চীনের আইনজীবি থোং লি হুয়ার জন্যে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে । কেন না , গত ১ মে তিনি জাতীয় ১ মে শ্রম পদকে ভূষিত হয়েছেন । এটি চীনের প্রত্যেক শ্রমজীবির জন্যে একটি বিরাট সম্মান । থোং লি হুয়া কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অবদান রেখেছেন বলে এ বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছেন ।
চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে কর্মরত কৃষি শ্রমিকদের জন্যে পেইচিং কৃষি শ্রমিক আইনগত সহায়তা কেন্দ্র অচেনা কিছু নয় । এ কেন্দ্র তাদেরকে আইনগত পরামর্শ দিতে পারে এবং বিনা খরচে তাদের পক্ষ থেকেই মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে । এ আইনগত সহায়তা কেন্দ্র পেইচিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত । প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো কৃষি শ্রমিক এখানে আসেন । তাদের কেউ কেউ এখানে এসে নানা ধরণের আইনগত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন । আবার কেউ কেউ অবিচারের সম্মুখীণ হলে সাহায্য পাওয়ার জন্যে এখানে আসেন ।
২৫ বছর বয়সের ওয়াং সুং মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে পেইচিংয়ে এসেছেন । ৫ বছর আগে তিনি একটি প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করতে শুরু করেন । কিন্তু ৫ বছরের মধ্যে কারখানাটি তার সংগে কোনো শ্রম প্রটোকল স্বাক্ষর করে নি এবং আইন মোতাবেক তার জন্যে শ্রমরত অবস্থায় আহত হওয়া , চিকিত্সা ও অবসর যাপন সংক্রান্ত বীমা ব্যবস্থা করে নি । সুতরাং তিনি এ আইনগত সহায়তা কেন্দ্রে এসেছেন । তিনি বলেন ,
আমার সহকর্মীদের পরামর্শে আমি এখানে এসেছি । শুনেছি , এ কেন্দ্র আমাদের জন্যে আইনগত পরামর্শ দিতে পারে এবং বিনা খরচে আমাদের পক্ষ থেকেই মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে । কাজেই আমি এখানে এসেছি । আশা করছি যে , এ কেন্দ্রের সাহায্যে আমার কারখানা আমার জন্যে বীমা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
চীনের নগরায়ন গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তিকে আকৃষ্ট করেছে । এসব কৃষি শ্রমিক চীনের শহরগুলোর গঠনকাজে অনেক অবদান রেখেছেন । পাশাপাশি তাদের অধিকার ও স্বার্থ লংঘনের ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে । এর প্রধান কারণ হচ্ছে , শহরগুলোর জীবনযাপনের পরিবেশ তাদের কাছে একেবারে অপরিচিত । অবশ্য তাদের নিজেদের শিক্ষাগত মানের সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষমতাও ক্ষীণ ।
আইনজীবি থোং লি হুয়া পেইচিংয়ের এ আইনগত সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন । তার বয়স ৩৬ বছর । আইনজীবি হিসেবে তিনি ১২ বছর ধরে কাজ করেছেন । চার বছর আগে একটি ঘটনার কারণে তিনি বিনা খরচে কৃষি শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা করার পথে পদার্পণ করেছেন । তিনি বলেন ,
আমার ছোটবেলাকার দুজন সাথী থিয়ান চিনে কাজ করার সময় যথাসময় তাদের ৮ হাজার ইউয়ান বেতন পেলেন না । দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা করেও তারা নিজেদের বেতন আদায় করতে পারলেন না । নিরাশ হয়ে তারা আমাকে ফোন করলেন । আমি আমার দুই সাথীকে সাহায্য করতে চাইলাম । তাছাড়া আমি দেখতে চাইলাম , কৃষি শ্রমিকদের সামনে কি কি সমস্যা আছে ? আমি এ ক্ষেত্রে জড়িত হতে চাইলাম ।
