v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-19 20:12:04    
পাথরবনের গড়ে ওঠা

cri
    পাথরবনের আকর্ষণশক্তিকে মানুষ কখনো বুঝতে পারে না এবং ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একই পাথরচূড়া, একই দৃশ্য, ভিন্ন ঋতুতে, ভিন্ন আবহাওয়ায়, এমনকি একই দিনের ভিন্ন সময় তাকে দেখা, ফলে ভিন্ন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

    পর্যটকদের পাথরবনে ভ্রমণ করা এবং পাথরবনের অতিপ্রাকৃত প্রশংসা করার, অবশ্যই কিছুটা কারণ রয়েছেঃ এই বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য কবে থেকে সৃষ্টি? কখন থেকে এটা অস্তিত্ব বিরাজমান? কিভাবে এ পর্যন্ত চলে এসেছে? এখন আমরা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পাথরবনের উপকথা বলবো।

    পাথরবনের গড়ে ওঠা সম্পর্কে, স্থানীয় এলাকায় একটি কিংবদন্তী রয়েছে। অনেক আগে সানি জাতির একজন বীর চিন ফেন রুও কে মানুষদের জন্য নদী ছিপি এবং বাঁধ তৈরী করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি দক্ষিণদিকের পাথর উত্তর দিকে নিয়ে গেলেন। যখন তিনি পাথরবন জেলায় পৌঁছেছেন, সুর্য আস্তে আস্তে উঠল। জাদু শক্তি ধারী কাক বীরের বীরত্বপূর্ণ কাজ ভেস্তে গেল। সব পাথর পাথরবন স্থবির হয়ে গেল। ফলে ঘন ঘন পাথরবন গড়ে তোলা হয়।

    আসলে, পাথরবন গঠনের প্রায় ৩০ কোটি বছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এর প্রক্রিয়া খুব জটিল। বিশ্ব উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিশেষজ্ঞ লিয়াং ইয়োং নিং মনে করেন পাথরবনের গঠন একটি ভূবিদ্যাগত কিংবদন্তী বলা যায়। তিনি বলেছেন,

    ২৭ কোটি বছর আগে, এখানে ছিল সমুদ্র। পৃথিবীর গঠনপ্রণালীর কারণে এখানে আস্তে আস্তে পাথর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সমুদ্র ভূমি পরিবর্তিত হয় এবং ভূমি পাহাড় সবই পরিবর্তিত হয়। সারা প্রক্রিয়ায়, পাথরবনের শিলা পানির ভেতরেই গঠিত হয়েছে। তারপর আগ্বেয়গীরির কারণও রয়েছে এর গঠনে। পৃথিবীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাথরবন অব্যাহতভাবে গড়ে উঠেছে। আসলে প্রতিটি পাথরবন ভিন্ন ভূবিদ্যাগত সময়ে গঠিত হয়।

    পাথরবনের গঠন সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট ভূবিদ্যাগত বিশেষজ্ঞগণ এর বৈজ্ঞনিক ব্যাখ্যান করেছেনঃ ইয়ুন কুই পার্বত্য অঞ্চল গড়ে ওঠার পাশাপাশি, পাথরবন বিশেষ ভৌগলিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবর্তনের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞনিক মূল্য এবং তার বিশেষ সৌন্দর্য বৈজ্ঞানিক মূল্যের কারণে, ২০০৪ সালে ইয়ুন নানের পাথরবনকে ইউনেস্কো প্রথম দফা বিশ্ব ভূবিদ্যাগত পার্ক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয় এবং এই মাত্র শেষ হওয়া বিশ্ব উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি সম্মেলনে, বিশ্বের প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। পাথরবনে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকদের এখানকার বিস্ময়কর দৃশ্য অনেক ভালো লাগে। ব্রিটেনের পর্যটক মাদাম সারি আছের বলেছেন,

    পাথরবনটি চমত্কার! এর কথা ব্রিটেনে আমি কখনও শুনি নি, কখনও দেখি নি!

