২৫ জুলাই পেইচিংয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন , গত ৬০ বছরে অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাসার্বিক বিকাশ লাভ করেছে , জনগণের জীবনযাত্রার মানও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতহয়েছে । বিশেষ করে গত কয়েক বছরে অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইতিহাসে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ।
উত্তর চীনে অবস্থিত অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়শাসিত অঞ্চল১৯৪৭ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত হয় । এর এক তৃতীয়াংশ আয়তন হল তৃণভূমি । প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে এখানকার বেশির ভাগ লোক পশুপালন করে সংসার চালাতেন । এখানকার আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাঅত্যন্ত পশ্চাত্পদ ছিল এবং জনগণ অত্যন্ত গরিব ছিলেন ।
তখন থেকে এপর্যন্ত ৬০ বছর পার হয়ে গেছে । কেন্দ্রীয় সরকারের বলিষ্ঠ সমর্থন এবং অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় ১১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যা সম্পন্ন এলাকাটি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে । ৯২ বছর বয়সী প্রবীন খ্যলিকান গত ৬০ বছরে অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধির প্রত্যক্ষদর্শী। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন , চা , কাপড় , পানি , লবণ ও চিনি এবং উট , গরু ,ঘোড়া ও ভেড়া হল অতীতকালের অন্তর্মঙ্গোলিয়ার অর্থনীতি । এখন এই অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে ।
পশু পালন জোরদার করার পাশাপাশি অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নতুন শিল্পায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে । জ্বালানী সম্পদ, ধাতু ঢালাই শিল্প , রসায়ন শিল্প , কৃষি ও পশু জাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ, তৈরী শিল্প এবং হাইটেক সহ ৬টি বৈশিষ্ট্যসম্পন্নশিল্প অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রধান শিল্প ।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০৬ সালে গোটা অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মোট উত্পাদনমূল্য ৪৭৯ বিলিয়ন রেনমিনপিতে দাঁড়িয়েছে । ১৯৪৭ সালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়ের চেয়ে তা ১৯৬ গুণ বেশি ।
অর্থনীতি দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্মঙ্গোলিয় সমাজের বিভিন্ন কাজকর্মেও বিরাট অগ্রগতি হয়েছে । একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , বর্তমানে গোটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ১০০০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল ও ২১টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে । ২১টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি মঙ্গোলিয় ভাষী ছাত্রকে গ্রহণ করে ।
আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা বিকাশে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জনসাধারণ বেশি উপকৃত হন । এ সম্পর্কে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চেয়ারম্যান ইয়াং চিং বলেছেন , গত বছর গোটা অঞ্চলের শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের নাগরিকদের আয় যথাক্রমে ১০ হাজার ইউয়ান ও ৩৩০০ ইউয়ান ছাড়িয়েছে । শুধু "দশম পাঁচ শালা কার্যক্রম" চলাকালে অর্থাত ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে গোটা অঞ্চলে ৯.২ লাখ কৃষক ও পশুপালক দারিদ্রমুক্তহয়েছেন । ৭ লাখ শহুরে লোক নিম্নতম ভর্তুকী উপভোগ করেছেন এবং ৪ লাখ গরিব কৃষক ও পশুপালক আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেন । কর্মসংস্থানহীন পরিবারের কর্মসংস্তান , দরিদ্র ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি , কৃষক ও পশুপালকদের খাওয়ার পানি সহ নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে ।
অতীতকালের এক সময়ে তৃণভূমি এলাকার লোকসংখ্যা ও গবাদিপশু সংখ্যার বৃদ্ধি এবং তৃণভূমির অযৌক্তিক ব্যবহারের কারণে অন্তর্মঙ্গোলিয় তৃণভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ ছিল । বিগত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার পরিবেশ রক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়ায় তৃণভূমির পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে ।
এ সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শাখা কমিটির সম্পাদক চু পো বলেছেন , তৃণভূমির পশুবাহী সংখ্যা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরাসরি গ্রহণ কমিয়ে দিতে চাইলে বদলযোগ্যশিল্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে । বদলযোগ্য শিল্প থাকার কারণে বিপুল সংখ্যক কৃষক ও পশুপালক স্থানান্তরিত হয়েছেন । যার ফলে অর্থনীতিরউন্নতি হয়েছে । জনসাধারণের আয়ও বেড়েছে এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয়েছে ।
|