v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-11 19:17:41    
জল বাস - কুয়াং চৌয়ের নৌপথের নতুন দর্শন

cri

    কুয়াং চৌ হচ্ছে দক্ষিণ চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের রাজধানী । বিখ্যাত চু চিয়াং নদী পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সারা শহরে বহমান । দীর্ঘ চু চিয়াং নদী কুয়াং চৌকে চু চিয়াং নদীর দক্ষিণ তীর , চু চিয়াং নদীর উত্তর তীর ও ফাং ছুন - এ তিনটি এলাকায় বিভক্ত করেছে । গত এপ্রিল মাসে কুয়াং চৌয়ের যাতায়াতের ব্যস্ততম অবস্থা প্রশমিত করার জন্যে কুয়াং চৌ পৌর সরকার চু চিয়াং নদীতে দুই তীরের মধ্যে আসাযাওয়া ক্ষুদ্র আকারের দ্রুতগামী স্টিমার- জল বাস চালু করেছে । এ জল বাসগুলো পুরনো স্টাইলের ফেরির স্থলাভিষক্ত হবে । এ জল বাসগুলো সাবওয়ে ও পাবলিক বাসগুলোর সংগে মিলে কুয়াং চৌয়ের আধুনিক শহুরে গণ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ।

    ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল ভোরে কুয়াং চৌয়ের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত চুং শান বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাজ ঘাটা থেকে প্রথম জল বাস যাত্রা করে ।

    এ ক্ষুদ্র আকারের দ্রুতগামী স্টিমার ত্রিশ-চল্লিশজন যাত্রী নিয়ে চু চিয়াং নদীর উত্তর তীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় । পথে যাত্রীরা স্টিমারে বসে দুই তীরের নানা ধরণের দালানকোঠা উপভোগ করতে পারেন । ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে জল বাসটি মাঝখানের দুটো জাহাজঘাটায় কিছুক্ষণ থামার পর শেষ পর্যন্ত গন্তব্যস্থল- ফাং ছুন জাহাজঘাটায় পৌছে । এ রকম দূরত্ব অতিক্রম করতে বাসে করে গেলে কমপক্ষে ৫০ মিনিট লাগবে ।

    জল বাসের চালু কুয়াং চৌবাসীদের মধ্যে গভীর আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে । এ সুবিধা শহরবাসীদের প্রশংসাও পেয়েছে । এখন প্রতিদিন অনেক শহরবাসী জল বাসে করে নানা জায়গায় যান । শহরবাসী মাদাম লি লি বলেন ,

    এখন কিছু সময় বাঁচানো হয়েছে । আমার ভালো লাগছে । এখন আর যাতায়াতের জাম হয় না । অফিসে যেতে ও অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে আমার জন্যে কোনো অসুবিধা নেই ।

    জল বাস চালুতে কুয়াং চৌবাসীদের কাছে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া ফেরিগুলো নতুন রূপ লাভ করেছে ।

    কুয়াং চৌ শহরে এক শতাধিক বছর ধরে সাধারণ ফেরি চু চিয়াং নদীতে চলাচল করতো । গত শতাব্দির আশির দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত কুয়াং চৌয়ের চু চিয়াং নদীর উপর গণ সেতু ও হাই চুসহ মাত্র কয়েকটি সেতু ছিল বলে শহরবাসীরা চু চিয়াং নদী পার হতে হলে ফেরিতে চড়তে পছন্দ করতেন ।

    ৪৯ বছর বয়সের লাই চিয়ান ফাং তখন হোয়াং সা ফেরি ঘাটায় টিকেট বিক্রি করতেন । তিনি নিজের চোখে সেসময়কার ব্যস্ততম দৃশ্য দেখেছিলেন । তিনি বলেন ,

    আমি ২৭ বছর ধরে টিকেট বিক্রির কাজ করেছি । যখন আমি সবেমাত্র এ কাজে যোগ দিলাম , তখন খুবই ব্যস্ত ছিলাম । সেসময় চু চিয়াং নদীর তলদেশে এখনকার সুড়ংগ নির্মিত হয় নি । অনেক যাত্রী খুব লম্বা লাইন ধরে টিকেট কাটতেন । অনেক সময় আমি খাওয়া-দাওয়ার সময়ও পেতাম না ।

    তখন যাত্রীবাহী কোম্পানিগুলো একদিন ১ লাখ যাত্রী চু চিয়াং নদী পারাপার করতে পারতো । এটি গোটা কুয়াং চৌয়ের গণ যাতায়াতকারী যাত্রীদের সংখ্যার ১৪ শতাংশ ছিল । সেসময় টিকেট কাটা ও যাচাই করা সবই মানুষের দ্বারা সারতো । ফেরি কোম্পানির একজন কর্মচারী তেং সিয়ান ইয়াও তখনকার কথা স্মরণ করে বলেছেন ,

    সেসময় ফেরিগুলো ছিল কুয়াং চৌয়ের প্রধান যানবাহন । তখন সবচেয়ে ব্যস্ততম নৌপথে সবসময় ৫ থেকে ৬টি বড় বড় জাহাজ চলাচল করতো । প্রতিটি জাহাজের যাত্রী সংখ্যা ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার । কোনো এক বছরই ১০ কোটি যাত্রী ফেরি করে যাতায়াত করেছে ।

    চীনের ফেরির ইতিহাসে বার্ষিক যাত্রী সংখ্যা যে ১০ কোটিরও বেশি , তা সত্যিই কদাচিত দেখা যায় । কুয়াং চৌয়ের বৃদ্ধদের স্মৃতিতে প্রতিদিন ফেরি করে চু চিয়াং নদী পারাপারের অভিজ্ঞতার মধ্যে তাদের জীবনের টুকিটাকি মিশে রয়েছে । এতে কুয়াং চৌবাসীরা ও চু চিয়াং নদীর মধ্যকার অবিচ্ছেদ্য ভাবের বন্ধন প্রতিফলিত হয়েছে ।

    অথচ আস্তে আস্তে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে । গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে চু চিয়াং নদীর দুই তীর সংযোগকারী সেতু ও সুড়ংগের সংখ্যা বাড়া এবং স্থলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার সংগে সংগে ১৯৯৩ সাল থেকে কুয়াং চৌয়ের চু চিয়াং নদীতে ফেরিগুলোর যাত্রীদের সংখ্যা বছরের পর বছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ করে কমতে থাকে । কেউ কেউ আশংকা করছেন যে , একদিন না একদিন কুয়াং চৌতে এ ফেরিগুলোর কি বিলুপ্তি ঘটবে ?

    ঐতিহাসিক বিকাশ কুয়াং চৌয়ের নৌ চলাচলের জন্যে নতুন সুযোগ বয়ে এনেছে । গত কয়েক বছরে মোটর গাড়ির সংখ্যা বাড়ার সংগে সংগে কুয়াং চৌয়ের রাস্তাগুলোর জাম তীব্র আকার ধারণ করেছে । কুয়াং চৌ পৌর সরকার শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চু চিয়াং নদীর প্রাকৃতিক প্রাধান্যকে কাজে লাগিয়ে অভিনব নৌ চলাচল পথ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় ।

    জল বাস সম্পর্কে কুয়াং চৌ পৌর সরকারের পরিকল্পনা শহরবাসীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে । ২০০৬ সালে কুয়াং চৌয়ের গণ কংগ্রেসের কয়েকজন প্রতিনিধি যৌথভাবে কুয়াং চৌতে জলা বাস চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । মিস্টার সুন শি শেং হলেন তাদের অন্যতম । তিনি বলেন ,

    আমার মনে হয় , কুয়াং চৌ শহরে অনেক নদ-নদী আছে । এটি একটি ইতিবাচক প্রাকৃতিক সম্পদ । স্থলের গণ যাতায়াত ব্যবস্থার একটি অনুপূরক হিসেবে এ সম্পদের সদ্ব্যবহার করা উচিত । তাই কুয়াং চৌতে জল বাস চালু করা উচিত , যাতে স্থলের গণ যাতায়াত ব্যবস্থার চাপ প্রশমিত হতে পারে ।

    গত ১০ এপ্রিল জল বাসের সাফল্যজনক চালু কুয়াং চৌয়ের নৌপথ উন্নয়নের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে । আপাতত চু চিয়াং নদীতে জল বাসের লাইন অল্প হলেও কুয়াং চৌ পৌর সরকার ইতোমধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে । ২০২০ সাল নাগাদ চু চিয়াং নদীর কুয়াং চৌয়ের পর্যায়ে যাত্রী বহনের জাহাজঘাটার সংখ্যা এখনকার ২৮টি থেকে ৬৫টিতে উন্নীত করা হবে ।

    চু চিয়াং নদীর ফেরিগুলোর উত্থান ও পতন থেকে আজকের জল বাসের জন্ম পর্যন্ত লোকেরা ভালোভাবে কুয়াং চৌয়ের যোগাযোগ উন্নয়নের গতিধারা অনুধাবন করতে পারছেন ।