২৬ এপ্রিল বিশ্ব মেধা স্বত্ব দিবস । জনসাধারণের মেধা স্বত্ব সংরক্ষণের চেতনা উন্নত করার জন্য সম্প্রতি চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমগ্র দেশে মেধাস্বত্ব সংরক্ষনের প্রচার অভিযান চালিয়েছে । মেধা স্বত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত সংগীত মহলের ব্যক্তিরা এই প্রচার অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন । তাদের উদ্যোগে পেইচিংয়ে মেধা স্বত্ব সংরক্ষণ সম্পকির্ত শীর্ষ ফোরাম অনুষ্ঠিত হয় । ফোরামে মেধা স্বত্ব সংরক্ষনের উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সুরকারদের আরো সুন্দর সুন্দর সুর রচনা করতে উত্সাহ দেওয়ার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে ।
চীনের ওডিও-ভিডিও সমিতির প্রধান ইয়ু ইয়োন চান ফোরামে বলেছেন , এ বছরের প্রথম দিকে চীনের জাতীয় মেধা স্বত্ব কর্মগ্রুপ ২০০৭ সালের মেধা স্বত্ব সংরক্ষণ পরিকল্পনা প্রকাশ করে । এ পরিকল্পনায় মেধা স্বত্ব সংরক্ষণের অনেক বাস্তব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । এই পরিকল্পনায় মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে আইন অনুসারে কাজ করার অনেক ব্যবস্থাও যোগ দেয়া হয়েছে । এসব ব্যবস্থা সংগীত মহলের মেধা স্বত্ব সংরক্ষনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে এবং ব্যাপক সংগীতবিদদের প্রেরনা যুগিয়েছে।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে চীনের প্রথম মেধা স্বত্ব আইন প্রনয়ন করা হয় । তখন থেকে কারাওকে চীনের নাগরিকদের বিনোদনের অন্যতম উপায়ে পরিণত হয় । কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে চীনের নাগরিকরা কারাওকের সঙ্গে মেধা স্বত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্ক উপলব্ধি করেন নি । সাম্প্রতিক বছরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ মেধা স্বত্ব সম্পর্কিত আইন অনুসারে কারাওকের বিনোদন সংস্থার মালিকদের কাছ থেকে গান ও সুরের মেধা স্বত্ব ব্যবহারের ফি আদায় করতে শুরু করে । প্রথমে কারাওকের মালিকরা এ নতুন ব্যবস্থা প্রতিরোধ করেন । তারা মনে করেন , কারাওকে ঘরে গান করা স্বাভাবিক ব্যাপার । এতে মেধাস্বত্বের সঙ্গে সম্পর্ক নেই । যারা কারাওকে ঘরে গান করতে পছন্দ করেন , তারাও অতিরিক্ত ফি জমা দিতে আপত্তি করেন । চীনের জাতীয় মেধা স্বত্ব ব্যুরো , সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞরা মেধা স্বত্ব সম্পর্কিত আইন বিশ্লেষণ করে বার বার কারাওকে ঘরের মালিক ও সংগীত অনুরাগীদের বুঝিয়ে তাদের মনের সংশয় দূর করেন । চীনের সংগীতের মেধা স্বত্ব সমিতির মহাসচিব ছু চিন মিন বলেছেন , কারাওকে ঘরে সংগীতের মেধা স্বত্ব ব্যবহারের ফি জমা দেয়া চীনের মেধা স্বত্ব সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।এতে সংগীত মহলের মেধা স্বত্বের মালিকদের অধিকার ও স্বার্থ সুনিশ্চিত হলো । এখন যারা কারাওকে ঘরে গান করতে পছন্দ করেন , তারা ধীরে ধীরে মেধা স্বত্ব রক্ষার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন ।
জানা গেছেন , এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে চীনের ইউনান ও সিংচিয়ান স্বায়তশাসিত অঞ্চল , সানসি ও কুয়াং তুং প্রদেশ এবং পেইচিং মহানগরের কারাওকে ঘরের মালিকরা মেধা স্বত্ব সংস্থার কাছে মেধা স্বত্ব ব্যবহারের ফি জমা দিতে শুরু করেছেন। দেশের অন্যান্য স্থানের কারাওকে ঘরগুলোতেও এই ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
শীর্ষ ফোরামে অংশগ্রহনকারীরা মনে করেন ১৯৯৭ সালের পর থেকে চীনের ওডিও- ভিডিও কাজ অভূতপূর্ব অসুবিধার মুখে রয়েছে । এই অসুবিধা হলো মেধা স্বত্বের উপর নতুন প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ । চীনের রেকর্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার চাও তা সিং বলেছেন , রেকর্ড কোম্পানির নতুন সমস্যা হলো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক ও দ্রুত প্রসার । সংগীত মহলে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে । অনেকেই ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন থেকে গান শুনেন। তারা ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করেন ।এতে রেকর্ড কোম্পানির গুরুতর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। কাজেই এ ক্ষেত্রে মেধা স্বত্ব রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া জরুরী ব্যাপার । এটা সংগীত বাজারের সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করার একটি বড় সমস্যা ।
চীনের সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্বশীল ব্যক্তি রো তুং ছুয়ান বলেছেন , সংগীত মহলের মেধা স্বত্ব রক্ষা চীনের মেধা স্বত্ব সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের সর্বোচ্চ আদালত মেধা স্বত্ব সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তির উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে । তিনি বলেছেন , গত বছর চীনে দু হাজারের বেশি মেধা স্বত্ব লংঘন সংক্রান্ত মামলা তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা হয়েছে । এতে সাড়ে তিন হাজার লোককে আইন অনুসারে শাস্তি দেয়া হয়েছে ।বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে চীনে মেধা স্বত্ব লংঘনকারীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি । জাতীয় মেধা স্বত্ব ব্যুরোর কর্মকর্তা তুয়ান ইয়ু পিং বলেছেন , মেধা স্বত্ব সংরক্ষণ সময়সাপেক্ষ কাজ । এ কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য সরকারী ব্যবস্থা ছাড়া সমাজের সকল নাগরিকদের সহযোগিতা দরকার ।
|