পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ওয়াহিদ এরশাদ ১০ জুলাই ইসলামাবাদে বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এদিন এক সামরিক অভিযান চালিয়ে লাল মসজিদের বেশির ভাগ এলাকা সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে। "লাল মসজিদের" দ্বিতীয় ব্যক্তি আবদুল রশিদ গাজী এদিন সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছে। বিশ্লেষকগণ মনে করে, ৩ জুলাই থেকে বিশ্বের জনগণের গুরুত্ব পাওয়া সংকটের ইতি ঘটবে।
এরশাদ এদিন রাতে অনুষ্ঠিত এক চূড়ান্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সকাল সাড়ে চারটা থেকে সামরিক অভিযান চালাতে থাকবে। কিছু এলাকায় ধরপাকড় অভিযান চালানো ছাড়াও সেনাবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে লাল মসজিদ এবং তার আওতাধীন ধর্মীয় স্কুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেছেন, এদিনের অভিযান ৫০জনেরও বেশি সশস্ত্র ব্যক্তি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। এর পাশাপাশি আটজন সরকারী সৈন্য নিহত এবং ২৯জন সৈন্য আহত হয়েছে। প্রায় ৫০জন সশস্ত্র ব্যক্তি সরকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাছাড়া কমপক্ষে ২৬জন ছাত্রছাত্রী গুলি বিনিময়ের সময় " লাল মসজিদ" থেকে পালাতে চেষ্টা করে। এখন তারা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হেফাজতে আছে। এরশাদ জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী অভিযানের সময় সংযমী মনোভাব বজায় রাখে। নিরীহ জনসাধারণ যাতে হতাহত না হয় সে ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এদিনের অভিযানে নারী ও শিশুদের হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি।
৪ জুলাই পাকিস্তান সরকার এই মসজিদে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে লাল মসজিদ ও তার ধর্মীয় স্কুলের কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে কিছুটা উন্নত হয়। তবে এই মসজিদের দ্বিতীয় ব্যক্তি আবদুল রশিদ গাজীর নেতৃত্বে চরমপন্থীরা নিরীহ নারী ও শিশুদের আটক করে রাখে। যার ফলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অভিযান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন কঠিন হয়ে দ্বারায় না। পাকিস্তানের বিভিন্ন মহল ক্রমে ক্রমে এ ব্যাপারে মানবিক সংকটের আশংকায় অত্যধিক ঘটানোর সম্ভাবনায় তীব্র গুরুত্ব দেয়ার কথা প্রকাশ করেছে। তারা লাল মসজিদের লোক জনকে জামিনে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সরকারকে যথাশিগগির শান্তিপূর্ণ উপায়ের মাধ্যমে সংকট সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের নির্দেশে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পার্টি মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান চৌধুরী সুজাত হোসেন, কয়েকজন মন্ত্রী ও পাকিস্তানের ধর্মীয় পন্ডিত৯ জুলাই লাল মসজিদের ব্যক্তিদের সঙ্গে ১১ ঘন্টা সংলাপ চালিয়েছে। তাঁরা আশা করেন, দু'পক্ষ শান্তিপূর্ণ উপায়ের মাধ্যমে সংকট সমাধান করতে পারবে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার আর "লাল মসজিদ" কর্তৃপক্ষের সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। তারপর ১০ জুলাই সকালে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী "লাল মসজিদ" সার্বিক অভিযান শুরু করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে নারী ও ধর্মীয় ব্যাপার হচ্ছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সবচেয়ে স্পর্শকাতর ব্যাপার। নিরীহ জনসাধারণের হতাহত এড়ানোর জন্য মুশাররফ সরকার এই জটিল সমস্যা সমাধানের ওপর স্পষ্টত সংযমী মনোভাব প্রকাশ করেছে। জনগণ দেখেছে যে, যদিও পাকিস্তানের সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে পাকিস্তানের সরকার সংকট সমাধানের প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত সংযমী মনোভাব পাকিস্তানের বেশির ভাগ জনগণের সমঝোতা ও সমর্থন পেয়েছে।
(পান্না)
|