প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সবাই ভালো আছেন তো। আমি --- চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে অনুষ্ঠান পরিবেশন করছি। সময়মতো সুরের ভুবন আসর শুনার জন্য সকল শ্রোতাবন্ধুদের স্বাগত জানাচ্ছি। চীন একটি বহু জাতিক দেশ। চীনের ৫৬টি জাতির নিজস্ব সংগীত সংস্কৃতি রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানেআমরা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশে গিয়ে সেখানকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাশি জাতির লোক সংগীত শুনবো এবং নাশি জাতির জীবনযাপন ও বিশেষ রীতিনীতি উপভোগ করবো।
বন্ধুরা, এখন আপনারা নাশি জাতির লোকসংগীত "সুন্দর সাদা মেঘ" গানটি শুনছেন। এটা হচ্ছে নাশি জাতির একটি ঐতিহ্যিক প্রাচীন লোক সংগীত । অতীতে নাশি জাতির লোকেরা সবসময় "সুন্দর সাদা মেঘ" গান গেয়ে গেয়ে মৃত্যু আত্মীয়স্বজনের প্রতি শোক প্রকাশ করেন। গানে মৃত্যু লোককে পূর্বপুরুষদের বসবাস স্থান উত্তরাঞ্চলে ফিরে গিয়ে শান্ত হওয়ার কামনা করা হয়েছে। গানের কথা এমনি, "সাদা মেঘ কত সুন্দর, সাদা সারস মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়ায়, ছোট বাজপাখি তার পিছনে থেকে একসাথে উত্তর দিকে যাচ্ছে। তারা এবার গেলে আর ফিরে আসবে না।"
নাশি জাতি প্রধানত চীনের ইউনান প্রদেশের লিচিয়াংয়ের নাশি জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলায় থাকে। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। নাশি জাতির জনগণ নাচ গান করতে পারদর্শী। নাশি জাতির লোকসংগীত সমৃদ্ধ ও রঙ্গিন। লোক সংগীতের মধ্যে প্রধানত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শ্রম গান, কাহিনীমূলক গান, পাহাড়ী গান ইত্যাদি। নাশি জাতির কাহিনীমূলক গানের নাম "গুছি"। এ ধরনের গান হচ্ছে নাশি জাতির জনপ্রিয় প্রাচীন লোকসংগীত। ধীরে ধীরে সুরের মধ্য দিয়ে নাশি জাতির মনোভাব ও চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। "গুছি" এর গানের কথা সাধারণত খুব লম্বা, তার মধ্যে একটি সম্পূর্ণ গল্প থাকে। মাঝে মাঝে কোন এক দৃশ্য দেখে গায়ক হঠাত্ একটি গানের কথা রচনা করে গেতে পারেন।
এই মাত্র আপনারা নাশি জাতির এক লোকসংগীত "গুছি" শুনলেন। এই গানে নাশি জাতির জনগণ জীবনের প্রতি নিজের ভালোবাসা ও স্বদেশের প্রতি প্রশংসার কথা বলা হয়েছে। এবার আমরা নাশি জাতির একটি প্রেম গান শুনবো। এই গানের নাম "শিশো"। নাশি জাতির যুবক-যুবতীরা প্রেম করার সময় এই গানটি গেতে পছন্দ করেন। সাধারণত পুরুষ ও নারীর দ্বৈত কন্ঠে এই গানটি গাওয়া হয়। গানের কথা কবিতার মতো।
গানের কথা এমনি "ইয়ুলোং বরফ পাহাড়ের ১৩টি শৃঙ্খ অতি উচু। cypress এর ওপরে বরফ জমেছে। তুমি এসে আমার সঙ্গে দেখা করো। পানির মনে প্রেম থাকলে সাগরে পরিণত করা যায়। মাছের মনে প্রেম থাকলে বিরাট ড্রাগণে পরিণত করা যায়।"
নাশি জাতির যুবক-যুবতীরা প্রায়শই পরস্পরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দল বেঁধে বাগানে গিয়ে গান গায়। তারা নদী বা পাহাড়ের দু'পাশে দাঁড়িয়ে "শিশো" গানের সুরে প্রশ্র ও উত্তর করেন। এর মাধ্যমে নিজের প্রেমিক বাছাই করেন। "নদীর দু'তীরে পরস্পরকে দেখা" নামে গানটিতে এমন দৃশ্যের বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা এমনি , "নদীর দু'তীরে আমরা পরস্পরকে দেখছি। ছোট বন পাহাড়ের চূড়ে ফোটানো ফুলের মতো। সেই ফুটটি আমি ধরতে পারি না, ফলে রোজ তোমার কথা মনে পড়ে। আমি একটি মোমাছি হতে চাই, নদী অতিক্রম করে দিন রাত তোমাকে পাশে থাকবো।" বন্ধু, এখন শুনুন "নদীর দু'তীরে পরস্পরকে দেখা" নামে গানটি শুনুন।
এবার আমি আপনাদেরকে একটি শ্রম গান শুনাবো। শ্রম গান হচ্ছে নাশি জাতির লোকেরা কাজের সময় গাওয়া এক ধরনের গান। এ ধরণের গানের বিষয় ব্যাপক, কাজের সময় গান গেলে মন হাল্কা হয় এবং শরীরের ক্লান্তিকে কমানো যায়।
গানের কথা হলো, "আমাকে অপেক্ষা করো, অপেক্ষা করো। আমরা একসাথে ধানের বীজ লাগাই। আমাকে অপেক্ষা করো, অপেক্ষা করো। আমরা মিলিতভাবে সামনে এগিয়ে যাই।"
নাশি জাতি হচ্ছে একটি আতিথেয়তা জাতি। উত্সব দিনে বা অতিথি আসলে তাঁরা মনোরম "মদ গান" গেতে হয়। এর মাধ্যমে অতিথিদের অভ্যর্থনা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
গানের কথা এমনি, "মদ ভরা jug মাননীয় অতিথিদের অপেক্ষা করে। অতিথি আসলে রুপালী কাপ দিয়ে মদ রেখে আমরা দুটি হাত মাথার উপরে তুলিয়ে অতিথিকে খাওয়াই। বন্ধু আসলেও এক কাপ মদ খাও।"
শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের নাশি জাতির কয়েকটি লোকসংগীত শুনলেন। আজকের সুরের ভূবন আসর এখানে শেষ করছি। আগামী সপ্তাহের একই আসরে আবার কথা হবে।
|