাদুঘর নির্মাণের ব্যাপারে অনুমোদন করেছে । ছেং তু পৌর সরকারের নীতি খুবই নমনীয় । সে সবসময় স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশের কথা বিবেচনা করে আসছে ।
|