v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-20 19:58:24    
আমি মা হতে চাই

cri

    ২০০৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চীনের সিছুয়ান প্রদেশের কুয়াং ইউয়ান শহরের ছাওথিয়েন এলাকার গণ হাসপাতালের ধাত্রী বিদ্যা বিভাগের ডাক্তার লি মংছিউ একজন ৩৬ বছর বয়সী গর্ভবতীকে গ্রহণ করেছেন । ২০-৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডাক্তার লি এই উচ্চ বয়সী গর্ভবতী সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অমনোযোগী হতে সাহস করেন না । তার ইতিহাস শুনে ডাক্তার লি বিষ্মিত হন । এই গর্ভবতীর নাম ফং ইংলিন । তিনি ছাওথিয়েন এলাকার একটি প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রামের নাগরিক । এর আগের ১৪ বছরের মধ্যে তিনি মোট ১৮বার গর্ভ ধারণ করেছিলেন । এবার তার ১৯তম গর্ভধারণ । ১৪ বছরের মধ্যে ১৮বার গর্ভধারণ করা, এর অর্থ হল প্রতি বছরে দুবার করে গর্ভধারণ করা । ব্যাপারটা বিশ্বাস করা কঠিন । ফং ইংলিন কেন এত ঘনঘনভাবে গর্ভধারণ করেন , তার বাচ্চারা কোথায় আছে ?

    ১৯৯৩ সালের বসন্ত উত্সবের পর ছাও থিয়েন এলাকার ইয়ু তোং থানার ইয়ু লিন ছুন গ্রামের সুন ইইন ও ফং ইংলিনের বিয়ে হয় । বিয়ের পর দুজন বাচ্চা নিতে খুব আগ্রহী । বেশী দিন হল না তাদের প্রথমবাচ্চার জন্ম হয় । কিন্তু বাচ্চার জন্মগ্রহণে তারা বাবা মা হওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি । ছ'দিন পর শরীর হলুদ হওয়ায় বাচ্চা মারা যায় । বাচ্চার আকস্মিক মৃত্যু সুন ইইং ও ফং ইংলিনের ওপর ভারী আঘাত হানে । পাহাড়ী গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং চিকিত্সার অবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত বলে বাচ্চার অকাল মৃত্যু এ বিষয়টির ওপর তারা গুরুত্ব দেয়নি। তাদের মতে এটা একটি আকস্মিক ঘটনা । বাচ্চা কেন মরে যায় , সে রোগে আক্রান্ত না অন্য কোনো কারণ আছে ? তারা জানেন না । তার পর তাদের দ্বিতীয় বাচ্চার জন্ম হয় । সবই স্বাভাবিক । কিন্তু সাত মাস পর একই ঘটনা ঘটে । শরীর হলুদ হয়ে বাচ্চা মারা যায় ।

    দ্বিতীয় বাচ্চার মৃত্যুর পর সুন ইইং ও ফং ইংলিন স্বামী-স্ত্রী দুজন ব্যাপারটির উপর গুরত্ব দিতে শুরু করেন । বাচ্চার মৃত্যুর সত্যিকার কারণ খুঁজে বের করার জন্য তারা মজুরী করে যে উপার্জন পান তা দিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করান । কিন্তু প্রত্যেকটি পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক । তারা বাধ্য হয়ে বাচ্চার মৃত্যুর দুঃখ সহ্য করেন । পরবর্তী কয়েক বছরে তাদের তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম বাচ্চার জন্ম হয় । কিন্তু তারা সবাই জন্মের দ্বিতীয় দিনে মারা যায় । সুন ইইং ও ফং ইংলিন যাতে নিজেদের বাচ্চা পেতে পারেন প্রথমে তাদের বাচ্চাদের মৃত্যুর কারণ জানতে হবে । হাসপাতালের পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে , ফং ইংলিনের রক্তের গ্রুপ আর-এইচ নেগ্যাটিভ বি-গ্রুপের । এ ধরণের রক্তগ্রুপ খুব কম দেখায়। তাই সম্ভবত মায়ের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিল না থাকায় রক্তকোষ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে নবাগত শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ ।

