v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-24 19:52:00    
পেইচিংয়ে ২০জন উইগুর  কিশোর-কিশোরীর জীবনধারা

cri
    দু'বছর আগে ২০জন উইগুর কিশোর-কিশোরী শিল্পকলা চর্চার উন্নতির জন্য পেইচিংয়ে এসেছে । গত দু' বছর ধরে পেইচিংয়ে তাদের লেখাপড়া ও জীবনযাপন কেমন হয়েছে । তাদের সাক্ষাত্কার নেয়ার জন্য সংবাদদাতা তাদের বিদ্যালয়- পেইচিং সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিষয়ক বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন । আজ এই অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    বিভিন্ন জাতির সংহতি ক্লাস নামক বোর্ড টাঙানো একটি ক্লাসরুম থেকে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার শব্দ শোনা যাচ্ছিল । এতে তাদের লেখাপড়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা দেখা দিয়েছে । পেইচিংয়ে এই বিদ্যালয় এমন একটি বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত মাধ্যমিক বিদ্যালয় , যেখানে সংখ্যালঘু জাতির জন্য বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত মাধ্যমিক প্রযুক্তিবিদ ও শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । সিনচিয়াংয়ের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহায়তা করার লক্ষ্যে পেইচিং সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিষয়ক বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত বিদ্যালয় সিনচিয়াংয়ের সংখ্যালঘু জাতির জন্য যোগ্য কর্মী প্রশিক্ষণের দায়িত্ব বহন করছে । ২০০৫ সালে সিনচিয়াংয়ের হোতিয়ান অঞ্চলের ২০জন উইগুর ছেলেমেয়ে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জন্য তাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় ফি মওকুফ করা হয়েছে । পেইচিংয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখাপড়ার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার দক্ষতা বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করে ।

    পেইচিং সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিষয়ক বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্যু পাও সিয়াং বলেছেন , অন্যান্য ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের মতো লেখাপড়া ছাড়াও সংগীত ও নৃত্যের ক্ষেত্রে এই সব ছেলেমেয়েকে পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে ।

    উইগুর জাতি নৃত্য-গীত পরিবেশনে পারদর্শী । সুতরাং এই ক্ষেত্রে তাদের নৈপুণ্য সার্বিকভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে । বৃত্তিমূলকশিক্ষাগত বিদ্যালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের শিল্পকলার প্রতিভা বাড়ানো , যাতে পেইচিংয়ে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় ।

    বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্যু বলেন , সিনচিয়াংয়ে এই সব ছেলেমেয়ের জন্ম । গত দশ-বারো বছরে তারা সিনচিয়াংয়ের বাইরে যায় নি । লেখাপড়ার জন্য তারা দূরবর্তী পেইচিংয়ে এসেছে । আসার গোড়ার দিকে তারা পেইচিংয়ের আবহাওয়া ও পরিবেশের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত ছিল না । তারা সব সময় পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা করতো । সেজন্য পরিবার পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার্থে বিদ্যালয় তাদের প্রত্যেককেই বিনা পয়সায় লং ডিস্টান্স টেলিফোন কার্ডের ব্যবস্থা করেছে । উইগুর জাতি ময়দা দিয়ে তৈরী খাবার ও মাংস খায় । বিদ্যালয়ের খাবার ঘরে তাদের জন্য ভাত ও সবজি বন্দোবস্ত করা হতো । সেজন্য তাদের খেতে ভাল লাগতো না । সুতরাং যখন উত্সব পালিত হয় , তখন খাবার ঘরে তাদের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় খাবার প্রস্তুত করা হয় । এতে তারা নিজেদের পরিবার পরিজনের মতো আদর ও স্নেহ অনুভব করে ।

    বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্যু বলেন , অবসর সময় শিক্ষকের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের বাইরে তাদের আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থাও করা হয় ।

