সিনচিয়াং মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত হাসপাতাল হচ্ছে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল । সম্প্রতি এই হাসপাতালে বেশ কিছু সংখ্যালঘু জাতির নার্সদের প্রশংসা করা হয়েছে । জীবাণুনাশক বিভাগের নার্স মা পিং না একজন হুই জাতির নারী । এই বিভাগে যারা কাজ করছেন , তাদের মধ্যে হান ও উইগুর জাতির অন্য বিশ জনেরও বেশি নার্স ও কর্মী । হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য যে সব জিনিসপত্রের প্রয়োজন , তারা এগুলির জীবাণুনাশক কাজ করছেন ।
১৯৮১ সাল থেকে মা পিং না এই হাসপাতালের জীবাণুনাশক বিভাগে কাজ করেছেন । তার কার্যকাল ২০ বছরেরও বেশি সময় হল । তিনি বলেছেন ,
প্রথমে কেউই এই বিভাগের কাজ করতে পছন্দ করতেন না । তারা মনে করতেন , এই ধরনের কাজের কোন প্রযুক্তি ও দক্ষতা নেই । কিন্তু এই কাজ করার পর তারা আবিষ্কার করেন যে , প্রতিটি হাসপাতালে জীবাণুনাশক বিভাগের কাজ অপরিহার্য । এই বিভাগের কাজ হাসপাতালের চিকিত্সার গুণগত মানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কিত ।
মা পিং না এই বিভাগের কাজের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । তিনি জীবাণুনাশক কাজ করতেন । এই সময়ের মধ্যে অনেকে নানা কারণে এই বিভাগের কাজ ছেড়ে দিয়েছে । কিন্তু তিনি কখনও এই কাজ ছেড়ে দেন নি ।
গত শতাব্দির আশির দশকে বিভাগের সরঞ্জাম খুব অনুন্নত ছিল । চিকিত্সার জন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের জীবাণু মারার উদ্দেশ্যে গন্ধক-দ্রাবক ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল । সেজন্য মাঝে মাঝে তার হাতমোজা ও পাজামা ক্ষতিগ্রস্ত হত ।
১৯৯৩ সালে মা পিং না নার্সদের প্রধান হন । জীবাণুনাশক কাজের ব্যাপারে তার ধারণা ও অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে । তার বহু বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি নতুন জীবাণুনাশক কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব উথ্থাপন করেন । তিনি নতুন কেন্দ্রের ডিজাইনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু মূল্যবান মতামত দেন । ফলে একটি চকচকে জীবাণুনাশক কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে । পরিদর্শন ও কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের হাসপাতালের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা এই হাসপাতালে আসেন । তিনি বলেছেন , অন্যদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য তিনি খুব গৌরব বোধ করেন ।
উইগুর নার্স শাহিপজামাল হাসপাতালের অস্ত্রোপচার রুমে কাজ করছেন । তিনি এই বিভাগে কাজ করছেন ১২ বছর ধরে । অস্ত্রোপচার রুমের নার্স হিসেবে তার অনেক খুঁটিনাটি কাজ আছে । অস্ত্রোপাচারের প্রস্তুতি নিতে বেশি সময় লাগে । নার্সদের ডাক্তারদেরকে আগাগোড়া সহায়তা করা প্রয়োজন । মাঝে মাঝে বড় অপারেশনের জন্য দশ বারো ঘন্টার দরকার । কাজে ব্যস্ততার কারণে তার ৩ বছর বয়সী ছেলে এখনও তার কাছে থাকে না । ছেলেকে দেখাশুনার জন্য তিনি তাকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে হো থিয়ান অঞ্চলে তার মায়ের বাসায় পাঠিয়েছেন । অবসর সময় তিনি শুধু টেলিফোনের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন । এতে তিনি কোন দুঃখ প্রকাশ করেন নি । তিনি বলেন ,
তার মাও একজন নার্স ছিলেন । তিনি সাদা পোশাক পরতেন , রোগীদের সঙ্গে গল্প বলতেন । তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য বহু রোগীদের পরিবার পরিজন বাসায় আসতেন । এতে শাহিপজামাল খুব মুগ্ধ হতেন । তখন তিনি ভাবতেন , ভবিষ্যতে তিনি মায়ের মতো কাজ করবেন । পরে অপারেশন রুমে আসার পর তিনি বহু অভাবনীয় কষ্ট ও অসুবিধা অনুভব করতেন । তিনি অঙ্গীকার করেন যে , তাকে সর্ব শক্তি নিয়ে রোগীদের পরিসেবা ও অপেরেশন রুমের কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করতে হবে । ধীরে ধীরে তিনি নিজের কাজকে পছন্দ করেছেন এবং রোগীদের পরিসেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন ।
নার্সের কাজ দেখতে খুব সহজ , কিন্তু তা সুসম্প্ন করার জন্য ব্যাপক দায়িত্ব বোধের প্রয়োজন । তিনি কাজ ও রোগীদের ব্যাপারে প্রবল সহিষ্ণুতা ও স্নেহ ব্যক্ত করেছেন ।
উইগুর নার্স পাটিগাল সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুদের দেখাশুনার কাজ করেন । তিনি তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করেন , ইঞ্জেকশন দেন এবং গোসল করান । তিনি স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিষয়ক বিভাগে এসেছেন , ২০ বছর হল । আসার প্রথম দিকে তিনি এ কাজের গুরুত্ব ও তাত্পর্য সম্পর্কে বেশি জানতেন না । হাসপাতালে কিছু দিন অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে এ কাজের প্রয়োজনীয়তা জানতে পেরেছেন । এর পাশাপাশি তিনি নার্সের দায়িত্বও বুঝতে পেরেছেন । প্রথম দিকে তিনি এই কাজকে পছন্দ করতেন না । কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি মা ও সন্তানদের পছন্দ শুরু করেছেন । তিনি ভাবলেন , তিনি বাচ্চাদের খুব পছন্দ করেন এবং নার্স হিসেবে নারীদের সঙ্গে কথাবার্তা ও বিনিময়ের বিশেষ সুবিধা আছে । তিনি প্রসূতিদের শিশু দেখাশুনার জ্ঞান শেখান এবং তাদের সঙ্গে গল্প করেন । এতে তিনি অশেষ তৃপ্তি ও আনন্দ অনুভব করেছেন । এখন তিনি নিজের কাজ ও চাকরিকে আর কোন মতেই ছেড়ে দিতে পারছেন না । অবসর সময় তিনি শিশু ও মাকে দেখাশুনা বিষয়ক বিদ্যার অধ্যয়নেও তত্পর । কিন্তু পাটিগাল নিজের সন্তানদের ভালভাবে দেখাশুনা করতে পারছেন না । তিনি সাধারণতঃ নাইট শিফটের কাজ করেন । কাজ শেষে যখন তিনি বাসায় ফিরে আসেন , তখন তিনি খুব ক্লান্ত থাকেন । তিনি এমন কি কথা বলতে ও বাড়ির কাজ করতেও চান না । তার ১১ বছর বয়সী ছেলে তার ৭ বছর বয়সী ছোট বোনকে দেখাশুনা এবং তার লেখাপড়ায় সহায়তা করে । ছেলে মাঝে মাঝে ছোট বোনকে বলে , মা খুব পরিশ্রম করেন , সুতরাং তাদের মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে ।
সিনচিয়াং মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রথম হাসপাতালে পাটিগালের মতো বহু নার্স পরিশ্রমী কাজ করছেন । তারা সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য অবদান রাখছেন ।
|