    সাতটি পরিপক্ক বাচ্চা ছাড়া ফং ইংলিনের পাঁচটি সাত-আট মাসের মরা বাচ্চার জন্ম হয় । এর পর দুবার স্বাভাবিক গর্ভপাত হয় । তারা অধিক থেকে অধিকতর চাপের সম্মুখীন । তাদের বাচ্চা জন্ম দেয়ার ইচ্ছা অত্যন্ত তীব্রতর হয়ে ওঠে । কিন্তু তারা জানেন না, কিভাবে বাচ্চার মৃত্যুর কালো ছায়ার দুর্ভাগ্য ছেড়ে দিতে পারেন । এর পর ফং ইংলিন পরপর একটানা চারবার গর্ভবতী হয়েছিলেন । আবার বাচ্চার মৃত্যুর দুঃখ ভোগের ভয়ে তারা কৃত্রিম গর্ভপাত গ্রহণ করলেন । ফং ইংলিন সাহস করে আবার গর্ভবতী হলেন । তিনি আশা করেন, ডাক্তারের সাহায্যে তার বাচ্চা বাচঁবে। ডাক্তার লি মংছিউ ফং ইংলিনের আচরণে মুগ্ধ হন । তিনি ফং ইংলিনকে তার মা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবেন । ডাক্তার লির প্রস্তাবে ফং ইংলিন হাসপাতালের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন । যাতে তিনি সহজভাবে যে কোনো সময় হাসপাতালে পরীক্ষা করতে পারেন ।

    চলতি বছর ফং ইংলিন আবার গর্ভবতী হন । এটা তাঁর ১৯তম গর্ভধারণ । পেটের বাচ্চা ৩৯ সপ্তাহ হয়েছে । প্রসবের দিন ১৪ মার্চ বিকেল আড়াইটার সময় ফং ইংলিনকে শল্যচিকিত্সা রুমে পাঠানো হয় । বিকেল ২ টা ৪৩ মিনিটে ডাক্তার তার শল্যচিকিত্সা করালেন । তার একটি ছেলে হল । বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক । তাড়াতাড়ি ছেলেকে তদারকী রুমে পাঠানো হয় । সবাইর ভয় যে, এই ছেলের শরীরেও তার ভাইবোনের মতো হলুদ দেখা দেবে ।

    সবাইর আশংকা ঠিক হয়েছে । দ্বিতীয় দিন সকালে ছেলেটির গোটা শরীর সাংঘাতিকভাবে হলুদ হয় । ডাক্তারের প্রাথমিক পরীক্ষা অনুযায়ী মায়ের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিল না থাকায় রক্তকোষ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ছেলেটির এই অবস্থা হয়েছে । ছাওথিয়েন হাসপাতালের কলাকৌশলগত ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় বলে শিশুকে তাড়াতাড়ি কুয়াংইউয়ান শহরের গণ হাসপাতালে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় । পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা গেছে , ছেলেটির মা'র রক্ত আর এইচ নেগ্যাটিভের বি-গ্রুপ । কিন্তু ছেলেটির রক্ত আর এইচ পজিটিভের ও গ্রুপ । বলাবাহুল্য ছেলেটি নবাগত শিশু রক্তক্ষরণে আক্রান্ত । তার পর ছেলেটিকে রক্ত বদল করার ব্যবস্থাসম্পন্ন সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং হুয়াসি হাসপাতালে পাঠানো হয় ।

    ডাক্তার স্বীকার করেছেন, গুরুতর জন্ডিস এবং সাংঘাতিক অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত বলে যে কোনো সময় ছেলের প্রাণ হারানোর আশংকা আছে । সুতরাং এক্ষুনি তার রক্ত বদলাতে হবে । কিন্তু হাসপাতালের রক্ত ব্যাংকে ছেলের সঙ্গে খাপখাওয়ানোর মত রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না । ছেলেটি প্রাণ হারানোর বিপদের সম্মুখীন । ঠিক এই সময়ে এক ডাক্তার প্রস্তাব করলেন , হাসপাতালে সংরক্ষিত আর এইচ নেগ্যাটিভের ও-গ্রুপের রক্ত এবং আর এইচ নেগ্যাটিভের এবি গ্রুপের মিশানো রক্ত দিয়ে বাচ্চার রক্ত বদল করা । প্রস্তাব অনুযায়ী রক্ত বদল করার পর ছেলের শরীরে জন্ডিসের চিহ্ন শিগ্গীরই সেরে যায় এবং দৃশ্যতঃ লাল আভা ফিরে আসে । বাচ্চা বেচেঁ গেছে ।