    পাথরবন সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকষর্ণের সঙ্গে সঙ্গে, মাদাম সারির মত পাথরবনে আসা পর্যটকও এখন অধিক থেকে অধিকতর। ২০০৬ সালে, পাথরবন দর্শনীয় স্থানে দেশী-বিদেশী প্রায় ২.৪ মিলিয়ন পর্যটক এসেছে। গড়পড়তা প্রতি দিন ২০ হাজার পর্যটক সৃমটি ভ্রমণ করে। কীভাবে তাদের জন্য ভালো পরিসেবা সরবরাহ করা যায় এবং কীভাবে পাথরবন সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা যায় সে বিষয়ে পাথরবন দর্শনীয় স্থানের প্রশাসকদের। ঘুম নেই দর্শনীয় স্থানের প্রশাসন ব্যুরোর পরিচালক লি চেং পিং বলেছেন,

    এখন পাথরবন হচ্ছে বিশ্বের প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ও বিশ্ব ভূবিদ্যাগত পার্ক। এর প্রশাসন ও সংরক্ষণ স্থাপনা বিশ্ব পর্যায়ের মানে পৌঁছানো দরকার। বিশ্ব পর্যায়ের মানের আসলে মানদণ্ড নেই। তবে একটি মানদণ্ড রয়েছে। এটা হচ্ছে সাংস্কৃতিক সম্পদায়ন ও প্রকৃতির রূপ। সাংস্কৃতিক সম্পদায়ন মানে সকল স্থাপনা পর্যটকদের জন্য পরিসেবা সরবরাহ করা এবং প্রাকৃতির রূপ ও রস মেশানো হচ্ছে দর্শনীয় স্থানের স্থাপনা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়া।

    ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পাথরবন প্রথম বারের মত বিশ্ব ভূবিদ্যাগত পার্কের স্বীকৃতি পাবার পর, পাথরবনের প্রশাসন ব্যুরো প্রায় ২০ কোটি ইউয়ান দিয়ে ধাপে ধাপে পাথরবনের আগের অবস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং পাথরবনের পর্যটন সম্পদের প্রতি আরো বৈজ্ঞান সম্মত সংরক্ষণ ও প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছে। বর্তমানে দর্শনীয় স্থানে ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারের দৃশ্য ফিরিয়ে আসা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের শিশু-গাছ লাগানো হয়েছে। তাছাড়া দর্শনীয় স্থানের ১৮০টি পথ প্রদর্শন বোর্ডে চীনা, ইংরেজী, ফরাসী, জাপান ও কোরিয়া ৫ ধরনের ভাষা রয়েছে।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দর্শনীয় স্থান পাথরবনের উন্নয়নের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ করেছে। প্রোফেসার লিয়াং ইয়োং নিং বলেছেন, কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে পাথরবনের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা আরো বিজ্ঞান সম্মত করা হবে। তিনি বলেছেন,

    এখন অনেক প্রকল্পই তৈরী হচ্ছে। এর নমুনা অনুযায়ী নির্মাণ এবং বিশেষজ্ঞদের উপদেশও দরকার। গত কয়েক বছর পাথরবন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মহলের ২০জনকে উপদেষ্টা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়, তখন কঠোর নমুনা গৃহীত হবে। যাতে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

    তাছাড়া, স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ নিয়মিতভাবে পাথরবন দর্শনীয় স্থানের আবহাওয়া, পানি পরীক্ষা করতে হবে। যাতে সেখানকার আবহাওয়ার মান নিশ্চিত করা যায়। প্রতি বছর তাদের শ্রমিকরা দর্শনীয় স্থানের কাছাকাছি জেলায় গিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে প্রচার কাজ চালায়। যাতে গ্রামীণ লোকদের সম্পদ সংরক্ষণ চেতনা বাড়ানো যায়।