v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-13 20:10:51    
বামন মেয়ে সিয়ে স্যুয়েমেইর বিবাহ

cri
    বিয়ের সময় সুন্দর কাপড় পরা কন্যার করনীয় বিশেষ অধিকার , এ সময়টি প্রতিটি মেয়ের জীবনেই সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত । চীনের ছেনতু শহরে এমন একটি মেয়ে শিগ্গীরই তার বিয়ে হবে । কিন্তু বিয়ের সময় সুন্দর কাপড় পরা তার পক্ষে খুব একটা সহজ ব্যাপার হবে না ।

    চার বছর বয়সে একবার ভুল ওষুধ খাওয়ার কারণে ইয়েনহু নামে একটি ছেলে দুটো চোখেরদৃষ্টি হারায় । ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি মেয়ের সঙ্গে হঠাত তার পরিচয় হয় । ইয়েনহু মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলে । মেয়েটির সঙ্গে ৬ মাস ধরে প্রেমালাপ করার পর ইয়েনহু বিয়ে করার সিদ্ধান নেয় । মেয়েটির নাম সিয়ে স্যুয়েমেই । সে গান গাইতে খুবই পছন্দ করে । কিন্তু স্যুয়ে মেইর উচ্চতা মাত্র ৮০ সেন্টিমিটার । দু'বছর আগে স্যুয়েমেই বাড়ি ত্যাগ করে এবং চার দিকে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে নিজের সংসার চালায় । একবার ইয়েনহু স্যুয়েমেইর গান গাওয়ার জায়গাটি অতিক্রম করছিল হঠাত সে স্যুয়েমেইর গান শুনতে পেল । স্যুয়েমেইর গান ইয়েনহুকে মুগ্ধ করে। উচ্চতার কারণে ইয়েনহু স্যুয়েমেইকে তুচ্ছ করেনি ।চোখের কারণে স্যুয়েমেই ইয়েনহুকেও তুচ্ছ করেনি । অবশেষে স্যুয়েমেই ইয়েনহুর বিয়ের অনুরোধ গ্রহণ করে ।

    বিয়ের অনুষ্ঠানেরএক মাস আগে স্যুয়েমেই যখন ইয়েনহুর সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যায় তখন সে একটি দোকানের সামনে ইয়েনহুকে থামায় । চোখের কারণে ইয়েনহু প্রথমে বুঝেনি যে , কেন স্যুয়েমেই বারবার একই দোকানের সামনে থেমে যায় । স্যুয়েমেইর আনন্দের বর্ণনা থেকে ইয়েনহু বুঝেছে , স্যুয়েমেই বারবার একই দোকানের সামনে থেমে যাওয়ার কারণ হল , দোকানের সুন্দর সুন্দর বিয়ের পোশাক দেখার জন্য ।

    কিন্তু স্যুয়েমেই খুব খাটো, দোকানে বা ছবি তোলার দোকানে তার মাপের জন্য ছোটো বিয়ের পোশাক নেই । স্যুয়েমেইর ইচ্ছা জেনে দোকানদার তাকে দর্জির কাছে যাওয়ার একটি প্রস্তাব করেন । কিন্তু বিয়ের পোশাক সকল দর্জি করতে পারেন তা নয় । কিছু দর্জি তা করতে পারেন । কিন্তু বিয়ের পোশাক সেলাই করতে উন্নতমানের কলাকৌশল প্রয়োজন । স্যুয়েমেইর শরীরের বিশেষ অবস্থার কারণে বিয়ের পোশাক সেলাই করতে অনেক জটিল হয় বলে এই ধরণের পোশাক সেলাই করতে কম পক্ষে এক হাজার ইউয়ান লাগবে ।

    ২০০৭ সালের প্রথম দিকে ইয়েনহু ও স্যুয়েমেই নিজেদের জমানো সব টাকা পয়সা দিয়ে একটি মালিসের দোকান খোলে। মালিস দোকানের ব্যবসা তেমন ভাল নয় । একটি সুন্দর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য অনেক টাকা লাগবে । তাই স্যুয়েমেই আবার বাইরে গান গেয়ে উপার্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় । যাতায়াতের খরচ এবং বৃষ্টি ও বাতাস সহ বিবিধ কারণ বাদে স্যুয়েমেই যে উপার্জন করে তা কোনো রকমে স্যুয়েমেইর একজনের খরচ চলে যায় ।বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ ছাড়া বিয়ের পোশাক তৈরী করতে তারা ১০০০ ইউয়ান দিতে সক্ষম হয় নি ।

