v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-10 20:15:16    
তিব্বতী জাতির গৌরব- লাসার  তাচাও  মন্দির

cri
    চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী-লাসা শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বিরাট মন্দির দাঁড়িয়ে আছে । এটাই প্রসিদ্ধ তাচাও মন্দির । হাজার বছরের পুরনো এই প্রাচীন মন্দিরের যেমন তিব্বত জাতির ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস ও উজ্জ্বল সংস্কৃতি রয়েছে , তেমনি এই জাতির গৌরবকে তুলে ধরা হয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে তিব্বতের তাচাও মন্দির সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    তাচাও মন্দির তিব্বতের এমন একটি মন্দির , যে মন্দির হান ও তিব্বতী জাতির স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠ দিয়ে নির্মিত একটি মন্দির । সপ্তম শতকের প্রথম দিকে এই মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয় । তার পর মন্দিরটি বহুবার ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে মজবুত করা হয়েছে । মন্দিরটির মেঝের আয়তন ২৫ হাজার বর্গ মিটার । তিন তলা বিশিষ্ট প্রধান ভবনের ওপরে তিব্বতী স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছাদের উপরে সোনার আবরণে মোড়ানো রয়েছে । তাই সূর্যালোকে মন্দিরের ভবন চকচকে হয়ে উঠছে । তাচাও মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান , প্রবীণ সন্ন্যাসী নিমাছিরেন মন্দিরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক তাত্পর্য প্রসঙ্গে বলেছেন ,

     বিশ্বের মানব জাতির সাংস্কৃতিক মূল্যবান ঐশ্বর্য ভান্ডার হিসেবে তাচাও মন্দিরে ১২ বছর বয়সী শাক্যমুনির একটি স্বর্ণখচিত মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে । এ মূর্তি আড়াই হাজার বছরের পুরনো । জানা গেছে , যখন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শাক্যমুনি বেঁচে ছিলেন , তখন তার তিনটি বয়স অনুযায়ী পৃথক পৃথকভাবে তিনটি মূর্তি বানানো হয়েছে । তাচাও মন্দিরে শাক্যমুনির যে মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে , তাকে এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত বৌদ্ধ মূর্তি বলে গণ্য করা হয় । বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাকে অমূল্য ঐশ্বর্য বলে মনে করেন ।

    তাচাও মন্দির সপ্তম শতকে তিব্বতের শাসনকর্তা সুংজানগানপু আমলে নির্মিত হয়েছে । তখন চীনের থাং রাজবংশ চলছিল । সুংজানগানপু পর পর নেপালী রাণী ও থাং রাজবংশের ওয়েন ছেং রাণীকে বিয়ে করেছেন । এ দুই সুন্দরী রাণী তিব্বতে যাওয়ার সময় যৌতুক হিসেবে একটি করে শাক্যমুনির মূর্তি নিয়ে গেছেন । তাচাও মন্দিরে যে ১২ বছর বয়সী শাক্যমুনির মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে , তা ওয়েন ছেং রাণী উপহার দিয়েছেন । নেপালী রাণীর উপহার ৮ বছর বয়সী শাক্যমুনির মূর্তি সিয়াও চাও মন্দিরে সংরক্ষিত রয়েছে ।

    শাক্যমুনির মূর্তিকে তাচাও মন্দিরের অমূল্য পুরাকীর্তি বলে অভিহিত করা হয় । ১২ বছর বয়সী শাক্যমুনি যুবরাজ ছিলেন । তিব্বতীরা স্বর্ণখচিত এই ব্রোঞ্জ মূর্তির প্রতি খুব মর্যাদা প্রদর্শন করেন । তাচাও মন্দিরের গাইড মিঃ লি সিয়াও হুয়া বলেছেন ,

    শাক্যমুনির এই মূর্তি ব্যাপক তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুব বিশ্বাসযোগ্য । মূর্তিটি আসল মানুষের চেয়ে অনেক বড় । বহু ধর্মাবলম্বীরা বৌদ্ধ মূর্তির সামনে মঙ্গল কামনা করেন । মূর্তির বাইরে স্বর্ণমন্ডিত করা ।

    বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শাক্যমুনি ছাড়া তাচাও মন্দিরে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকারী সুংজানগানপুর মূর্তিও সংরক্ষিত রয়েছে । তিব্বতীদের মনে সংজানগানপু ও তার দুই স্ত্রীই বুদ্ধের প্রতীক । তারা জনসাধারণকর শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে দুঃখ-কষ্ট থেকে উদ্ধার করার জন্য মানুষ হয়েছেন । গাইড লি সিয়াও হুয়া বলেন ,

    মন্দিরের ভবনের ছাদ চন্দনকাঠ দিয়ে খোদাই করা বৌদ্ধ মূর্তিতে সাজানো । জানা গেছে , তাচাও মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে তিব্বতী রাজা সুংজানগানপু এ সব মূর্তি বানিয়েছেন । মন্দিরে একটি প্রস্তর পিঁড়ি আছে । সেই পিঁড়িতে রাণী ওয়েন ছেং বসে থাকতেন । তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হাত দিয়ে তা স্পর্শ করতেন । এই প্রস্তর পিঁড়ির উপরে এখনো বহু মাখন রয়েছে । ওটা দীর্ঘকাল ধরে ধর্মাবলম্বীদের স্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে ।

    এ ছাড়া সপ্তম শতকে তৈরী তাচাও মন্দিরের কাঠের দরজা ও প্রাচীন সৌন্দর্যময় চন্দনকাঠের খুঁটি এখনও ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে । গাইড লি সিয়াও হুয়া বলেছেন , তাচাও মন্দিরে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে সংরক্ষিত একটি চন্দনকাঠের খুঁটি এখনো রয়েছে । তিব্বতীরা মনে করেন যে , চন্দনকাঠের অমূল্য এই খুঁটি তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছে । সুতরাং তারা হাত দিয়ে তাকে স্পর্শ করেন । ফলে চন্দনকাঠের খুঁটির ওপরে বেশ কিছু মাখন রয়েছে । তা দেখতে খুব চকচকে ও মসৃণ । বিস্ময়ের বিষয় এই যে , এই খুঁটিতে মানুষের দাঁতও আছে । গাইড লি সিয়াও হুয়া আরো বলেন ,

    দূর থেকে আসা ধর্মাবলম্বীরা এই চন্দনকাঠের খুঁটির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন । তীর্থপ্রদর্শন ও ধর্মানুষ্ঠান পালনের জন্য বহু ধর্মাবলম্বীরা যার যার জন্মভূমি থেকে লাসায় হেঁটে চলে আসেন । তীর্থদর্শনের পথে তাদের সাধারনতঃ এক বছর এমন কি ছয় সাত বছর সময় লেগেছে । যারা বয়স্ক বা দুর্বল , তাদের মধ্যে কেউ কেউ পথে মারাও যান । এতে তীর্থস্থান ও বৌদ্ধের প্রতি তাদের অশেষ আনুগত্য ও শ্রদ্ধা ব্যক্ত করা হয় । যারা পথে মারা গেছেন , চিরস্থায়ী স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য সঙ্গীদের সাহায্যে যার যার একটি করে দাঁত প্রাচীন খুঁটির ওপরে রেখে দিয়েছেন । এতে তীথস্থানে তাদের চিরস্থায়ী উপস্থিতি প্রকাশ পায় । কারণ দাঁত মানুষের একটি অঙ্গ । দাঁত শক্তিশালী এবং পচে যায় না । সুতরাং তা সবচেয়ে ভালভাবে মানুষের বাসনার প্রতিনিধিত্ব করে ।

    তা চাও মন্দির প্রতি দিন প্রচুর ধর্মাবলম্বী ও পর্যটকে ভরপুর থাকে । তারা বৌদ্ধ মূর্তির প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । দক্ষিণ -পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের মেয়ে ছিংছিং লাসায় তিন বছর বসবাস করেছেন । তিনি মাঝে মাঝে তাচাও মন্দিরে ধরে ছবি তুলেন । তিনি বলেন , বৌদ্ধ মূর্তির প্রতি ধর্মাবলম্বীরা যে বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন , তা দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন ।

    তাচাও মন্দিরের বৌদ্ধ মূর্তির প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য বহু পশু পালকরা বহু দূর থেকে লাসায় এসেছেন । পথের খরচ হিসেবে তারা বাসার সব কিছু বিক্রি করেছেন । কিন্তু তারা কোন দুঃখ-কষ্ট অনুভব করেন নি , বরং উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছেন ।