দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষা দেয়া শিক্ষকগণ ধাপে ধাপে কঠিন বোধ করছেন। বিশ্বের প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট---সিউল কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের উপাচার্য লি ছোং ইয়াং দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষার হিড়িক প্রসঙ্গে বলার সময় এ কথা বলেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার আরো বেশি ছাত্রছাত্রী চীনে অধ্যয়ন করছে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষাদানের গতিও খুব দ্রুত। দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষার অধ্যাপকগণ ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষার মান দ্রুততর উন্নয়নের অবস্থায় স্বস্তি বোধ করেন। অধ্যাপকগণ শিক্ষা দেয়ার সময় আরো বেশি চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। এটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষার হিড়িক পরার মজা প্রমাণ।
লি ছোং ইয়াং হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার চীনা ভাষা শিক্ষাদানের সুবিখ্যাত অধ্যাপক। তিনি এবং চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত কিন হা জোং হচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম দফার চীনা ভাষা শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী। তাঁরা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষার দ্রুত উন্নয়ন দেখেছেন।
লি ছোং ইয়াং বলেছেন, গত শতাব্দীর ষাটের দশকের আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় শুধু সিউল বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু ছিল। প্রত্যেক বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ডজন খানেক ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করতো। দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষা দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্রুত ১১৮টিতে পৌঁছেছে। প্রত্যেক বছর চীনা ভাষা শিখার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চীনা ভাষা শিক্ষার হিড়িক পরার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কয়েক হাজার বছরের সম্পর্ক রয়েছে। চীনাদের প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ স্বাভাবিক স্নেহ-মমতা পোষণ করেন। দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দু'দেশের বাণিজ্য অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় জনগণের চীনা ভাষা জানা ব্যক্তিদের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। তাছাড়া দু'দেশের যোগাযোগের সুবিধা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শেখা লোকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
২০০১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষার মান যাচাই পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ৬৭১১জন। ২০০৫ সালে এই সংখ্যা ২৫ হাজার ৭০৬জন হয়েছে। ২০০৬ সালে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারেরও বেশি।
এই পটভূমিতে বিশ্বে প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২০০৪ সালের নভেম্বরে সিউলে প্রতিষ্ঠিত হয়। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর চীন সরকার এবং দক্ষিণ কোরীয়-চীন সাংস্কৃতিক সহযোগিতা একাডেমির সার্বিক সমর্থন পেয়েছে। চীনা ভাষা শেখার বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর জন্য সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ছাত্রছাত্রীদেরকে শ্রেষ্ঠ চীনা ভাষার বই ও উপাত্ত দেয়া, চীনা ভাষা শিক্ষাদানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা, চীনা ভাষা শিক্ষা কোর্স দেয়া ছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, চীনা ভাষা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের শিক্ষাও ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহত্তম কোরীয় ডেইলী ওয়েবসাইটে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সিউলের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট যেমন টাটাটা,জীবনের জন্য চীনা ভাষাসহ বিভিন্ন কলাম খুলেছে। প্রতিদিন এসব কলাম দেখা লোকের সংখ্যা ১২ লাখ। এর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা অনুযায়ী, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিশটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাদের কর্মীদের জন্য চীনা ভাষা শেখার বিশেষ কোর্স পরিচালনা করে।
সিউল কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যত উন্নয়ন নিয়ে লি ছোং ইয়াং পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয় সরকার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে বিদেশী ভাষা শিক্ষাদান জোরদার করার জন্য মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের প্রতি বিদেশী ভাষার শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। ২০০৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে ৬০ হাজার ছাত্রছাত্রী দুই হাজার চীনা ভাষা কোর্সে লেখাপড়া করে। চীনা ভাষা বিভাগে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষক ছাড়া, তিন শো চীনা শিক্ষক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে চীনা ভাষা কোর্স দেবেন। চীনা ভাষা শেখার অনুপ্রেরণাকারী এবং চীনের সংস্কৃতির প্রচারক হিসেবে সিউলের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীনা ভাষা শেখার ক্ষেত্রের সবচেয়ে ভালো যুগে প্রবেশ করবে।
|