    পয়লা অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবস । তাদের অবসরকালীন কার্যক্রমকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্য বিদ্যালয়ের উদ্যোগে তাদেরকে সেনানিবাস ঘুরিয়ে দেখানো , পাহাড়ে উঠা , নিষিদ্ধ নগর , গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ ও পাইহাই পার্কে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হতো । যার ফলে তাদের সখ , আগ্রহ ও নানা রকম জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছে । তারা সবাই পরিবার পরিজনের মতো আদর ও স্নেহ বোধ করেছে ।

    ইয়াং ফেই এই উইগুর ছেলেমেয়ে ক্লাসের একজন শিক্ষিকা । তিনি বলেন , বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদেরকে নিজেদের ছেলেমেয়ে হিসেবে চোখে দেখেন । তারা তাদের জীবনযাত্রার ওপর খুব যত্ন নেন । তিনি বলেন ,

    এক দিন ক্লাসের এক ছেলে আপেন্ডিসাইটিস রোগে আক্রান্ত হয় । হাসপাতালে থাকা ও চিকিত্সার জন্য গ্যারান্টি হিসেবে আগে থেকে বেশ কিছু অংকের ফি জমা দিতে হবে । কিন্তু তার পরিবারে এত বেশি টাকা পয়সা ছিল না । বিদ্যালয় এই খবর জেনে তার পক্ষ থেকে এই সব টাকা-পয়সা জমা দিয়েছে । এ দিন ছেলেটির অস্ত্রোপচার করা হয় । অস্ত্রোপচার পর ছেলেটি হাসপাতালে সাত দিন ছিল । এই সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা পালাক্রমিকভাবে তাকে দেখাশুনা করেছেন ।

    গত দু' বছরে এই সব ছেলেমেয়ে পেইচিংয়ের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে । এই ক্ষেত্রে তাদের সব অভিজ্ঞতা হয়েছে । রুসতাম সংবাদদাতাকে বলেছে ,

    পেইচিংয়ে আসার পর তারা জীবনযাত্রার দিক থেকে বেশ কিছু শিখেছে । জীবনধারণের ক্ষমতা অনেক বেড়েছে । এখন সবাই জীবনযাপনের সাধারণ অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে ।

    ক্লাসের মনিটার আলিজান মনে করে যে , নৃত্য শেখার বিষয়ে সে বিরাট অগ্রগতি অর্জন করেছে ।

    পেইচিংয়ে আসার আগে সে কখনো নাচ শিখে নি । সে শিক্ষার বিষয় হিসেবে এখন নৃত্য চর্চা করছে । শিক্ষক তাকে খুব পছন্দ করেন । সেজন্য সে খুব খুশি হয়েছে ।

    এই ক্লাসের ছেলেমেয়েরা নাচ-গানের বিবিধ পরিবেশন ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে । রুসতাম বলেছে , যখন বিদেশী অতিথিরা বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন , তখন তাদের নাচ-গান পরিবেশন করতে হয় । এপ্রিল মাসে পেইচিং শিল্পকলা উত্সব উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় তাদের উইগুর নৃত্যে প্রথম হয়েছে ।

    প্রতি দিন তারা খুব সকালে উঠে । লেখাপড়ার পর নাচ-গান চর্চা শুরু হয় । দুপুরে এক ঘন্টা বিরতির পর নাচ-গান চর্চা আবার শুরু হয় । সন্ধ্যায় খাওয়ার পর তাদের নাচ-গান অনুশীলন সাধারনতঃ মধ্যরাত অবধি চলে । অনেকের হাঁটুর ক্ষয়ও হয় । কিন্তু শিল্পকলা সুফলের উত্সাহে তারা খুব উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছে । তারা ক্রমাগতভাবে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করছে ।

    ছেলেমেয়েরা বলেছে , পেইচিংয়ে আরো বেশি জ্ঞান শিখতে হবে । তার পর জন্মভূমির উন্নয়নের জন্য তারা বিরাট অবদান রাখতে পারবে ।

    শিক্ষক-শিক্ষিকা ছেলেমেয়েদের অগ্রগতির জন্য আত্মনিয়োগ করেছেন । ছাত্রছাত্রীদের সুফল অর্জনের জন্য তারা অবশ্যই অনুপ্রাণিত হবেন ।