থোং লি হুয়া ও তার সহকর্মীরা কৃষি শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের খরচের উপর একটি তদন্ত চালালেন । তদন্তের ফলাফল তাদর হতবাক করল । কৃষি শ্রমিকদের নিজেদের দেরিতে দেয়া এক ইউয়ান বেতন আদায় করতে হলে তার তিনগুণ খরচ ব্যয় করতে হয় । থোং লি হুয়া গ্রামাঞ্চলে বড় হয়ে উঠেছেন । তিনি নিজের জ্ঞান দিয়ে যত দূর সম্ভব কৃষি শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা করার শপথ নিলেন । তাই ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থোং লি হুয়া এ আইগত সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি বলেন ,
আমরা কৃষি শ্রমিকদের কাছ থেকে এক পয়সাও নিই না । তাদের সংগে ট্যাক্সিতে করে বাইরে যাওয়ার সময় সবসময় আমরা টাকা দিই । কৃষি শ্রমিকদের সংগে খাওয়া-দাওয়ার সময়ও সবসময় আমাদের আইনজীবিরা টাকা দেন । কোনো কোনো মামলা নিষ্পত্তি হলে কৃষি শ্রমিকরা কিছু জরিমানা লাভ করলেও আমরা তাদের কাছ থেকে এক পয়সাও নিই না ।
থোং লি হুয়া ব্যাখ্যা করে বলেছেন , তার আইনগত সহায়তা কেন্দ্র পেইচিং আইন ব্যুরোর কাছ থেকে বলিষ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে । এখন তারা প্রতিটি মামলা নিষ্পত্তির পর সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ভাতা পান । পাশাপাশি এ কেন্দ্র সমাজ থেকেও কিছু চাঁদা তোলার চেষ্টা করে ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত চীনের আইনজীবিরাও সমাজের মধ্যে উচ্চবিত্ত পর্যায়ে রয়েছেন । অথচ থোং লি হুয়া ও তার আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের সহকর্মীদের বেতন কেবল পেইচিংয়ের সাধারণ কর্মচারীদের সমান সমান । বিলাসবহুল দালানকোঠায় বসানো সেসব আইনজীবি কার্যালয়গুলোর তুলনায় থোং লি হুয়ার অফিস খুবই সহজ ও সরল ।
আমাদের সংবাদদাতার বিস্ময় দেখে থোং লি হুয়া ব্যাখ্যা করে বলেছেন ,
একটি কল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে আমাদের যথেষ্ট টাকা নেই । বিলাসবহুল অফিসের উপরও আমরা গুরুত্ব দিই না । আমরা আমাদের সীমিত পুঁজি আমাদের সার্ভিসে নিয়োজিত করতে চাই এবং আরো বেশি সংখ্যক লোকের সেবা করতে চাই ।
মোট দশ বারোজন পেশাজীবি এ কেন্দ্রে কাজ করেন । থোং লি হুয়ার প্রভাবে সকলে মনেপ্রাণে প্রতিটি মামলার নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন এবং ধৈর্য্যের সংগে প্রত্যক কৃষি শ্রমিকের জন্যে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন । এ কেন্দ্রের আইনজীবি সিং ওই বলেছেন ,
তার ভাবমানসে অভিভূত হয়ে আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি । আমার মনে হয় , তিনি একজন সত্ মানুষ । গণ কল্যাণের জন্যে তিনি অনেক বাস্তবভিত্তিক কাজ করেছেন । আমরাও তার মত সত্ লোক হতে চাই এবং গণ কল্যাণের জন্যে কিছু করতে চাই । যদি আমরা টাকার কথা বেশি চিন্তা করি , তাহলে নিশ্চয়ই এখানে আসতাম না ।
আজ থোং লি হুয়া চীনা আইনজীবি সমিতির আইনগত সহায়তা কমিটির একজন দায়িত্বশীল সদস্য । তিনি আনন্দের সংগে লক্ষ্য করেছেন যে , গত কয়েক বছরে কৃষি শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে চীন সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে ।
|