মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত চার'পক্ষীয় বৈঠক ১৯ জুলাই পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র উপস্থাপিত "মধ্য প্রাচ্যের শান্তপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের" প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। হামাসের গাজা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের পর এটি হলো মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত চার পক্ষের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা । মধ্য প্রাচ্য সমস্যা বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনী ব্লেয়ার প্রথমবারের মতো আলোচনায় অংশ নিয়েছেন । এ জন্য এর উপর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, ই ইউ'র কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জাভিয়ের সোলানা, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সার্গেই লাভরভ এবারের বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের পর বান কি-মুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত চার পক্ষ ১৬ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রকাশিত বিবৃতি স্বাগত জানিয়েছে । রাইস বলেছেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দ্রুতভাবে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করার জন্য এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব নবায়ন করা হয়েছে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে ব্লেয়ার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ দু'টি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ সমাধানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করলে, ইসরাইলের নিরাপত্তার সুনিশ্চয়তা পাওয়া এবং ফিলিস্তিনের কার্যকর প্রশাসন ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব হবে।
এবারের আলোচনা শুরু করার কয়েক দিন আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে ইসরাইল, ফিলিস্তিন জাতীয় ক্ষমতা সংস্থা এবং কিছু কিছু আরব দেশের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে মধ্য প্রাচ্যের শান্তিপূর্ণ আলোচনা পুনরায় শুরু করা যায়। চারপক্ষীয় বৈঠকের সভাপতি , ই ইউ'র পালাক্রমিক চেয়ারম্যান দেশ পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লুইস আমাদো ১৯ জুলাই রাইসের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের উপস্থাপিত প্রস্তাবের প্রভাব এবারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাইস জোর দিয়ে বলেছেন, মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের লক্ষে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের উচিত অনেক কাজ করা।
উল্লেখ্য যে, এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া এবং ইউরোপ তিন পক্ষ পৃথক পৃথকভাবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অভিমতের প্রতি সমর্থনের কথা আরেকবার ঘোষণা করেছে। রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আব্বাস হচ্ছেন ফিলিস্তিনী জনগণের নির্বাচিত নেতা । যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে একজন বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে মনে করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। তিনি আরো মনে করেন যে, হামাস এমন কি ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকারও প্রত্যাখান করে বলে দু'পক্ষের শান্তিপূর্ণ আলোচনা শুরু করার জন্য একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমাদো বলেছেন, হামাসের অভিমত পরিবর্তন না হলে, ই ইউ তার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করবে না ।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপ তিন পক্ষ হামাসের অভিমতকে অগ্রাহ্য করলেও এবারের বৈঠকে গাজা অঞ্চলের ফিলিস্তিনীদেরকে সাহায্য করার নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর আগে , কিছু কিছু ত্রাণ সংস্থাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা অঞ্চলের উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রশমিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় স্থানীয় জনগণের দরিদ্র অবস্থা আরও বেশি বেড়েছে।
এবারের আলোচনায় ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার মধ্য প্রাচ্য সমস্যার একজন বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আগামি সপ্তাহে ইসরাইল ও জর্দান নদীর পশ্চম তীর সফর করবেন। এটি হবে মধ্য প্রাচ্য সমস্যার বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, এ অঞ্চলে তাঁর প্রথম সফর।
|