৮ জুলাই ইসরাইলের মন্ত্রীসভা ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে ইসরাইলে আটক রাখা ২৫০ জন ফাতাহ সদস্যকে মুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছে । গত সপ্তাহে ইসরাইল আব্বাসের জরুরী সরকারের কাছে তার আদায়কত কয়েক কোটি মার্কিন ডলার খাজনা হস্তান্তর করেছে । ইসরাইলের কার্যক্রমে আব্বাসের সমর্থনের হার বেড়েছে এবং হামাসের ওপর চাপ পড়েছে । কিন্তু গত সপ্তাহে হামাস সফলতার সঙ্গে প্রায় ৪ মাস আটক রাখা বিবিসি'র সংবাদদাতা এ্যালান জনস্টনকে উদ্ধার করেছে । বিশ্বের জনগণের জন্য গাজার নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল অবস্থা পুনরুদ্ধারে তার সামর্থ্য এতে প্রতিফলিত হয়েছে । হামাস গাজা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার পর থেকে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক ঘটনা থেকে দেখা যায় যে, ফিলিস্তিনের দু'টি বিরোধী দল উভয়েই পরস্পরের প্রতি অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে ।
নিরাপত্তা বিষয়ে হামাসের সাফল্য আব্বাসকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে । গত মাসের মধ্যদিকে হামাস সম্পূর্ণভাবে গাজা নিয়ন্ত্রণ করার পর ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়ে গাজার নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করছে এবং কম সময়ের মধ্যে গাজার হিংসাত্মক ঘটনা বন্ধ করেছে । জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজ ও বিনোদন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের সড়ক জ্যাম হামাসের স্বেচ্ছাকর্মীদের সাহায্যে সচল হয়েছে । গত সপ্তাহে হামাস সফলভাবে এ্যালান জনস্টনকে উদ্ধার করেছে এবং তাঁকে বৃটেন সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে । ফলে বিশ্বের সংবাদমাধ্যম নিরাপত্তা বিষয়ে হামাসের গভীর প্রশংসা করেছে । ফলে নিরীহ ফাতাহ কর্মকর্তারা জানিয়েছে যে, হামাস এবং এ্যালান জনস্টনকে আটক রাখা জঙ্গিদের অংশীদার হিসেবে একটি নাটক সৃষ্টি করে এ্যালান জনস্টনকে উদ্ধার করার কথা বলেছে ।
নিরাপত্তা বিষয়ে হামাসও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন । হামাসের গাজা নিয়ন্ত্রণ করার পর ইসরাইল কোনো প্রকারসন্দেহ হলেই গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে । তারা গত বৃহস্পতিবার ১১ জন গাজা নাগরিককে হত্যা করেছে । এ ছাড়া জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে হামাসের সদস্যদের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত নয় । দেড় বছর আগে নির্বাচনে হামাস জর্দান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে সাফল্য বিজয়ী হয় । কিন্তু বর্তমানে শুধু গাজায় তাদের অবস্থান শক্ত। জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে হামাসের সদস্য এবং সমর্থক ইসরাইল ও ফাতাহ'র সম্মিলিত হামলার মধ্যে পড়ে গেছে । ব্যাপক সদস্যকে ইসরাইল এবং ফাতাহ গ্রেফতার করেছে ।
কূটনীতি ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে হামাস এখন বলতে গেলে অচলাবস্থায় পড়েছে । যদিও এ্যালান জনস্টনকে উদ্ধার করার কারণে বৃটেন সরকার হামাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ,কিন্তু তার বিরুদ্ধে বৃটেন ও অন্যান্য পশ্চাত্য দেশগুলোর শাস্তির কোনো পরিবর্তিত হয় নি । হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ককারী মিশরও গাজায় তাদের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের আব্বাসের নিয়ন্ত্রিত জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে সরিয়ে নিয়েছে । বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আব্বাসকে সমর্থন করেছে । ইসরাইলের খাজনা হস্তান্তর করা এবং ফাতাহ'র সদস্যদের মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি আব্বাস অর্থ এবং মানুষ উভয়েই গ্রহণ করেছে । আন্তর্জাতিক সাহায্যে বেঁচে থাকা গাজার নাগরিকরা পশ্চিম তীরের ব্যাংক গিয়ে বেতন নেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় , কিন্তু তারা কিছুই পায় নি এবং ইসরাইলী প্রশাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সাহায্য অর্জন করবে কিনা তাও সঠিকভাবে জানা যায় নি ।
হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বার্হুম আমাদের সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্ দেয়ার সময় বলেছেন, গাজার নাগরিকদের নিজেদের মাটি রয়েছে । তারা খাবার চাষ করতে এবং অর্থনীতি উন্নত করতে সক্ষম । তাদের পাশ্চাত্য দেশগুলোর সাহায্য লাগবে না । আসলে এ কথা বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা আপাত দৃষ্টিতে নেই । ৩০০ বর্গকিলোমিটারেও একটু বেশি জমিতে ১৫ লাখ লোককে বাঁচিয়ে রাকা সম্ভব নয় । এ ছাড়াও ইসরাইল গাজার সকল রাস্তা বন্ধ করে দিলে ও বাইরের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ না থাকলে অর্থনীতির উন্নয়নের কোনো সম্ভাবনা থাকে না । এ অবস্থায় শুধু আল কায়েদা সংস্থা হামাসকে তাদের সমর্থন ব্যক্তকরেছে । কিন্তু সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে হামাস তার সমর্থনও গ্রহণ করবে না ।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হামাস এবং আব্বাসের মধ্যে পারস্পরিক ভিত্তিতে সমঝোতা থাকা উচিত । কেউ এককভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না । এখন দু'পক্ষ পৃথক পৃথকভাবে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে । এর ফলে দু'পক্ষের পরিস্থিতি আরো অচলাবস্থায় পড়ে যাবে । এ অবস্থা দু'পক্ষের অসঙ্গতিকেও গভীর করেছে এবং তা আরো বেশি সংকট সৃষ্টি করবে ।
(ছাও ইয়ান হুয়া)
|