কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট জাপানে স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে। এ পর্যন্ত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রিতসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়, ওবিরিন বিশ্ববিদ্যালয়, আইছি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হোকুরিকু বিশ্ববিদ্যালয়। জাপানে চীনের দূতাবাসের মিনিস্টার কাম কনস্যুলার লি তুং সিয়াং বলেছেন, হোকুতাই বিশ্ববিদ্যালয়ও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পঞ্চম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট জাপানে গড়ে উঠবে।
শুধু এক বছরেরও একটু বেশী সময়ের মধ্যে জাপানে কেন এত বেশি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হচ্ছে? এ ব্যাপারে লি তুং সিয়াং সমাজের চাহিদা মেটানোর কথা বলেছেন।
সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতি নেয়ার পর চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। জিডিপি বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বর্তমান উন্নয়নের গতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে চীন বিশ্বের তৃতীয় স্থানে থাকবে। চীন ও জাপানের মধ্যে পারস্পরিক উপকারিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠতর হবে।
বর্তমানে জাপানের ৩০ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। যৌথ-মালিকানার কোম্পানি বা জাপানের একক পুঁজির কোম্পানি চীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিনিময় ধাপে ধাপে উন্নয়নের কারণে দু'দেশের অর্থনৈতিক বিনিময়ে চীনের সংস্কৃতি ও ভাষা জানা লোকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে জাপানে চীনা ভাষা শেখা লোকের চাহিদা দশ লাখেরও বেশি। জাপানে ইংরেজীর পর চীনা ভাষা এখন দ্বিতীয় বড় বিদেশী ভাষায় পরিণত হয়েছে।
আমাদের সংবাদদাতা জাপানের বই-এর দোকানে দেখেছেন যে, প্রত্যেকটি বইয়ের দোকানে বিভিন্ন ধরণের চীনা ভাষা সংক্রান্ত উপাত্ত ও সিডি রয়েছে। জাপানের টেলিভিশনেও চীনা ভাষার শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই চীনা ভাষার কোর্স চালু হয়। জাপানের চারটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীনের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সহযোগিতা চালাচ্ছে। ওবিরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা বিভাগ জাপানে খুব বিখ্যাত। রিতসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। আইছি বিশ্ববিদ্যালয় চীনের সমাজ একাডেমীর সঙ্গে দীর্ঘকালীন সহযোগিতায় সম্পৃক্ত । বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতি বছর চীনা গবেষক নিয়োগ করে বিশেষ কোর্সের আয়োজন করে থাকে। হোকুরিকু বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। যেমন চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে চীনে দু'বছর শিক্ষার পর হোকুরিকু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আরো দু'বছর লেখাপড়ার পর স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে। তাছাড়া, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরাও হোকুরিকু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে থাকে। এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েক শো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় জাপানের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের নিজশ্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসব ইনস্টিটিউট দ্রুত উন্নত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত দিক থেকে বিবেচনা করেই চীনের সঙ্গে বিনিময় করতে সক্ষম ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বলে চীনা ভাষা জানা লোকদের খুবই দরকার পড়ে। চীনে লেখাপড়া করা দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত এই সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। বিশ্বের প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট দক্ষিণ কোরিয়ায় যে গড়ে উঠেছে, তা আকস্মিক কিছু নয়। বর্তমানে চীনে জাপানী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯ হাজার। তবে জাপানে চীনা ভাষা শেখা লোক খুব বেশি।
জাপানে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট তিনটি ভূমিকা পালন করছে। প্রথমতঃ বিপুল সংখ্যক চীনা ভাষা জানা লোকদের গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে ধাপে ধাপে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিনিময়ের চাহিদা মেটানো যায়। এসব চীনা ভাষা জানা প্রতিভা অর্থনৈতিক বিনিময়ে নিজেদের অবস্থান খুঁজে পেয়েছেন। যার ফলে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
দ্বিতীয়তঃ দু'দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিনিময় জোরদার হয়েছে। জাপানের সব কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চালাচ্ছে। হোকুরিকু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পেইচিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ওবিরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থোংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের, আইছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের, রিতসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা চলছে। জাপানী ছাত্রছাত্রীরা চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পছন্দ করে। চীনা ছাত্রছাত্রীও আরো বেশি সুযোগ পেয়ে জাপানে লেখাপড়া করতে পারছে। দু'দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিনিময়ও দিন দিন আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। যাতে দু'পক্ষের আন্তর্জাতিকীকরণ সম্প্রসারিত করার লক্ষেও কল্যাণকর হয়।
তৃতীয়তঃ চীন ও জাপানের জনগণের মধ্যে মৈত্রী জোরদার করা। রাজনীতির যত পরিবর্তন হোক না কেন, চীনের সংস্কৃতি জানা লোক চীনকে পছন্দ করে। জাপানে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার ফলে চীনের সংস্কৃতি জানা আরো বেশি যুবকযুবতীরা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।
|