এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শুরু হওয়া সপ্তম চীনা শিল্প উত্সব এশিয়ার সবচেয়ে বড় বসন্তকালীন শিল্প উত্সব । বিশ্বের বিশটি দেশ ও অঞ্চলের ৪০টিরও বেশি শিল্পী দল এ উত্সবে অংশ নেয় ।
বর্তমান শিল্প উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ' তৃণভূমি ' নামে একটি গীতিনাট্য পরিবেশিত হয় । এই গীতিনাট্যে তৃণ্যভূমির সংখ্যালঘু মঙ্গোলিয় জাতির উত্পত্তি , পশুপালকদের জীবন ও উন্নয়ন প্রতিফলিত হয়েছে । এ গীতিনাট্যে মঙ্গোলিয় জাতির প্রার্থনা অনুষ্ঠান , প্রাচীন রণক্ষেত্র , সীমাহীন তৃণভূমি ও তাবুর বাইরে ভেসে আসা মঙ্গোলিয় জাতির ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র-- ঘোড়ার মাথার আকারের বাদ্যযন্ত্রের সুমধুর সুরে মঙ্গোলিয় জাতির ইতিহাস চিত্রিত করা হয়েছে।
চীনা জাতির ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের । প্রাচীনকাল থেকেই চীনারা বৈশিষ্ট্যময় নৃত্য সৃষ্টি করেন । আজ থেকে দু হাজার বছর আগের হান রাজবংশের নৃত্যশিল্প বেশ উন্নত ছিল । এ উত্সবে চীনের নৃত্যশিল্পীরা যে ' তা ফেং কো ' নামে একটি নৃত্য পরিবেশন করেছেন , তাতে হান রাজবংশের রাজা লিউ পানের মনের দ্বন্দ্ব ও ঐতিহাসিক পরিবর্তন চিত্রিত হয়েছে । ' তা ফেন কো '-তে শিল্পীরা নাচের মাধ্যমে চীনের একএকটি ঐতিহাসিক ঘটনা চিত্রিত করার চেষ্টা করেন । হান রাজবংশের প্রথম রাজা লিউ পান চীনকে একত্রিত করার পর রাজপ্রাসাদে একটি বড় আকারের ভোজানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । ভোজানুষ্ঠানে রাজা লিউ পানের চীনকে একত্রিত করার পথে নানা কষ্টের কথা মনে পড়ে । সে সব কথা ভেবে তার কান্না আসে । শিল্পীদের লম্বা হাতার নৃত্য এবং নৃত্যের আনন্দময় ও দুঃখময় সুরে লিউ পানের মনের আনন্দ ও বেদনা মিশ্রনের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। এই গীতিনাট্যে চীনের বাদ্যযন্ত্র ফিফা , কুচেন , সিয়াও ও আর হু দিয়ে সুর বাজানো হয়েছে । এই গীতিনাট্যের পরিচালক সুই রুই বলেছেন , চীনের ইতিহাসে হান রাজবংশের গান ও নৃত্য বৈশিষ্ট্যময়। চীনের নৃত্যশিল্পীরা হান রাজবংশের পুথিপত্র ও পুরাকীর্তি গবেষণা করে তখনকার নৃত্যের সারসংকলন করে ' তা ফেন কো 'র মতো নৃত্য রচনা করেন ।তাই এই নৃত্যের সাহিত্যিক মূল্য বেশি ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের যুব পিয়ানো বাদকরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বারবার পুরষ্কার পান । লি আন তাদের মধ্যে অন্যতম । যদিও পিয়ানো পাশ্চাত্য বাদযন্ত্র , তবু লি আন শিল্প উত্সবে দুটি চীনা লোকসংগীত বাজিয়েছেন । তিনি বলেছেন , ' খান তিনের প্রেমের গান ' ও ' লিউ ইয়ান হো' চীনের দুটি লোকসংগীত । আমি এদুটি সুর পছন্দকরি । বিদেশের অনুষ্ঠানগুলোতে আমি চীনের সুর বেশি বাজাই । আমার উদ্দেশ্য হলো চীনের সুন্দর সুন্দর সুর বিদেশে প্রচার করা । আমি যুক্তরাষ্ট্রে এ দুটি সুর বাজিয়েছি , বিদেশীরা তা' খুব পছন্দ করেছেন ।
শিল্প উত্সবে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাচগান দর্শকদের সাধুবাদ পেয়েছে । চীনের সিংচিয়াং স্বায়তশাসিত অঞ্চলের ই লি শহরের কন্ঠশিল্পী মা ই লা একজন জনপ্রিয় গায়িকা । তিনি ইউরোপের বেশ কয়েকটি অপেরা দলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং ' দ্য লেডি অব দ্য কেমিলিয়াস 'সহ অনেক নামকরা অপেরায় প্রধান চরিত্রের ভূমিকা নেন। এবার মা ই লা পেইচিংয়ে তার একক সংগীতানুষ্ঠানে ' মা ই লা ' নামে কাজাকস্তানের একটি লোকসংগীত গেয়েছেন । তিনি বলেছেন , এ গানের নাম ঠিক আমার নাম। আমার মা সিংচিয়াংয়ের একজন কন্ঠশিল্পী । তিনি সংগীতানুষ্ঠানে প্রায়ই এই গান গাইতেন । আমি ছোট বেলা থেকেই এই গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। এ গান গেয়ে আমার জন্মভূমির কথা মনে পড়ে । তাই আমি অনেক অনুষ্ঠানে এই গান গাই ।