    বিয়ের পোশাকের জন্য তারা খুব চিন্তিত । ঠিক এই সময় স্যুয়েমেই জানতে পারলো, বাজারের একটি দোকানে তার মাপের কাপড়ের পোশাক পাওয়া যায় । দামও তত বেশি নয় । খবরটা শুনে স্যুয়েমেই খুব খুশি হলো । কিন্তু পরে দেখার পর এ ধরণের পোশাক স্যুয়েমেইর কাঙ্ক্ষিত পোশাকের সঙ্গেঅনেক পার্থক্য । শিশুদের জন্য তৈরী হয়েছে বলে পোশাকের দৈর্ঘ্য তার উচ্চতার জন্য ঠিকই আছে। কিন্তু শিশুদের তুলানায় সে কিছু মোটা বলে পোশাকটা তার গায়ে দিলে ছোটো হয়ে যায় ।

    বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে । কিন্তু স্যুয়েমেই এখনো উপযোগী পোশাক পায়নি । তার পক্ষে গায়ে বিয়ের পোশাক পরা শুধু এক বিলাসী স্বপ্ন ? এই সময় বামুন কন্যা বিয়ের পোশাক খুঁজছে খবরটার ওপর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিতে শুরু করে। স্যুয়েমেই বিয়ের পোশাক পাওয়ার আশা ছেড়ে দেবে বলে ভাবছে ঠিক এই সময় একজন সংবাদদাতা স্যুয়েমেইর কাছে একটি বিয়ের পোশাক নকশাকারকে নিয়েছেন ।

    যাতে স্যুয়েমেই গায়ে সুন্দর বিয়ের পোশাক পরতে পারে তার জন্য নকশাকার মনোযোগের সঙ্গে স্যুয়েমেইর জন্য মাপ জোপকরেন । তিনি বিয়ের পোশাকের ছবি দেখান , স্যুয়েমেইকে পছন্দনীয় রঙ ও স্টাইল বেছে নিতে বলেন । নকশাকার কথা দিয়েছেন , চার দিন পর তিনি ঠিক সময়ের মধ্যে স্যুয়েমেইর বিয়ের পোশাক পৌঁছে দেবেন । স্যুয়েমেইর বিয়ের পোশাক পরার স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হবে ।

    বিয়ের দিন আসতে আর মাত্রচার দিন বাকি । এই কয়েক দিনের মধ্যে ইয়েনহু ও স্যুয়েমেই ইয়েনহুর জন্মস্থান সিছুয়ান প্রদেশের ইলুং জেলায় গিয়ে বিয়ের কার্ড আনবে । স্থানীয় গণ সরকারের বিবাহ বিষয়ক কর্মীরা বিশেষভাবে তাদের যত্ন নেন । ইয়েনহু ও স্যুয়েমেই দুজন সুষ্ঠুভাবে বিয়ের কার্ড পেয়েছে । বিয়ের কার্ড পাওয়ার পর ইয়েনহু ও স্যুয়েমেই বাসরঘর সাজানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । সুখ ও আনন্দময়হাসি সবসময় তাদের মুখে দেখা যায় ।

    বিয়ের আগের দিন নকশাকার সময়মতো বিয়ের পোশাক পৌঁছাতে পারেনি বলে স্যুয়েমেই নির্বাক হয়ে যায় এবং ইয়েনহুও কোনো কথা বার্তা বলছে না । স্যুয়েমেইর পক্ষে বিয়ের পোশাক না পাওয়ার হতাশার চেয়ে সুন্দর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া বেশি অগ্রহণযোগ্য । নকশাকারকে এনে দিয়েছেন যে সংবাদদাতাও অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন । তিনি স্যুয়েমেইকে বিয়ের পোশাকেরবাজারে নিয়ে যান । তারা ছেনতু শহরের বৃহত্তম পোশাক বাজারে আসেন । একটি ছোটো দোকানে তারা একটি বিয়ের পোশাক দেখলেন । এই পোশাক লম্বা না, খাটো না , ঢিলা না ছোটোও না, যেন বিশেষভাবে স্যুয়েমেইর জন্যেই বানানো ।

    বিয়ের আগের দিন নিজের পছন্দনীয় বিয়ের পোশাক পেয়ে স্যুয়েমেই এতটা আনন্দিত হয় যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । বাড়িতে ফিরে ইয়েনহু নকশাকারের টেলিফোন পেল । তিনি জানান , বিয়ের পোশাক তৈরী হয়েছে । দুটো বিয়ের পোশাক পাওয়ায় স্যুয়েমেই আরও বেশি খুশি ।

    বিয়ের অনুষ্ঠানের সে দিন রাতে ইয়েনহু ও স্যুয়েমেই নিজের বাড়িতে একটি বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে । লাল রঙের বিয়ের পোশাক পরা স্যুয়েমেই ও ইয়েনহু হাসিমুখে বলল, পরবর্তীকালে যে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হোক না কেন , তারা সাহসের সঙ্গেতা মোকাবেলা করবে এবং সফলতা অর্জনে সচেষ্ট থাকবে । তাদের দৃঢ় ও আনন্দময় মনোভাব উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এ অনুষ্ঠানসম্মান এনে দেয় ।